বরকতময়
নাম
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
রহস্য ও গুরুত্ব
মাওলানা
মুহাম্মদ মুশতাক আহমদ
অনাদি
ও অনন্ত সত্ত্বামহান আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন আত্মপ্রকাশ ও
আত্মপরিচয়দানের নিমিত্তে সর্বপ্রথম তাঁর জোর্তিময় অস্তিত্বের
আলোকরশ্মি হতে তাঁর কুদরতি
এক কবজা পরিমান আলোকরশ্মিকে
কুনী হাবীবী মুহাম্মাদান বলে
প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করে তারঁ
¯্রষ্টা গুনের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। অতঃপর
তাঁরই নূর হতে সমগ্র
সৃষ্টি জগত সৃজন করেন। প্রিয়
নবীজি সৃষ্টি হয়ে সর্বপ্রথম
সিজদায় পড়ে মহান ¯্রষ্টার
শুকরিয়া আদায় করে বলেনÑ
আলহামদুলিল্লাহ। আর
এটাই ছিল প্রথম প্রশংসাবাক্য;
যা প্রথম সৃষ্টি হুজুর
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নুরানী জবান হতে অনুসৃত। এখানে
আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরস্পর কথোপকথনের
গভীরতা ও সুক্ষèতা
এভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, সর্বপ্রথম
আল্লাহপাক তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্বোধন করেছিলেন
“মুহাম¥দ” (অতি প্রশংসিত)
শব্দ বলে। কিন্তু
নবীজি এর জবাব দিলেন
আলÑহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর
জন্য) বাক্য বলে।
আলÑহামদু শব্দটি মুহাম্মদ
শব্দের মূলধাতু। ব্যাকরণের
দৃষ্টিতে প্রচলিত ব্যবহৃত শব্দের চেয়ে মূলধাতুর
ব্যাপকতা অনেক বেশী।
তাই নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও একধাপ এগিয়ে
প্রশংসা বাক্য হিসেবে নির্বাচন
করে নিলেন সরাসরি শব্দের
মূলধাতুকে; যার উপর আর
কোন ব্যাপকতার অবকাশ থাকতে পারেনা। এ
জন্যই প্রিয় নবীজির অপর
নাম হলো আহমদ (অধিক
প্রশংসাকারী) আল্লামা উশতানী উবাই মালিকী
বর্ণনা করেনÑ মহান আল্লাহ
পাকের এক হাজার নাম
রয়েছে এবং অনুরূপ পরিমান
নাম প্রিয় নবীজির জন্যও
রয়েছে। তন্মধ্যে
মুহাম্মদ ও আহমদ এ
দুটি নাম সবচেয়ে বেশী
প্রসিদ্ধ। ধর্মপ্রাণ
মুসলমান পুরুষেরা তাদের নামের শুরুতে
বা শেষে বরকত লাভের
উদ্দ্যেশে এ দুটি পবিত্র
নাম ব্যবহার করে থাকে।
প্রিয় নবীজির নামের বর্ণনা
দিতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস
ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁর সহীহ
মুসলিম গ্রন্থে প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত জুবাইর
ইবনে মুতয়িম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে হাদীস
বর্ণনা করেন-
أنّ رسول الله
صلى الله عليه وسلم
ـ قال: لي
أسماء أنا محمد وأنا
أحمد، وأنا الماحي الذي
يمحو الله بي الكفر،
وأنا الحاشر الذي يُحشَر
الناسُ على قدَمَيَّ، وأنا
العاقِب الذي ليس بعده
احد وقد سماه الله
رَؤوفاً رحيماً ) رواه مسلم )
অর্থাৎ-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এরশাদ করেছেন, ‘আমার অনেক নাম
রয়েছে, (যেমন) আমি মুহাম্মদ
(অতি প্রশংসিত), আমি আহমদ (অধিক
প্রশংসাকারী), আর আমি মাহি
(ধ্বংশকারী, রহিতকারী) এ কারণে যে,
আমার মাধ্যমে আল্লাহ পাক কুফরকে
ধ্বংস করে দিবেন, আর
আমি হাশির (একত্রিতকারী) এ
কারণে যে, সমগ্র মানুষের
হাশর আমার পদতলে সংঘটিত
হবে এবং আমি আকিব
(সর্বশেষ আগমনকারী) এ কারণে যে,
আমার পরে আর কোন
নবী আসবেন না এবং
আল্লাহ পাক মহানবীর নাম
রউফ (দয়ার্দ্র) ও রহিম (দয়ালু)
রেখেছেন’। মহান
রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নাম মুবারক মুহাম্মদ
ও আহমদ উল্লেখ করেন। আল্লাহপাক
“মুহাম্মদ” শব্দ উল্লেখ পূর্বক
তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে
সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রশংসার
পাত্র বানিয়েছেন। অনন্তকাল
ধরে সে প্রশংসাগীত সৃষ্টির
মুখে চলমান থাকবে।
ইমাম আবু নাঈম বর্ণনা
করেন- মাখলুক সৃষ্টির দুই
হাজার বছর পূর্বে নবীজির
নাম রাখা হয় মুহাম্মদ। হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) হতে বর্ণিত, প্রিয়
নবীজী এই দুনিয়াতে তাশরীফ
আনার পর সপ্তম দিনে
তাঁর আকিকা করা হলো
এবং রীতি অনুযায়ী তাঁর
নাম রাখা হলো- ‘মুহাম্মদ’। তখন
তাঁর দাদাজান খাজা আব্দুল মুত্তালিবকে
প্রশ্ন করা হলো- এ
নূরানী শিশুর নাম ‘মুহাম্মদ’
কেন রাখলেন? তাঁর পিতামহের কোন
একজনের নাম দিয়ে রাখলেন
না কেন? উত্তরে বল্লেন
আমার ইচ্ছা যে, উর্ধ্বজগতে
আল্লাহ তা’আলা এই
নূরানী শিশুর প্রশংসা অব্যাহত
রাখবেন এবং এ পৃথিবীতে
মানুষ তথা সৃষ্টিজগত তাঁর
প্রশংসায় মেতে উঠবে।
সর্বোপরি উর্ধ্বজগত হতে আরম্ভ করে
নি¤œজগত পর্যন্ত বিশাল
জগত তাঁর অকৃত্রিম প্রশংসায়
মুখরিত ও পুলকিত (সিরাতে
হালভীয়া, ১ম খন্ড)
এ নামে পাকের কতইনা
বরকত, কতইনা মহত্ব ও
মর্যাদা। ভাবতেই
মন আনন্দে ভরে যায়। সৃষ্টির
রন্দ্রে রন্দ্রে, ললাটে ললাটে এ
নামে পাক কুদরতি নূরী
অক্ষরে সমুজ্জল। আরশ
আ’জম হতে শুরু
করে লৌহ মাহফুজ, কলম,
কুরছি, সিদরাতুল মুন্তাহা, সপ্ত আসমান, বেহেশত
ও বেহেশতের প্রত্যেক বস্তু, হুর ও
গিলমান, পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে এ নামে
পাক সমহিমায় সমুজ্জল। যার
মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টিজগত স্ব
স্ব স্থানে অবস্থানরত।
ইমাম হাকেম, বায়হাকী, তাবরানী,
আবুনাঈম, ও ইবনে আসাকের
হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘হযরত আদম (আলাইহিস সালাম)
এর পদষ্কলন হয়ে গেলে তিনি
আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন-
পরওয়ার দেগার! আপনি হযরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর উছিলায় আমার মাগফেরাত
করে দেন। এতে
আল্লাহপাক ইরশাদ করলেন- হে
আদম! তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিনলে
কিরূপে? আদম (আলাইহিস সালাম)
বললেন, যখন আপনি আমাকে
আপনার পবিত্র হস্তে সৃষ্টি
করে আমার মধ্যে রুহ
ফুঁকে দিলেন, তখন আমি
মাথা তুলে আরশের গায়ে
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর
রাসূলুল্লাহ” লিখিত দেখলাম।
এ থেকে অনুধাবন করতে
পারি যে, ইনিই আপনার
নিকট সর্বাধিক প্রিয়। আল্লাহ
তা’আলা বললেন, হে
আদম তুমি সত্য বলেছ। মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
না হলে আমি তোমাকেও
সৃষ্টি করতাম না’।
ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইবনে আসাকেরের
বরাত দিয়ে কা’বুল
আহবার হতে বর্ণনা করেন-‘হযরত আদম (আলাইহিস
সালাম) আপন পুত্র শীছ
(আলাইহিস সালাম) কে সম্বোধন
করে বললেন- প্রিয় বৎস!
তুমি আমার পরে আমার
খলীফা হবে। তুমি
খোদাভীতি অবলম্বন কর। তুমি
যখনই আল্লাহর যিকির করবে, তাঁর
সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নাম অবশ্যই উচ্চারণ
করবে। কেননা
আমি তাঁর নাম আরশের
গায়ে তখন লিখিত দেখেছি
যখন আমি রূহ ও
মৃত্তিকার মধ্যবর্তী অবস্থায় ছিলাম। এরপর
আমি সমগ্র আকাশ মন্ডল
পরিভ্রমণ করেছি, সেখানে এমন
কোন জায়গা দেখিনি যেখানে
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নাম লিখিত নেই। আমার
রব আমাকে জান্নাতে বাস
করতে দিলেন, আমি জান্নাতে
কোন প্রাসাদ ও কক্ষ এমন
দেখিনি, যাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
নাম লিখিত নেই।
আমি তাঁর নাম আরো
লিখিত দেখেছি, বেহেশতী হুরদের কন্ঠনালীতে, বেহেশতী
বাঁশের কেল্লায়, গাছের পত্র-পল্লবে,
ছিদরাতুল মুন্তাহার পাতায় পাতায়, ফেরেশতাকুলের
চোখের দু’ভ্রুর মধ্যখানে। সুতরাং
হে আমার সন্তান শীছ!
তুমি অধিকহারে তাঁর জিকির করো,
কেননা ফেরেশতারা প্রতিটি মুহুর্তে তাঁর জিকিরে রত। [সূত্র
ঃ খাছায়েছে কুবরা কৃত- ইমাম
সুয়ূতী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)]
ইমাম আবু নাঈম স্বীয়
গ্রন্থ আল-হিলইয়ায় হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে রেওয়ায়েত করেন
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন- ‘জান্নাতের কোন পাতা এমন
নেই যাতে “লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”
লিখিত নেই’। ইমাম
হাকেম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে
আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা
করেন যে, ‘আল্লাহ তা’আলা হযরত ঈসা
(আলাইহিস সালাম)এর প্রতি
ওহী পাঠালেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
প্রতি ঈমান আন এবং
তোমার উম্মতের যে ব্যক্তিই তাঁর
সময়কাল পাবে তাকে তাঁর
প্রতি ঈমান আনতে আদেশ
কর। কেননা
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যদি না হতেন তাহলে
আমি আদম, বেহেশত-দোযখ
কিছুই সৃষ্টি করতাম না। আমি
আরশকে পানির পৃষ্ঠে সৃষ্টি
করলাম, তা হেলতে দুলতে
লাগলো। যে
মাত্র আমার নবীর নাম
লিখে দেয়া হল তখন
আরশ স্থির হয়ে গেল। (মাদারেজুন্নবুয়াত,
খাছায়েছে কুবরা)
ইবনে আসাকের আবুয্ যুবায়েরের
মধ্যস্থতায় হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণনা করেন
যে, ‘হযরত আদম আলাইহিস
সালাম এর উভয় কাঁধের
মাঝখানে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ খাতামুন্নাবীয়্যীন লিখিত ছিল’।
(খাছায়েছে কুবরা)॥
আল্লামা
ইউসুফ ইবনে ইসমাঈল নিবহানী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় গ্রন্থ
‘হুজ্জাতল্লাহি আলাল আলামীনে’ একটি
বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন যে,
‘একটি উপদ্বীপে এমন একটি বৃক্ষ
পাওয়া গেছে, যার পাতা
সমূহে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” লিখা ছিল’।
আল্লামা
ইয়াফেয়ী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আবু ইয়াকুব
সাইয়েয়াদ হতে বর্ণনা করেন-
‘আমি ‘উবলা’ নামক নদীতে
মাছ শিকার করছিলাম, এমন
সময়ে একটি মাছ পেলাম
যার পৃষ্ঠে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর নকশা লিপিবদ্ধ
ছিল’। (রাউযাতুর
রাইয়াহীন)
এভাবে
মাছের পিঠের উপর কালেমা
নকশার প্রচুর ঘটনা রয়েছে
যা ‘হায়াতুল হাইওয়ানে’ আল্লামা কামাল উদ্দীন দমিয়রী
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ‘মাদারেজুন্নবুয়াতে’ আল্লামা শেখ মুহাক্কেক দেহলভী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিস্তারিত বর্ণনা
করেছেন।
মোদ্দাকথা
সৃষ্টিকূলের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি স্থানে এ নামে
পাকের নকশা রয়েছে তবে
তা মাঝে মধ্যে লোক
চক্ষুর সামনে উদ্ভাসিত হয়। বস্তুতঃ
মহান রাব্বুল আলামীন এর নাম
যেখানে রয়েছে পাশেই তাঁর
হাবীব সরকারে দো’আলম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নাম মুবারকের সহাবস্থান। সৃষ্টির
প্রতিটি স্তরে প্রতিটি ক্ষেত্রে
তথা ফেরেশতা, আকাশ মন্ডল, ভূমন্ডল,
আরশ-কুরসি, লওহ-কলম,
প্রস্তর বালুকারাশি, গাছপালা, তৃণলতা, ফলমূল ইত্যাদিতে এ
নাম মুবারক রয়েছে এতে
কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
তবে অধিকাংশ সৃষ্টিকূল এ নিয়ামত দেখা
হতে বঞ্চিত। কারণ,
ছাহেবে কাশফ ব্যক্তিবর্গ স্বীয়
আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবলে এ সমস্ত গূঢ়
রহস্য উদঘাটন করতে পারেন। ছাহেবে
কাশফ ব্যতিত অন্য কেউ
এসব বিষয় জানতে পারেনা। ‘মুহাম্মদ’
নামের অনেক বরকত ও
ফযিলত রয়েছে যা বিভিন্ন
হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। হযরত
আব্দুল হক্ব মুহাদ্দেসে দেহলভী
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন- ‘হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
নামে পাকের অন্যতম গুণাবলীর
মধ্যে রয়েছে- ‘এ নামে যার
নাম রাখা হয়েছে সে
দুনিয়ার মধ্যে অনেক বরকতময়,
প্রতিপত্তিশালী মর্যাদাবান হবে এবং আখিরাতের
মধ্যে মুক্তি পাবে’।
হাফেয আবু নুয়াইম ইস্পাহানী,
বুরহানুদ্দীন হালভী, ইউসুফ নিবহানী,
হযরত নবীদ বিন শুরাইক
হতে বর্ণনা করেন- রাসূলে
আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন- ‘আল্লাহ তায়ালা তাঁর
ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ
করে বলেন- আপনার প্রসিদ্ধ
নামে পাক আহমদ বা
মুহাম্মদ নামের কোন ব্যক্তিকে
আমি আযাব দিব না’। (হিলিয়াতুল
আউলিয়া, মাদারেজুন্নবুয়াত, জাওয়াহেরুল বিহার, সীরাতে হালভীয়া)
এটা এমন এক পবিত্র
ও বরকতময় নাম যার
প্রতি সম্মান প্রদর্শন একজন
বড় পাপীর জন্যও উন্নতির
কারণ সাব্যস্ত হয়। যেমন,
বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে
রূহুল বয়ান শরীফ’ ও
‘খাছায়েছুল কুবরাতে’ রয়েছে- ‘বনী ইসরাঈলের জনৈক
ব্যক্তি ছিল, যে নিজ
জীবনের একশত বছর পাপ
কাজের মধ্যে লিপ্ত ছিল। সে
যখন মারা গেল, তখন
লোকেরা তাকে ঘৃণাভরে ময়লা
আবর্জনায় নিক্ষেপ করে দিল।
তৎক্ষনাত মূসা আলাইহিস সালাম
এর প্রতি ওহী আসলো
যে, তাকে সেখান থেকে
উঠিয়ে নিয়ে গোসল দিয়ে
কাফন পরিয়ে নামাযে জানাযা
পড়। হযরত
মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর দরবারে
আরয পেশ করলেন যে,
হে আল্লাহ তাকে আমি
এগুলো কিভাবে করি।
অথচ মানুষ তাকে ঘৃণা
করে। আল্লাহ
তা’আলা বললেন- আমি
তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কেননা
সে ‘তাওরাতে’ ‘মুহাম্মদ’ নাম দেখে আঙ্গুলের
নখে চুমু খেয়ে চোখের
উপর মাসেহ করে আমার
মাহবুবের প্রতি মুহাব্বত প্রকাশ
করেছে। তাই
আমি তাকে ক্ষমা করে
দিয়েছি এবং জান্নাতে প্রবেশ
করিয়ে সত্তরটি হুরের সাথে বিয়ে
করাবো।
উপরিউক্ত
আলোচনার প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল যে, পবিত্র
বরকতময় নাম ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এর
অসংখ্য অপরিসীম রহস্য, মহত্ব ও
ফযিলত রয়েছে। সুতরাং
এ’নামে পাকের প্রতি
সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের উপর
ঈমানী দায়িত্ব। এ’
নাম শুনা মাত্র তাঁর
প্রতি দরূদ শরীফ পড়া
ওয়াজিব। এ’
নাম শুনে যে ব্যক্তি
মুহাব্বতের নিদর্শন স্বরূপ বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন
দিয়ে তা চোখে মাসেহ
করবে, তার জন্য রোজ
হাশরে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ
করবেন। এটা
হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন
ইরশাদ হচ্ছে-
عن أبي بكر الصديق
أنه لما سمع قول
المؤذن "أشهد أن محمدا
رسول الله" قال هذا وقبَّل
باطن الانملتين السبابتين ومسح عينيه فقال
صلى الله عليه وسلم:
من فعل مثل ما
فعل خليلي فقد حلت
عليه شفاعتي-
অর্থ:
হযরত আবু বকর সিদ্দিক
(র.) হতে বর্ণিত, তিনি
যখন মুয়াজ্জিনের উক্তি "أشهد أن محمدا
رسول الله" শুনলেন, তখন তিনিও অনুরূপ
বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু
খেয়ে তা দু’চোখে
মসেহ করলেন। তা
দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ যে ব্যক্তি আমার
বন্ধুর ন্যায় আমল করবে,
তার জন্য আমার সুপারিশ
বৈধ হয়ে গেল।
(ইমাম সাখাভী: আল-মাকাসিদুল হাসানাহ-
১/৩৮৩, হাদীস নং-১০২১) মহান রাব্বুল
আলামীন আমাদেরকে এ’নামে পাকের
গুরত্ব, রহস্য ও মহত্ব
বুঝার এবং সে অনুযায়ী
আমল করার তাওফীক দান
করুন। আমিন,
বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন