আওলাদে
রাসূল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব
শাহ (রহ.) এর মূল্যবান
নছীহত নামা এবং প্রসঙ্গিক
কিছু অবদানের কথা
মাওলানা
মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন আল-আযহারী
“হামেদান
ওয়া মুসাল্লিয়ান”
তারিখ:
১৮ রমাদান শরীফ
১৪০৯ হিজরী
প্রতি,
জনাব আলহাজ্ব মুহাম্মদ আশরাফ আলী সাহেব
(আল্লাহ তাকে শান্তিতে রাখুক)
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া
রাহমাতুল্লাহ!
আশা করি উভয় পক্ষ
ভাল ও নিরাপদে আছেন। পর
সমাচার এই যে, করাচিবাসী
মুহাম্মদ সিদ্দিক সাহেবের নিকট তিন হাজার
রুপী আমানত রেখেছেন তা
তিনি আমার হস্তগত করেছেন। কিন্তু
কোথায়/কোন খাতে ব্যয়
করব তা স্পষ্ট করেননি। এ
ব্যাপারে আমাকে জানালে উপকৃত
হব। ধন্যবাদ!
হাজী যাকারিয়া (সেক্রেটারী) সাহেব মাদরাসা সম্পর্কিত
দলীলের কাগজ-পত্র সমূহ
পাঠায়েছেন কি না অবহিত
করলে খুশী হব।
চেয়ারম্যান আলহাজ্ব চিনু মিয়ার শারীরীক
অবস্থার উন্নতী হয়েছে কি
না জানাবেন। জামেয়া
কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া মাদরাসার লেখা-পড়ার অবস্থাদি
উল্লেখ পূর্বক পরামর্শ দিবেন। মাদরাসার
জন্য দলে দলে চাঁদা
কালেকশন করার মধ্যে অসীম
বরকত নিহীত রয়েছে।
চেয়ারম্যান সাহেব অসুস্থ, হাজী
সিরাজুল ইসলাম সাহেবও মৃত্যুবরণ
করেছেন। তাই
আপনাদের যিম্মাদারী বা দায়িত্ব বেড়ে
গেছে। আল্লাহ
তা’য়ালার দরবারে দোয়া
করি, ভাইদের মধ্যে আন্তরিক
মহব্বত ও ঐক্য নসীব
করেন; যাতে আপনাদের উপর
আল্লাহ তা’য়ালা ওতাঁর
হাবীবের পক্ষ হতে অর্পিত
দায়িত্ব তা যথাযথ নিপুন
ভাবে পালন করতে পারেন।
پرنسپل
ابو طاہر صاحب کو
سلام عليکم کے بعد
واضح ہو کہ بچوں
کے تعليم ميں بہت
کوشيش رہے، "جاء الحق" کو
سب کلاسوں ميں پابندی
سے پڑھائيں، تاکہ بچوں کے
عقائد صحيح رھيں-
অধ্যক্ষ
আবু তাহের সাহেবকে সালাম
পেশ করে বলবেন যেন,
শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার ব্যাপারে
অধিক যতœবান হন। বিশেষ
করে “জা’আল হক”
কিতাবটি প্রত্যেক ক্লাসে সিলেবাস ভূক্ত
করে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হয়;
যাতে শিক্ষার্থীদের আক্বীদা বিশুদ্ধ হয়।
আল্লাহ
তা’য়ালার অসীম দয়া
ও অনুগ্রহে পূর্বের তুলনায় বর্তমান স্বাস্থ্য
ও শারীরীক অবস্থা ভালোর দিকে। এব্যাপারে
আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। পীর
ভাই-বোন এবং ছেলেদেরকে
আমার দোয়া ও সালাম
জানাবেন। সাথে
সাথে আল্লামা তাহের শাহ, আল্লামা
সাবের শাহ ও আল্লাম
কাশেম শাহ সাহেবের সালামও
কবুল করবেন।
তৈয়্যব
শাহ
(স্বাক্ষরিত)
ভূমিকাঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর মনোনীত
ধর্ম ইসলামের বাণীকে মানবজাতীর নিকট
পৌঁছানোর জন্য যুগে যুগে
অসংখ্য অগণিত নবী-রাসূল
আলাইহিমুস সালামকে এই ধরাধামে পাঠিয়েছেন। তাঁদের
তিরোধানের পর বিশেষ করে
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর ইন্তেকালের পর তাবলীগে দীনের
এ গুরু দায়িত্ব পালনের
উত্তরসূরী হন উলামায়ে কেরাম। এখানে
ওলামা বলতে সাহাবায়ে কেরাম,
তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আয়িম্মায়ে
দীন, মুজতাহেদীন, ওলী-আউলিয়া, গাউস-কুতুব, আবদাল, আওতাদ,
নুজাবা ইত্যাদি নামে যাঁদের নিকট
পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ, ইজমা-কিয়াসের জ্ঞান ভান্ডারসহ শরীয়ত,
তরীকত, হাকীকত ও মা’রিফাতের জ্ঞানে সমৃদ্ধ তাঁরাই
নবী-রাসূলের উত্তরসূরী। সেই
সব যোগ্য উত্তরসূরীর মধ্যে
প্রিয় নবীর ৪০তম বংশধর,
গাউছে জমান, শাইখুল ইসলাম
শাহ সূফী আল্লামা সৈয়্যদ
মুহাম¥দ তৈয়্যব শাহ
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা
প্রচার-প্রসারে আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম¥দ
তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
এর অবদান আলোকপাত করার
পূর্বে আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাআতের পরিচয় জানা আবশ্যক। সুন্নাহর
আলোকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল
জামাআতের পরিচয় তুলে ধরা
হল-
সুন্নী
বা আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাআতের পরিচয়ঃ
আল্লাহ
তা’য়ালা ও রাসূলে
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
প্রদত্ত এবং সাহাবায়ে কিরাম
রাদিআল্লাহু তা’য়ালা আনহুম
এর অনুসৃত পথ, মত
ও আদর্র্শের অনুসারী দলের নাম হচ্ছেÑ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাআত’। এ
দল একমাত্র জান্নাতী দল। এ
দলটি কিয়ামত পর্যন্ত হকের
উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এ
প্রসঙ্গে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন- “আমার উম্মতের মধ্যে
একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত
হকের উপর বিজয়ী হয়ে
থাকবে। তাদের
বিরোধী কোনো দল (বাতিলপন্থী
দল) তাদের কোনো ক্ষতি
সাধন করতে পারবে না”। (মিশকাত
শরীফ, পৃঃ-৪৬৫)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আম্মার রাদিয়াল্লাহু
তা’য়ালা আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন হুযুরে
আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন- নিশ্চয়ই বনী ইসরাইল বাহাত্তর
দলে বিভক্ত হয়েছিল।
আর আমার উম্মত তিয়াত্তর
দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তন্মধ্যে
একটি দল ব্যতিত বাকি
বাহাত্তর দল জাহান্নামি হবে
(অর্থাৎ একটি দলই জান্নাতি
হবে)। এতদ্
শ্রবণে সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন
ঐ একটি দল তারা
কারা? রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে
বললেন, ‘যার উপর আমি
এবং আমার সাহাবিগণ রয়েছে’। (তিরমিযি
শরীফ)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের অদি¦তীয় ব্যাখ্যা গ্রন্থ
মিরকাতুল মাফাতিহ কিতাবে মোল্লা আলি
কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন
“এতে কোনো ধরনের সংশয়
নেই যে উপরিউক্ত হাদিসে
পাকে উল্লেখিত জান্নাতি দলটি হলÑ ‘আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামাআত’।”
(মিরকাতুল মাফাতিহ, ১ম খন্ড, পৃঃ
২০৫)
কালাম
শাস্ত্রের অন্যতম গ্রন্থ ‘শরহে
আকায়েদে নসাফীয়া’ নামক কিতাবে উল্লেখ
আছে “যা সুন্নত দ্বারা
প্রমাণিত এবং যার উপর
জামাআতে সাহাবাগণ প্রতিষ্ঠিত, তারই নাম ‘আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামাআত’।”
সুতরাং
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসারী
এবং জামাআতে মুসলিমিনের সঙ্গে থাকা অর্থ্যাৎ
সাহাবায়ে কিরামের অনুসৃত আকিদা পোষণকারী
মুসলমানদের অনুসরনে চলা দলই সুন্নী
জামাআত বা জান্নাতি দল। এর
বিপরীতে বদ আকিদা পোষণকারী
বিদআতি বাহাত্তর দল জাহান্নামি।
এই জাহান্নামি বাহাত্তর দলের কলা-কৌশল,
মুনাফিকি চরিত্রের খপ্পর থেকে রক্ষা
করে ঈমানদারের অমূল্য সম্পদ ‘ঈমান-আক্বিদার’ হেফাজত পূর্বক জান্নাতি
দলের আক্বিদা সমূহ এবং প্রায়
মৃত সুন্নাত ও মুস্তাহাব আমল
সমূহ পুনরুজ্জ্বীবন পূর্বক তা সর্ব
সাধারনের নিকট প্রচার-প্রসারে
যিনি এই বাংলার জমিনে
অগ্রণী ভূমিকায় কান্ডারী ও দিকপাল সেজেছিলেন
তিনিই হলেনÑ বিংশ শতাব্দীর
মহা সংস্কারক ও মুবাল্লিগে দ্বীন
আল্লামা সৈয়্যদ
মুহাম¥দ তৈয়্যব শাহ
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
আল্লামা
সৈয়্যদ মুহাম¥দ তৈয়্যব
শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামাআতের আক্বিদা প্রচার-প্রসারে বহুমুখী
পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা
ইসলামের ইতিহাসে বিরল। আমরা
জানি প্রিয় নবীর ঘোষণা
মোতাবেক জাহান্নামি বাহাত্তর দলের আবির্ভাব হয়েছে। তাদের
বদ আক্বিদা সমূহ এবং তাদের
কোনো না কোনো আক্বিদায়
বিশ্বাসী ভিন্ন ভিন্ন নামে
নব্য ফিৎনাবাজ দলের আক্বিদা ও
আমল সমূহের বিরুদ্ধে আল্লামা
সৈয়্যদ মুহাম¥দ তৈয়্যব
শাহ রাহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আলাইহি
সারা জীবন সংগ্রাম করে
গেছেন।
আল্লামা
সৈয়্যদ মুহাম¥দ তৈয়্যব
শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি জানতেন ঈমান-আক্বিদা বুঝতে হলে শরীয়তের
জ্ঞানের প্রয়োজন। আর
ইলম দ্বীন তথা শরীয়ত
ও তরীক্বতের জ্ঞান অর্জনে সুন্নী
আলেমের বিকল্প নেই।
আর সুন্নী আলেম তৈরীর
কারখানা হচ্ছে একমাত্র সুন্নী
দ্বীনী মাদ্রাসা বা প্রতিষ্ঠান।
তাই তিনি তাঁর আব্বা
হুযুর আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ
সিরিকোটি আল-কাদেরীর অনুকরণে
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি জোর
দিলেন। তাঁর
৭৭ বৎসর জীবনে প্রত্যক্ষ
ও পরোক্ষ সহযোগীতায়/নির্দেশনায়
দেশে-বিদেশে অর্ধ শতাধিক
দ্বীনী মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সেসব
মাদ্রাসা থেকে হাজার হাজার
ছাত্র বিশুদ্ধ আক্বিদা অর্জন পূর্বক সত্যিকার
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আলেমে
দ্বীন, মুবাল্লিগে দ্বীন তথা মুহাদ্দিস,
মুফাচ্ছির, ফকীহ, আদিব, মুফতী,
ইমাম/খতিব, ক্বারী, হাফেযে
কোরআন, ওয়ায়েজ, শিক্ষকতা পেশাসহ মসজিদ-মাদ্রাসায়
খাদেম হয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান,
ভারত, বার্মাসহ বিশ্বের প্রায় দেশে তারা
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাহর প্রচার-প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন
করে যাচ্ছেন যা আল্লামা তৈয়্যব
শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর প্রতিষ্ঠিত
মাদ্রাসা সমূহের অবিস্মরনীয় অবদান। হুযুর
কিবলা প্রায় সময় বলতেন
“কাম করো, দ্বীন কো
বাঁচাও, সাচ্চা আলেম তৈয়ার
করো” অর্থাৎ, কাজ কর, ইসলামকে
রক্ষা কর, বিশুদ্ধ আক্বিদার
আলেম তৈয়ার কর।
হুযুর
কিবলা ০৮/৯/১৯৮৫
ইং তারিখে একটি মূল্যবান
নসিহত নামায় আলেম-উলামার
প্রয়োজনীয়তার এবং তাঁদের গুরুত্বারোপ
করতে গিয়ে লিখেছেন “আলেম-উলামা সম্পর্কে রাসূলে
কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন, ওলামায়ে কেরাম নবীগণের উত্তরসূরী”। অতএব
তাদের সম্মান করুন এবং
তাদেরকে সর্বদা সন্তুষ্ট রাখুন। যাতে
তাঁরা বাতিল পন্থিদের মোকাবেলায়
হক্কানী রাব্বানী যোগ্য আলেম তৈরী
করতে পারেন। “দ্বীন-ধর্মের জ্ঞান অর্জনের
জন্য যখন তালেবে ইলম
বা শিক্ষার্থীরা নিজ ঘর হতে
বের হয় তখন নিস্পাপ
ফেরেশ্তারা তাদের (তালেবে ইলমের)
পায়ের নিচে নূরানী ডানা
বিছায়ে দেন”। অতএব
কমিটির ভাইদের উচিত ছাত্রদেরকে
অধিকতর সম্মান করা।
কারণ, এই তালেবে ইলম
বা শিক্ষার্থীরা কুফরীবাদ এবং বাতিল ফিরকার
বিরুদ্ধে মোকাবেলা করে সত্য ও
হক্বের পতাকা কে উড্ডীন
করবে। বাস্তবিক
পক্ষে তারা আমার বাগানের
ফুল স্বরূপ।”
২৪/১০/১৯৭৯ ইং
সনে এক নসিহত নামায়
আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম¥দ
তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
কেমন মুহাদ্দিস নিয়োগে সুন্নি আলেম
তৈরি করা হবে তার
দিক নির্দেশনা দিয়ে জামেয়া কাদেরিয়া
তৈয়্যেবিয়া মাদ্রাসার গভর্নিং বডিকে লিখেছেন, “আপনারা
হাদিস শরীফ পাঠদানের জন্যে
এমন কতিপয় সুন্নি মুহাদ্দিসের
তালাশ করুন, যাদের মুখে
হাদিসে পাকের তেলাওয়াত আর
অন্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামার ইশ্ক
ও মুহাব্বত থাকবে। যাতে
শিক্ষার্থীরা উস্তাদের রঙ্গে রঙ্গীন হতে
পারে। সাথে
সাথে এই প্রতিষ্ঠানটি নির্ভেজাল,
বিশুদ্ধ আক্বিদার দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
হিসেবে সব মহলে পরিচিতি
লাভ করতে পারে।
পক্ষান্তরে, যদি হাদিস শরীফ
পাঠদানে এমন কতেক নাম
স্বর্বস্ব মুহাদ্দিসকে নিয়োগ দেয়া হয়,
যাদের মুখে ‘ক্বালা ক্বালা
রাসূলুল্লাহ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উচ্চারিত হবে আর অন্তরে
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর বিদ্বেষ ও
বে-আদবী থাকবে।
ফলে এমন বে-আদব
মুহাদ্দিসের সহচর্যে শিক্ষার্থীরা বে-আদব এবং
গোস্তাখে রাসূলই হবে, যা
ধর্মহীনতার নামান্তর”।
২৩/০৪/১৯৮৩ ইং
সনে জরুরী বার্তায় হুযুর
কেবলা আল্লামা তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি
আলাইহি আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাআতের আক্বিদা প্রচার-প্রসারে অধিক
সংখ্যক আলেমে দ্বীন তৈরী
করার জন্য গুরুত্বারোপ করে
বলেছেন- “মাদ্রাসা কমিটি এবং পীর
ভাইদের মাদ্রাসার প্রতি অধিকতর দৃষ্টি
দেয়া উচিত। যাতে
অধিক হারে মাদ্রাসা হতে
আলেমে দ্বীন বের হয়। আর
তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের
সত্যের কালিমা প্রচার-প্রসারে
যথাযথ দায়িত্ব ও ভূমিকা রাখতে
পারে”।
১৯৮৭ সাল মোতাবেক ১৮
রমজান ১৪০৯ হিজরী এক
পত্র মারফত আল্লামা তৈয়্যব
শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামাআতের আক্বিদা প্রচার-প্রসারে এবং
সুন্নী আক্বিদা ছাত্রদের শিখানোর লক্ষ্যে ঢাকাস্থ জামেয়া কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহের সাহেবকে
নির্দেশ পূর্বক বলেছেন- “জা-আল-হক্ব কিতাবটি
প্রত্যেক ক্লাসে গুরুত্বের সাথে
পড়ানো হয়; যাতে ছাত্ররা
বিশুদ্ধ আক্বিদায় গড়ে উঠে”।
অপর এক চিঠিতে হুযুর
কিবলা আল্লামা মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আসল মাকসুদ সম্পর্কে
অবিহিত পূর্বক কমিটির ভাইদেরকে
লিখেছেন- “যদি মুহাম্মদপুরস্থ কাদেরিয়া
তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক
সমাজ বিশুদ্ধ আক্বিদার না হয় এবং
যথাযোগ্য শিক্ষক মন্ডলীর মাধ্যমে
নিষ্ঠাবান, একনিষ্ঠ আলেম তৈরী না
হয়, তবে এই জামেয়া
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মূল মাকসুদ বিফলে
যাবে। এজন্য
অধ্যক্ষ সাহেবের নিকট আমার অনুরোধ
থাকবে- আপনি এমন যোগ্য
আলেম তৈরী করুন, যারা
গোটা বাংলাদেশকে কন্ট্রোল তথা জ্ঞান বিতরণ
করতে পারবে”।
বাংলাদেশ
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড/ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত সিলেবাসের
ভিত্তিতে এদেশে আলিয়া মাদ্রাসা
সমূহ পাঠদান করা হয়। ফাযিল
পর্যায়ে যেখানে আল আক্বায়েদে
আন নাসাফিয়াহ এবং শারহে ফিক্বহী
আকবরের মত আকায়েদের উঁচুমানের
কিতাব পড়া সত্ত্বেও আল্লামা
মুফতী ইয়ার খান নঈমী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর প্রণীত
‘জা-আল-হক’¡ কিতাব
পড়াতে এবং সিলেবাসভূক্ত করতে
বিশেষভাবে নির্দেশ কেনইবা দিলেন, তা
আজ আমাদের বোধগম্য হচ্ছে। কারণ,
‘জা-আল-হক’¡ কিতাবে
যা আছে তার কোনোটি
সুন্নী আক্বিদার প্রতিফলন আর অন্যান্যগুলো সুন্নাত
আমল বা মুস্তাহাব আমল। যা
নব্য বাতিল ফিরকার যাতাকলে
এবং কালের আবর্তনে হারিয়ে
বা মুছে যাওয়ার উপক্রম
হয়েছে। অন্যদিকে
এ সব সুন্নী আক্বিদার
সুন্নত আমল সমুহের উপর
বিদআত, শিরক্, হারাম, নাজায়েজের
ফতোয়া দাতা কাঠ মোল্লাদের
বিরুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গা জওয়াব
দেওয়ার জন্য এক ঝাঁক
সুন্নি আলেম তৈরীর লক্ষ্যে
‘জা-আল-হক’¡ কিতাব
পড়তে এবং পড়াতে তিনি
নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব
সুন্নি আক্বিদা এবং সুন্নত/মুস্তাহাব
আমল যুগ যুগ ধরে
পালন হয়ে আসছে তার
আংশিক নি¤েœ প্রদত্ত
হল-
১। ইলমে
গায়েব, ২। হাযির-নাযির, ৩।
নবী-ওলীর সাহায্য কামনা,
৪। নূর
নবী, ৫। হায়াতুন
নবী, ৬। শাফাআতুন
নবী, ৭। মিলাদ
ও কিয়াম, ৮।
জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী
পালন, ৯। ফাতিহা
পাঠ, ১০। কুল
খানী, ১১। চেহলাম,
১২। জানাজা
নামায শেষে দোয়া, ১৩। আযানের
পূর্বে ও পরে সালাতু
সালাম পাঠ, ১৪।
ফরজ নামাযের পরে মুনাজাত করা,
১৫। মাজারে
ফুল অর্পণ, ১৬।
গিলাপ চড়ানো, ১৭।
কবরে আজান দেয়া, ১৮। কবর
যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা, ১৯। উচ্চস্বরে
যিকর করা, ২০।
ওলী-পীর-মুর্শিদ ও
হক্কানী আলেমে দ্বীনের হাত-পায়ে চুমু দেয়া,
২১। আজানে
নবীয়ে পাকের নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী
চুম্বন পূর্বক দু’চোখে
লাগানো, ২২। নবীগণ
নিষ্পাপ, ২৩। না’রায়ে রিসালাতের স্লোগান
দেয়া, ২৪। তারাবীহ্
নামাজ বিশ রাকাআত, ২৫। ওলী-বুজর্গদের ওরস বা মৃত্যূ
বার্ষিকী পালন করা, ২৬। স্ব-শরীরে মি’রাজ,
২৭। মুস্তফা
জানে রহমত পে লাখোঁ
সালাম পাঠ, ২৮।
ঘরে ঘরে খতমে গাউসিয়া
শরীফ পাঠ, ২৯।
গেয়ারভী শরীফ পাঠ, ৩০। মাদ্রাসার
এসেম্বলীতে “সবছে আওলা” পাঠ
ইত্যাদি উল্লেখিত আক্বায়েদের মাসায়েল সমূহ্ বিশ্বাস পূর্বক
এবং সুন্নত/মুস্তাহাব আমল
সমূহ বাংলাদেশে যারা যেখানে যেই
ভাবে পালন করুন না
কেন তারা কোনো না
কোনো ভাবে আল্লামা সৈয়্যদ
মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহ
আলাইহি এর অনূকরণে/নির্দেশে/মুরিদ হওয়ার সুবাদে
অথবা তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়ার করার
কারণে অথবা আল্লামা তৈয়্যব
শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর হাতে
গড়া শিক্ষক বা আলেম-উলামা এর সংস্পর্শে
আসার/ওয়াজ-নসিহত শ্রবণে
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সদস্য
হয়েছেন বলে আমার পূর্ণ
বিশ্বাস। সুতরাং,
সুন্নী মুসলিম জনতার উচিত
আল্লামা তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর অবদান
এবং এহসানকে স্বীকার করা ।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা
প্রচার-প্রসারে আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব
শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পদক্ষেপ
সমূহের মধ্যে ১৯৭৮ সালে
মাসিক মুখপত্র “তরজুমানে আহলে সুন্নত” এর
আত্মপ্রকাশ। ১৯৭৬
সালে তাঁর তত্ত্বাবধানে ‘মজলিসে
গাউসিয়া’ পাকিস্তান হতে উর্দূ ভাষায়
“আনওয়ারে মুস্তফা” নামক পত্রিকা প্রকাশিত
হয়ে আসছে। অন্যদিকে
১৯৬৫ সালে আঞ্জুমানে রহমানিয়া
আহমদিয়া সুন্নিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা, তরিকত পন্থী ভাইদের
ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করার প্রত্যয়ে
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা
সমূহ সাংগঠনিক ভাবে রূপদান ও
তার প্রচার-প্রসার বেগবান
করার লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা
করেন “গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ”।
১৯৭৪ সাল হতে ৯ই
রবিউল আউয়াল শলীফ ঢাকায়
এবং ১২ই রবিউল আউয়াল
শরীফ চট্টগ্রামে লাখো লাখো মানুষের
উপস্থিতিতে ‘জশনে জুলুছে ঈদে
মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম’
উদযাপনের নির্দেশের মাধ্যমে মদীনা বাসী বনী
নাজ্জারের ছেলে-মেয়েদের পালিত
সুন্নাতকে পুনরুজ্জ্বীবিতকারী আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব
শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি চির স্মরণীয়
হয়ে থাকবেন জুলুশ প্রেমিকদের
অন্তরের গহীনে।
পরিশেষে
আমরা বলতে পারি, আল্লামা
তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা
প্রচার-প্রসারে একজন সফল মুবাল্লিগ
বা প্রচারক। যার
স্বাক্ষী এই বাংলার সুন্নী
জনতা সহ বিশ্বের বহু
নবী ও ওলী প্রেমিক। একথাও
সত্য যে যথাসময়ে আল্লামা
তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহির
এদেশে আগমন না ঘটলে
এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক কর্মতৎপরতা
না হলে সুন্নিয়তের ময়দান
থাকত বাতেলদের দখলে। হুজুর
কিবলা রাহমতুল্লাহি আলাইহির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত
মসজিদ, মাদরাসা, খানেকাহ, দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সমূহ, আঞ্জুমান, গাউসিয়া কমিটি, দাওয়াতুল খাইর
এর কর্মসূচী, মাসিক তরজুমান, মজমুয়ায়ে
সালাওয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়া সাল্লাম, গাউছিয়া তরবিয়তী নেসাব সহ আঞ্জুমানের
যাবতীয় প্রকাশনা এদেশে সুন্নীয়তের ভীতকে
সুদৃঢ় করে চলেছে।
আপনাদের আন্তরিক সার্বিক সহযোগীতা হুজুর কিবলার এই
মিশনকে আরো বেগবান করবে
ইন-শা-আল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন