ইসলামের
দৃষ্টিতে নারী শিক্ষার গুরুত্ব
মোহসিনা
আক্তার
যে পৃথিবীর রঙে রূপে আমি
মুগ্ধ, যে পৃথিবীর হাসনাহেনার
গন্ধে ব্যাকুল আমি সে পৃথিবীটাই
আদতে জন্মেছে নারীর কোমল হাতে। পুরুষ
যদি তাকে দাঁড় করিয়েছে
শক্ত ভিতের ওপর তবে
নারী জুগিয়েছে স্থায়িত্বের সফল প্রেরণা।
কেননা “এ বিশ্বের যা
কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,
অর্ধেক তার নর” (কবি
নজরুল)। মহান
বিপ্লবের পেছনে প্রজ্ঞাময় বিপ্লবীর
মতো, চাঁদের সাথে তার
আলোক বৃত্তের মতো যুগে যুগে
নারীরাই ছিল কার্যকরণের মতো।
সভ্যতার
পয়লা দিন থেকেই নারী
তো তিনিই যার হাতে
জন্ম নেয় স্বপ্ন, গড়ে
ওঠে বাস্তবতা, টিকে থাকে সাফল্যের
ধারাবাহিকতা। সেই
নারী অবশ্য একদা দাসী
ছিলেন। ¯্রফে
ভোগ্য পণ্যের ন্যায় যার
কেনা বেচা হত খোলা
হাট বাজারে। তারপর
ইসলাম এল সাইয়্যেদুল মুরসালীন
রাহমাতুলি লিল আলামীনের হাত
ধরে। নারী
ফিরে পেল হৃত গৌরব,
হারানো সম্মান। এবার
নারী হল পরম শ্রদ্ধেয়া-জননী। সন্তানের
স্বর্গটাই যার পদতলে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা
করেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের
বেহেশত’।
সুতরাং
নারী শুধু অবলা নয়,
নারী হলেন মা জননী। আর
মায়ের কোলেইতো শুভ সূচনা হয়
সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। তাই
সে মাকে হয়ে উঠতে
হবে শিক্ষা আর আদর্শের
মেলবন্ধনের অপূর্ব সমাহার।
একজন মা সন্তানের জন্মদানের
পূর্বে তিনিও থাকেন তার
বাবা মায়ের কন্যা সন্তান। শিক্ষা
আর আদর্শের নিয়ত অনুশীলনের মাধ্যমে
ধীরে ধীরে তিনি প্রস্তুত
হয়ে ওঠেন একজন শ্রেষ্ঠতম
মা হবার জন্য।
এ কারণেই নারীকে শিক্ষাদানে
প্রবলভাবে উৎসাহ দিয়েছে ইসলাম। যেমন
এক হাদীসে এসেছে “ যে
ব্যক্তির কোনো কন্যা সন্তান
রয়েছে এবং সে তাকে
উত্তম বিদ্যা ও উন্নত
আচরণ শিক্ষা দেয় তার
জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।”
ইসলাম
নারী শিক্ষার বিষয়ে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা
দিয়েছে। ইসলামের
দৃষ্টিতে নারীর রয়েছে সমান
শিক্ষার অধিকার। মূলত
ইসলামে ঘোষিত হয়েছে শিক্ষা
দীক্ষা পাওয়া শুধু নারীর
অধিকারই নয় বরং তার
ওপর ফরয। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন, “জ্ঞান অর্জন করা
প্রত্যেক নর নারীর উপর
আবশ্যক”।
সাহাবায়ে
কেরাম রাদিয়াআল্লাহু আনহুম আজমায়ীন তাদের
কন্যাদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ
করেছেন। এর
এক প্রকৃষ্ট উদাহরন হলেন উম্মুল
মুমিনীন হযরত আইশা সিদ্দীকা
(রা)। যিনি
আরবি সাহিত্যে যেমন পারদর্শী ছিলেন
তেমনি চিকিৎসা শাস্ত্রেও হয়ে উঠেছিলেন সমান
পারদর্শী। হযরত
আইশা সিদ্দীকা (রা) গণিত শাস্ত্রে
এতখানি পারদর্শী ছিলেন যে, হযরত
ওমর (রা) এর মত
জালীলুল কদর সাহাবী তাঁর
কাছ থেকে মিরাসের মাসয়ালা
ও হিসাব জেনে নিতেন। এছাড়া
যুক্তিবিদ্যায়ও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ফিক্হ
শাস্ত্রে ও অর্জন করেছিলেন
সুগভীর পান্ডিত্য ইতিহাস পর্যালোচনা করলে
জানা যায় যে, তৎকালীন
নারী সমাজ লেখার নিয়মকানুন
সম্পর্কে এতখানি ওয়াকিবহাল ছিলেন
যে গুরুত্বপূর্ণ পত্রাবলি ও বিভিন্ন মাসয়ালা
মাসায়েল লিখে রাখতে তাদের
কোনো অসুবিধা হতো না।
যেহেতু
বিদ্যা শিক্ষা করা নারী
পুরুষ সবার জন্য ফরয
তাই আমরা দেখি, ইসলামের
প্রাথমিক যুগে উম্মাহাতুল মুমিনীন,
মহিলা সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে
তাবেঈ মহিলাগণ হাদীস ও ফিকহের
মাসয়ালা ও মাসায়েল বর্ণনার
ক্ষেত্রে অতীব উচ্চ মর্যাদার
অধিকারী ছিলেন। এমনকি
সাহিত্য, কবিতা চর্চা ও
ভাষা জ্ঞানে তারা পান্ডিত্য
অর্জন করেছিলেন। হাদীস
বর্ণনাকারী ইমামদের অনেকেই মহিলা সাহাবী
ও তাবেঈদের হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
স্ত্রীগণ কম বেশি হাদীস
বর্ণনা করেছেন। তবে
হযরত আইশা (রা) ২২১০
টি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইসলাম
যদিও এভাবেই নারীর মূল্যায়ন
করেছে তবুও আজকের উদাসীন
মুসলিম সমাজ ভুলে বসেছে
ইসলামের সুমহান আদর্শের কথা। তারা
আজ প্রাশ্চাত্যের ধোকায় নিমজ্জিত।
বর্তমান মুসলিম জনগোষ্ঠী কুরআন
ও সুন্নাহ থেকে শিক্ষা নেয়ার
বদলে শিক্ষা নেয় পশ্চিমা
বিশ্বের কাছ থেখে।
ফলে তাদের কেউ হয়ত
গোড়ামীর শিকার আবার কেউ
হয়ত প্রাশ্চাত্যের অপপ্রচারের কাছে ধরাশায়ী।
তবে সুখের বিষয় এই
যে, এ অবস্থা হতে
উত্তরণের জন্য এবং দিক
হারা মুসলিম জাতিকে সঠিক
পথে পরিচালনা করার জন্য রাহনুমায়ে
শরীয়াত ও ত্বরীকাত হাদীয়ে
দ্বীন ওয়া মিল্লাত আওলাদে
রাসূল হযরাতুল আল্লাম শাহ সূফী
সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি দক্ষ কান্ডারীর মত
সদা দেখিয়েছেন মুক্তির দিশা। তাঁর
মনোবাসনা পূরণে তাঁরই সুযোগ্য
উত্তরসূরী বর্তমান হুজুর কিবলা হাযরাতুল
আল্লাম শাহ সূফী সৈয়্যদ
মুহাম্মদ তাহের শাহ মাঃ
যিঃ আঃ এর পবিত্র
হস্ত মুবারকে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত
হয় কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া কামিল মহিলা
মাদ্রাসা। নির্ভেজ্জাল
ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক চর্চার উদ্দেশ্যেই
যেটি এগিয়ে চলেছে সতত
সম্মুখের পানে।
একবিংশ
শতাব্দী মানব সভ্যতার সামনে
ছুড়ে দিয়েছে নানান চ্যালেঞ্জ। সেগুলো
সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন
শিক্ষা আর উন্নত চরিত্রের
অপূর্ব মিশেল। অথচ
কী আশ্চর্য! মুসলিম অধ্যুষিত এ
অঞ্চলে ছেলেদের জন্য পর্যাপ্ত মাদ্রাসা
থাকলেও সুন্নী মহিলা মাদ্রাসার
বড়ই অভাব। এ
তীব্র অভাব পূরণে প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মহিলা মাদ্রাসা। আল্লাহর
মেহেরবাণীতে আওলাদে রাসূলের কোনো
মিশনই আজ পর্যন্ত ব্যর্থ
হয়নি এবং হবেও না
ইনশাআল্লাহ।
তাই আমাদের বিশ্বাসএকদিন এ
মাদ্রাসারও স্বীকৃতি পাবে এদেশের শ্রেষ্ঠতম
মহিলা মাদরাসা হিসেবে, ইনশাআল্লাহ। মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে
এ মহান উদ্যোগকে সাফল্যমন্ডিত
করতে সহযোগিতা করার তাওফিক দান
করুন। আমীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন