আযানের
পূর্বে ও পরে দরুদ
ও সালাম প্রসঙ্গ
মুহাম্মদ
জিহাদ উল্লাহ জিহাদী
আযানের
পূর্বে ও পরে রাসূলে
কারীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর প্রতি দরুদ
ও সালাম পাঠ করা
শুধুমাত্র জায়েজই নয় বরং
উত্তম। ইহা
শরীয়ত স্বীকৃত একটি গ্রহনযোগ্য ইবাদত। যা
অস্বীকার করার মোটে ও
কোন সুযোগ নেই।
প্রথমে আমরা আযানের পূর্বে
দরুদ ও সালাম পাঠ
করা সর্ম্পকে আলোকপাত করবো।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
তাঁর বান্দাদেরকে দরুদ ও সালাম
পাঠ করার নির্দেশ প্রদান
পূর্বক পবিত্র কুরআন মাজীদে
ইরশাদ করেন, ان
الله ملائكته يصلون على
النبى يا ايها الذين
امنوا صلوا عليه وسلموا
تسليما - অর্থাৎ আল্লাহ ও
তাঁর ফেরেস্তাগন রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি (সদা-সর্বদা) দরুদ ও সালাম
পাঠ করে থাকেন।
হে ঈমানদারগণ তোমরা ও সেই
নবীর প্রতি বেশি বেশি
শ্রদ্ধাসহকারে সালাত ও সালাম
পাঠকর। (সূরাহ
আহযাব, আয়াত নং- ৫৬)
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, দেখুন
অত্র আয়াতে কারীমায় দরুদ
ও সালাম পাঠ করাকে
কোন নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংযুক্ত
করা হয়নি বিধায় নিষিদ্ধ
সময় ব্যতীত অন্য যে
কোন মুহুর্তে নবীজীর প্রতি দরুদ
ও সালাম পাঠ করা
প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য বৈধ ও
কর্তব্য।আযানের
সময়টি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ
সময়। সুতরাং
উক্ত আয়াতে এই সময়টি
ও অর্ন্তুভুক্ত। এখন
আমরা দরুদ ও সালাম
পাঠ করার মুস্তাহাব স্থান
সমূহ বর্ননা করবো ইনশআল্লাহ। যার
মাধ্যমে প্রতিয়মান হবে যে, আযানের
পূর্বে দরুদ ও সালাম
পাঠ করা জায়েজ ও
মুস্তাহাব।
দলীল নং- ০১: জগত
বিখ্যাত ফাতাওয়ার কিতাব ফাতাওয়ায়ে শামীর
মধ্যে বর্নিত আছেومستحبة
فى كل اوقات الامكان
اى حيث لا مانع অর্থাৎ
নিষিদ্ধ স্থান ও সময়
ব্যতীত অন্য যে কোন
মুহুর্তে দরুদ ও সালাম
পাঠ করা মুস্থাহাব। এখন
প্রশ্ন হবে কোন কোন
স্থানে দরুদ ও সালাম
পাঠ করা নিষেধ? তার
জবাবে আল্লামা
ইবনে আবেদীন শামী (রাহঃ)
ঐ (শামী) কিতাবের একই
পৃষ্ঠায় একটু অগ্রসর হয়ে
দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বর্ননা করেছেন تكره
الصلاة عليه صلى الله
عليه و سلم فى
سبعة مواضع . অর্থাৎ সাত
স্থানে আল্লাহর হাবীরের উপর দরুদ ও
সালাম পাঠ করা নিষেধ। তাছাড়া
অন্য সবক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় পাঠ করা মুস্তাহাব। নিষিদ্ধ
স্থান সমূহ নিম্মরূপঃ-
(১) স্বামী-স্ত্রীর মিলন
কালে। (২)
প্রশ্রাব-পায়খানার সময়। (৩)
ব্যবসায়ী সামগ্রী প্রচারার্থে। (৪)
হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার
সময়। (৫)
আশ্চার্যজনক কোন ঘটনা শ্রবনকালে। (৬)
জবেহ করার সময়।
(৭) এবং হাঁছি দেওয়ার
সময়।
দেখুন
নিষিদ্ধ স্থান ও সময়ের
মধ্যে আযানের কথা যেহেতু
উল্লেখ নেই সেহেতু আযানের
পূর্বে দরুদ ও সালাম
পাঠ করাও মুস্তাহাব প্রতীয়মান
হলো।
দলীল নং- ০২: মক্কা
শরীফের ফাতাওয়ার কিতাব ইয়ানাতুত তালেবীন
যা লিখেছেন আল্লামা বিক্রী (রাহঃ) যিনি ছিলেন
মক্কা শরীফের একজন প্রসিদ্ধ
মুফতী। তিনি
তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন
قال الشيخ الكبير البكرى
انها تسن قبلهما اى
الصلوة على النبى صلى الله عليه
و سلم قبل
الاذان والاقامة . - অর্থাৎ তিনি বলেন
আযান এবং ইকামাত উভয়ের
পূর্বেই দরুদ ও সালাম
পাঠ করা মুস্তাহাব।
দলীল নং- ০৩: আল্লামা
ইমাম কাজী আয়াজ (রাহঃ)
রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরুদ
ও সালাম পাঠ করার
মুস্তাহাব স্থান সমূহ বর্ননা
করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেনومن مواطن الصلاة
عليه صلى
الله عليه و سلم عند
ذكره و سماع اسمه
او كتابته او عند
الاذان অর্থাৎ দরুদ ও
সালাম পাঠ করার মুস্তাহাব
ওয়াক্ত সমূহের মধ্যে অন্যতম
হচ্ছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলোচনা কালে,
তাঁর নাম মোবারক শ্রবনকালে
ও লিখার সময় এবং
আযানের পূর্বে। এখানে عند(ইন্দা)
শব্দের অর্থ হলো পূর্বে। যার
প্রমাণ নিম্মোক্ত হাদীস শরীফে পাওয়া
যায়। যেমনঃقال رسول الله
صلى الله عليه و
سلم لولا ان اشق
على امتى لامرتهم بالتاخر
العشاء و بالسواك عند
كل صلاة
- অর্থাৎ উম্মতের কান্ডারী রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার নবুয়াতী জবানে
ঘোষণা করেছেন যদি আমি
উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে
না করতাম তাহলে আমি
অবশ্যই তাদেরকে (উম্মত কে) নির্দেশ
প্রদান করতাম যে তারা
যেন ইশার নামাজকে বিলম্বে
আদায় করে এবং প্রত্যেক
নামাজের পূর্বে মিসওয়াক করে। (বুখারী
ও মুসলিম)
দলীল নং- ০৪: মিশরের আল আজহার
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত মাযহাব
চতুষ্টয়ের উপর লিখিত ফেকাহ
শাস্ত্রের কিতাব আল ফিকহু
আলাল মাজাহিবিল আরবায়া নামক কিতাবে
বিদ্যমান রয়েছে باب صلوة
على النبى
صلى الله عليه و
سلم قبل الاذان والتسابيح
قبله بالليل উক্ত শিরোনাম
দ্বারা ফকীহ নিজেই আযানের
পূর্বে দরুদ ও সালাম
পাঠ করাকে বৈধ বা
জায়েজ বলে ফাতাওয়া প্রদান
করেছেন।
দলীল নং- ০৫: তাফসীরে
রুহুল বয়ানের লিখক বিশ্ব
বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ঈসমাইল হাক্কী (রাহঃ)
সূরাহ আহযাবের ৫৬নং আয়াতের ব্যাখায়
দরুদ ও সালাম পাঠের
মুস্তাহাব স্থান সমূহ বর্ননা
করতে গিয়ে তিনি বলেন
عند الابتداء كل امر ذى
بال অর্থাৎ
প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ও ভাল কাজ
শুরু করার পূর্বে দরুদ
ও সালাম পাঠ করা
মুস্তাহাব।
সুতরাং
আযান যেহেতু ইসলামী শরীয়তের
অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও
ভাল কাজ সেহেতু আযানের
পূর্বে ও সালাত ও
সালাম পাঠ করা মুস্তাহাব। যাতে
সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
দলীল নং- ০৬: দোজাহানের
কান্ডারী রাহমাতুল্লিল আলামীনের প্রখ্যাত সাহাবী হযরত উবাই
ইবনে কা’আব (রাঃ)
আল্লাহর হাবীবকে লক্ষ্য করে বললেনاجعل لك صلواتى
كلها قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم
اذا يكفي همك و
يغفر لك ذنبك - অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি
আপনার প্রতি দরুদ ও
সালাম পাঠ করাকে সব
সময়ের (চব্বিশ ঘন্টার) জন্য
অপরিহার্য করে নিলাম, তখন
প্রতিদান স্বরুপ হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করলেন তাহলে
তো তোমার চিন্তামুক্ত হওয়ার
জন্য ইহাই যথেষ্ট হবে
এবং তোমার সকল পাপ
ও ক্ষমা করা হবে।
সুবহানাল্লাহ! এতে দিবালোকের ন্যায়
পরিষ্কার হলো যে শরীয়ত
কর্তৃক কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা
না থাকলে সদা-সর্বদা
দরুদ ও সালাম পাঠ
করা মুস্তাহাব ও উত্তম।
এখন আমরা আযানের পরে
দরুদ ও সালাম পাঠ
করার বৈধতা নিয়ে আলোচনা
করবো। পবিত্র
কোরআন ও সুন্নাহর প্রতি
গভীর ভাবে দৃষ্টিপাত করলে
এই কথা অকপটে স্বীকার
করতেই হবে যে,আযানের
পরে দরুদ ও সালাম
পাঠ করা শুধুমাত্র বৈধই
নয় বরং সুন্নাতে সাহাবা। যার
প্রমান নিম্মে প্রদান করা
হলো
দলীল নং- ০৭: عن
عبد الله بن عمرو
بن العاص رضى الله
تعالى عنه قال قال
رسول الله صلى الله
عليه وسلم اذا سمعتم
المؤذن فقولوا مثل ما
يقول . ثم صلوا علي
الخ - অর্থাৎ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে
আস (রাঃ) থেকে বর্নিত
তিনি বলেন রাসূলে মাকবুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
নবুয়াতী জবানে ইরশাদ করেন-
‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান
শুনবে তখন তোমরা তাই
বলো যা মুয়াজ্জিন বলবে। অতঃপর
( যখন আযান শেষ হবে)
তোমরা আমি নবীর প্রতি
(দো’আ করার পূর্বে)
দরুদ ও সালমা পাঠ
করো।
প্রিয়
পাঠক মহল উপরিউক্ত আলোচনা
থেকে কতই না সুন্দর
ভাবে প্রমানিত হলো যে আযানের
পূর্বে দরুদ ও সালাম
পাঠ করা মুস্তাহাব এবং
পরে পাঠ করা সুন্নাত। কেউ
যদি সুন্নাত নয় বরং কোন
মুস্তাহাবকে ও অস্বীকার করে
অথবা হারাম- নাজায়েজ বলে
তাহলে সে কাফির হিসেবে
বিবেচিত হবে। কেননা
কোন হালাল বস্তুকে হারাম
বলা কুফুরী।
আপত্তিঃ
দরুদ ও সালাম
বিরোধীগণ বলতে চায় প্রচলিত
নিয়মে আযানের পূর্বে ও
পরে সালাত ও সালাম
পাঠ করা নবী, সাহাবী
এবং তাবেয়ী গনের যুগে
ছিলো না, তাই ইহা
করা বিদআত।
জবাবঃ
নবী, সাহাবী এবং তাবেয়ী
গনের যুগে অনেক কিছুই
ছিল না যা বর্তমানে
বিরোধীগণএকাগ্রচিত্তে পালন করছে।
যেমনঃ মসজিদে টাইলস, এসি,
পাখা, পাচঁ কল্লী টুপি,
কোরআন শরীফে হরকত, আরবী
ব্যাকরণ ইত্যাদি ব্যবহার করা। নিজের
বেলায় জায়েজ আর নবীর
ক্ষেত্রে বেদআত? এ আবার
কেমন বিচার? নাকি রাসূল
দুশমনীরই প্রমান? অথচ কুরআনুল কারীমে
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
من جاءبالحسنة فله عشر امثالها
.অর্থাৎ কেউ যদি কোন
ভাল কাজের প্রচলন করে
তাহলে তাঁর জন্য রয়েছে
দশগুন প্রতিদান।
শুধু তাই নয় রাসূলে
আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ঘোষণা করেছেন من
سن فى الاسلام سنة
حسنة فله اجرها واجر
من عمل بها . - অর্থাৎ
কেউ যদি ইসলামের মধ্যে
(শরীয়ত সমর্থিত) কোন নতুন পদ্ধতি
( নেক কাজের) প্রচলন করে
তাহলে সে (প্রচলনকারী) সাওয়াব
পাবে এবং যে তাঁর
প্রচলনকৃত বিষয়ের অনুসরণ করবে
সে ও অনুরূপ
সাওয়াবের অংশীদার হবে। (সুবহানাল্লাহ)
প্রিয়
পাঠক মন্ডলী, ফায়সালা আপনারাই করুন যে কাজ
(দরুদ ও সালাম) আল্লাহ
তাঁর ফেরেস্তাগণকে নিয়ে সদা-সর্বদা
করেন এমনকি যারা ঈমানদার
তাদেরকে ও করার জন্য
নির্দেশ প্রদান করেছেন।
সেটা কী ভাল নাকি
মন্দ? অবশ্যই তাহা কিছুতেই
মন্দ হতে পারে না।
আসুন আমরা সকলে দয়াময়
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কুদরতী দরবারে প্রার্থনা
করি তিনি যেন আমাদেরকে
তাঁর হাবীবের প্রতি বেশি বেশি
দরুদ ও সালাম পাঠ
করার মাধ্যমে ইহকালীন শান্তি এবং পরকালীন
মুক্তি অর্জন করার মত
তাওফিক দান করেন।
আমিন! বেহুরমাতি সায়্যিদুল মুরসালীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন