নারী সমাজের উন্নয়নঃ
প্রেক্ষিত
হুজুর কিবলায়ে আলমের মিশন
শাহ্ হোসেন ইকবাল
আমাদের
পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীই
হলো নারী। সৃষ্টির
শুরু থেকে নারীকে কখনো
বীরাঙ্গনা, দেশ গড়ার কাজে,
দেশের উন্নয়নে, সমাজের মঙ্গলে পুরুষের
পাশাপাশি নারীরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে।
কখনো প্রত্যক্ষভাবে কখনো বা পরোক্ষভাবে
দেশ গড়ার কাজে তারা
ব্যাপৃত। বস্তুত
বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে নারীর ভূমিকা
স্পষ্ট। এ
নারী সমাজকে বাদ দিয়ে
কখনো দেশ ও সমাজের
সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী
জাতির এই অবদানের কথা
স্বীকার করতে গিয়ে বিদ্রোহী
কবি কাজী নজরুল ইসলাম
বলেন-
“বিশ্বে
যা কিছু মহান সৃষ্টি
চির কল্যাণকর
অর্ধেক
তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার
নর।”
সৃষ্টির
আদি থেকে মানবজাতি সৃষ্টি
হয়েছে নারী পুরুষের সমন্বয়ে। এমন
এক সময় ছিলো যখন
নারীকে অন্তপুরে বন্দি করে রাখা
হতো। মহিলাদের
জ্ঞান চর্চার কোন সুযোগই
ছিলো না। কিন্তু
সে যুগ পাল্টে গেছে। মেয়েদের
বেশি দিন চার দেয়ালের
মধ্যে আটকে রাখা সম্ভব
হয়নি। কবি
নজরুলের ভাষায়-
“সে যুগ হয়েছে বাসি
সে যুগে পুরুষ দাস
ছিলোনা, নারীরা আছিল দাসী”
কোন প্রতিকূলতাই নারীদের প্রতিভাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় নারীরা সব
সময়ই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
ইসলামের অতীত গৌরবময় যুগে
আরব মহিলাগণ, স্পেনীয় মহিলাগণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে
গৌরবময় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) স্বয়ং
যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছেন। ফ্লুরেন্স
নাইটিঙ্গেলের মত মহিলারা রণক্ষেত্রে
গমণ করে আহতদের সেবা
শুশ্রুষা করেছিলেন। ইমাম
হোসেন (রাঃ) এর বিদুষী
কন্যা সৈয়দা সখিনার গৃহে
ধর্মালোচনার জন্য বহু শিক্ষিত
মহিলারা সমবেত হতেন।
পৃথিবীর
শুরু থেকে নবী রাসুলদের
স্ত্রীগণ তাদের সকল কর্মকান্ডে
স্বামীদের সহযোগী ছিলেন।
মা খাদিজার ব্যবসা-বাণিজ্যের আয়-রোজগার নবিজীর দ্বীন
প্রচারের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। সমস্ত
বির্শ্বে যেসব ধর্ম ও
জাতির ইতিহাস লেখা হয়েছে
এবং প্রসিদ্ধি লাভ করেছে ইসলাম
ব্যতীত সেগুলোর ইতিহাস নারী জাতির
ব্যাপারে অভিন্ন।
খলিফা
মুয়াবিয়ার (রাঃ) পতœী
মায়মুনা, খলিফা আব্দুল মালিকের
পতœী উম্মুল বানীন,
খলিফা হারুন অর রশীদের
পতœী যুবাইদা প্রমুখ
মহিলাগণ সমাজসেবা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে
সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতেন।
বর্তমান
যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। এ
যুগেও নারীরা পুরুষের পাশাপাশি
জ্ঞান বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম,
অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। বেগম
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বেগম সুফিয়া
কামাল প্রমুখ দেশের সার্বিক
কল্যাণে তথা সমগ্র বিশ্বে
নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিভার যে
দৃষ্টান্ত রেখেছেন তা সারা বিশ্ববাসী
স্মরণ করে। আধুনিক
যুগে নারী আর দুর্বল
হিসেবে নয়, সবল মানুষ
হিসেবে পরিচিত।
স্ত্রীকে
পারিবারিক শান্তি ও সমৃদ্ধির
প্রতিও খেয়াল রাখতে হয়। কারণ,
দাম্পত্য জীবনের সুখ শান্তি,
স্বামীকে নানা কাজে সহযোগীতা
দানের উপর নির্ভরশীল।
প্রতিটি পরিবারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উন্নতি ও সুখ
এক সময় জাতীয় উন্নয়ন
অর্জনে সহায়তা করে।
আজকের শিশু আগামী দিনের
ভবিষ্যৎ। এই
শিশুরা আগামী দিনের নেতৃত্বের
দায়িত্ব নিয়ে দেশ গড়ার
কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবে। সেজন্য
তাদের সৎচরিত্র গঠন প্রয়োজন।
শিশুরা চরিত্র গঠনের শিক্ষা
পায় মায়ের কাছে, মা
যে শিক্ষা দেন তাই
তার ভবিষ্যৎ চরিত্র গঠনের নিয়ামক
হিসেবে কাজ করে।
বলা বাহুল্য, ঘরের পরিবেশ, সংসারের
পরিবেশ থেকে জাতি গঠনে
নারী এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে।
দেশ গঠনেও নারী সমাজ
উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করেছে। সমাজ
প্রধান থেকে তারা সরকারের
প্রধান, রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্বও পালন করেছে।
যেমন ইংল্যান্ডের মার্গারেট থেচার, ভারতের ইন্ধিরা
গান্ধী, শ্রীলংকার শ্রীমাভ বন্দর নায়েক, পাকিস্থানের
বেনজীর ভূট্টো, বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ও
প্রথম মহিলা কমনওয়েলথ এর
মহা সচিব আইনজীবী প্যাট্টিসিয়া
স্কটল্যান্ড প্রমুখ বিশ্ব মহিলা
নেতৃত্বের জ্বলন্ত উদহারণ।
জাতির
সাংস্কৃতিক বিকাশেও নারীরা বিশেষ ভূমিকা
পালন করে থাকে।
শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, আচার ব্যবহারের প্রকৃতি
সব ক্ষেত্রেই নারীদের ভূমিকা অনন্য।
রাজনৈতিক কর্মকান্ডে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে, শিক্ষার প্রসারে, কুসংস্কার দূরীকরণে অর্থাৎ বিশ্বের সার্বিক
উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকর্য।
নারীদের
সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার প্রসার,
কুসংস্কার দূরীকরণ, কর্মমূখী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা, উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি তাদের
প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি
উপায়গুলো যদি অনুসরণ করা
হয় তবে নারী উন্নয়ণ
কল্পে ১৯৮৪ সালের ৮ই
মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস
ঘোষণা দেন এবং ১৯৭৫
থেকে ১৯৮৫ দশককে জাতিসংঘ
নারী দশক হিসাবে ঘোষণা
দেন।
নারী সমাজ আমাদের সমাজের
অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীর
মোট জনগোষ্ঠীর প্রায়ই অর্ধেকই নারী। এই
নারী সমাজকে বাদ দিয়ে
কোন সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই
সমাজে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে থাকে।
যুগে যুগে নারী সমাজ
তার যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছে। নারীরাই
্হলো পুরুষের সকল কর্মের প্রেরণার
উৎস। তাই
কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছেঃ-
“কোন কালে একা হয়নি
জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা
দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয়
লক্ষ্মী নারী”।
শিক্ষাই
একজন মানুষকে ‘‘মানুষ’’ হতে সাহায্য করে। বিংশ
শতাব্দীর অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার, এতো শিক্ষারই দান। শিক্ষার
সাহায্যে মানুষ পরকে করেছে
আপন, দূরকে করেছে কাছে। শিক্ষা
চিন্তার মুক্তি ঘটায়, তেমনি
শিক্ষাগত জ্ঞান দিয়ে আমরা
আমাদের সামাজিক ব্যক্তিগত, পারিবারিকসহ সকল সমস্যার জ্ঞান
গরিমায়ে মেয়েরা ছেলেদের পাশাপাশি
সমান যৌগ্যতায়ে অগ্রসর হতে চলেছে।
অশিক্ষিত
পরিবারে অনেক ক্ষেত্রেই কন্যা
সন্তানকে অনাকাঙ্খিত মনে করা হয়। এর
কারণ হল- নারীর প্রতি
আমাদের হীনদৃষ্টি। নারী
যতদিন শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে
সমান অধিকার না পাচ্ছে
ততদিন আমাদের সমাজের এ
মধ্যযুগীয় দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন
হবে না। তাই
নারীর নিকট থেকে সৃজনশীল
কিছু আশা করলে তাকে
প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।
আর এই দায়িত্ব আমাদের
নিতে হবে বিশেষ করে
পুরুষদের। যারা
বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাঙ্গনে নিরলস
ভাবে কাজ করে যাচ্ছে
তাদেরকেই মা, ভগ্নি, কন্যাদেরকে
একজন আদর্শ নারী, মা,
বধু ও কন্যা হিসাবে
গড়ে তুলতে এই সমাজকে
দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
অনেকই
মনে করে মেয়েরা উচ্চ
শিক্ষার আলো পেলে তারা
ঘরের কাজে অবহেলা করবে। ধারণাটি
সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন।
জাতির
ও দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর
করে মূখ্যভাবে স্ত্রী শিক্ষার উপর। ইংরেজীতে
একটা কথা আছে ঞযব
যধহফ ঃযধঃ ৎড়পশং ঃযব
পৎধফষবং ৎঁষবং ঃযব ড়িৎফ-
জননীর যে হাত শিশুর
দোলনা দোলায়, সেই হাতেই
জগত শাসন করে।
সন্তান লালন পালন, শিক্ষা,
দীক্ষা এবং প্রকৃত মানুষের
সমান সন্তানকে
মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে
পারে একমাত্র ‘মা’। মাই
যখন সন্তানের শিক্ষার জন্য দায়ী থাকে
তাই নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
অপরিসীম ও গুরুত্ব বহন
করে।
আমরা সমাজে চাই আদর্শ
জননী, আদর্শ গৃহিনী, আদর্শ
বধু আদর্শ কন্যা।
ভবিষ্যৎ শিশুর মা যদি
শিক্ষিত না হয় তবে
শিশুর সু-নাগরিক হওয়ার
পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাই
আদর্শ জীবন ও সমাজ
গঠনে উপযুক্ত নারী শিক্ষার প্রয়োজন।
উপরিউক্ত
আলোচনার বিষয় বস্তু হলো
নারী সমাজের উন্নয়নই হলো
সমগ্র জাতির উন্নয়ন।
সে লক্ষ্য বস্তুকে সামনে
রেখে আমার প্রাণপ্রিয় হুজুর
কিবলায়ে আলম বাংলার জমিনে
নারী শিক্ষার উন্নয়নের জন্য মহিলা মাদরাসা
প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারই
ধারাবাহিকতায় সর্ব প্রথম চট্টগ্রামস্থ
ষোলশহরে জামেয়া আহমদিয়া ছুন্নিয়া
আলিয়া মাদরাসার পার্শ্বে একটি মহিলা স্বতন্ত্র
মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। উক্ত
মাদরাসার নাম জামেয়া আহমদিয়া
ছুন্নিয়া মহিলা মাদরাসা।
যে মাদরাসা বর্তমানে আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া
সুন্নিয়া ট্রাষ্ট কর্তৃক পরিচালিত একটি
আদর্শ মহিলা ছুন্নি মাদরাসা
হিসেবে সমগ্র দেশের শিক্ষাঙ্গনে
আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা আঞ্জুমানের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম
হাজী চিনু মিয়ার ঐকান্তিক
প্রচেষ্টা ও অনুপ্রেরণায় তার
বোন মরহুমা গুলবাহার বেগম,
হাজী চিনু মিয়া প্রধান
সড়কের পার্শ্বে অবস্থিত পৌনে ২ কাঠা
জমি অত্র মাদরাসায় পৃথক
মহিলা মাদরাসা করার লক্ষ্যে দান
করেছেন। উক্ত
দানকৃত জমির উপর হুজুর
কিবলা হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ
মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মাঃজিঃআঃ)’র নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিলা মাদরাসা মহিলা
শাখা। যেখান
থেকে সত্যিকারের আলেমদ্বীন ‘মা’’ সৃষ্টি হবে। আর
জাতি পাবে খাতুনে জান্নাত
ফাতেমা (রা), রাবেয়া বসরির
মত তৈয়্যেবা তাহেরা তথা পূত
ও পবিত্র রমনী।
তারা জাতিকে উপহার দিবে
আদর্শ মায়ের আদর্শ সন্তান। সেখানেই
হবে হুজুর কিবলার স্বপ্নের
স্বার্থকতা। ঢাকা
আঞ্জুমানের কর্মকর্তাবৃন্দ এই মহিলা মাদরাসাকে
হুজুর কেবলা (মাঃজিঃআঃ)’র
আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হবে। চট্টগ্রাম
ষোলাশহরে অবস্থিত মহিলা মাদরাসার ন্যায়
রাজধানী ঢাকার বুকে মহিলা
মাদরাসাটি একটি স্বতন্ত্র আবাসিক-অনাবাসিক আদর্শ ছুন্নি মহিলা
মাদরাসার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে
বলে সকল সুন্নী জনতার
এটাই প্রত্যাশা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন