হাদীসে
নূর: একটি পর্যালোচনা
মাওলানা
মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম
কৈফিয়ত:
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাতের অনূপম-অতুল সৃষ্টি
, জগত সমূহের অপার রহমত
, সকল সৃষ্টির মূল , উভয় জগতের
কান্ডারী, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মানব খোলসে ¯্রষ্টার অনন্য
সৃষ্টি একজন “নূরী” মানুষ
ছিলেন নিঃসন্দেহে। প্রকৃত
বিশ্বসী জনের এটাই ‘ঈমান’
আর এমন বিশ্বাসে আস্থাশীল
লোকই আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাতের অনুসারী। ‘ঈমান
বির-রাসূল’ তথা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশ্বাসের
ক্ষেত্রে সঠিক ধারণা পোষণকারী। ইসলামের
উষা লগ্ন হতে ঊনিশ
শতকের পূর্ব পর্যন্ত আরব-আনারব সকল মুসলিমের
এটাই ছিল বিশ্বাস।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলোÑ কিছু
নব্য ষড়যন্ত্রকারী, ধর্ম ব্যবসায়ীর হাতে
ঈমান নিরাপত্তাহীন হয়ে গেল।
এসব মানব শয়তান আযাযীলকেও
হার মানায়। দাড়ির
বাহারে, সফেদ লেবাসে, পাগড়ী-মিসওয়াকের রমরমা প্রদর্শনীতে এরা
সহজ-সরল রাসূল প্রেমিক
উম্মতকে বোকা বানিয়ে ‘নূরী
রাসূলকে’ নিজেদের
মত ‘মাটির তৈরি’ মানুষ বলে হরহামেশা
প্রচার করে যাচ্ছে।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সূরা
ক্বাহফের সর্বশেষ আয়াতের (১১০নং) ভুল ব্যাখ্যা
দিয়ে এবং বিশ্ববিখ্যাত হাদিসের
ইমাম মুহাদ্দিসকুল শিরোমনি ইমাম আবু আব্দিল্লাহ
মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল বুখারী
(১৯২-২৫৬হি.) সহ অসংখ্য হাদিসের
ইমামের সুযোগ্য দাদা ওস্তাদ সর্বমান্য
ইমাম আব্দুর রাজ্জাক আস-সনাআনী (র.) (১২৬-২২১হি.)
রচিত ‘আল-মুসান্নাফ’ গ্রন্থের
كِتَابُ الْإِيْمَانِ [ঈমান পর্ব] এর
بَابٌ فِىْ تَخْلِيْقِ نُوْرِ
مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ [হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
“নূর” মুবারক সৃষ্টি বর্ণনার
অধ্যায়] টিকে সম্পূর্ণ অদৃশ্য
করে ‘আল-মুসান্নাফ’ এর
নতুন প্রিন্টিং এর মাধ্যমে, ‘আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ বিল মিনহাতিল মুহাম্মদিয়্যাহ’ সহ
যে সকল নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে
‘হাদিসে নূর’ শরীফ আল-মুসান্নাফের সূত্রে বর্ণিত রয়েছে
সেগুলোর টীকা-টিপ্পনীর আশ্রয়ে
এই সহীহ হাদীসকে মিথ্যা-বানোয়াট-জাল-ভিত্তিহীনের তকমা
লাগিয়ে গোটা মুসলিম মিল্লাতকে
ধোঁকা দিচ্ছে। আলোচ্য
প্রবন্ধ পাঠকমহলের সামনে ‘হাদীসে নূর’
শরীফ প্রসঙ্গে ইসলাম ও সুন্নী
মুসলমানদের ঈমানী শত্রুদের দীর্ঘ
ষড়যন্ত্র সর্ম্পকে সাম্যক ধারণা ও
হাদীস বিজ্ঞানে এই হাদীস শরীফটির
অবস্থান সম্বন্ধে একটি তা¡ত্তিক
চিত্র উপস্থাপন করবে।
‘হাদীসে
নূর’ নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইতিবৃত্ত:
ইসলামী সংবিধান পবিত্র আল-কুরআন
এর স্পষ্ট ঘোষণা- নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
‘নূর’। সহীহ
হাদীস দ্বারা সুপ্রমাণিত এবং
সোনার মানুষ-হিদায়েতের দিশারী
সাহাবীগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম সহ আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী
ফকীহ-মুজতাহিদ, মুফাসস্রি, মুহাদ্দিস, ওলী-ওলামাগণের ঈমানী
বিশ্বাস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর ‘নূর’ মুবারক
আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি।
এই দাবীর পক্ষে জোরালো
দলীল হলোÑ ইমাম আব্দুর
রাজ্জাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘আল-মুসান্নাফ’ এর ‘হাদীসে নূর’। এই
হাদীস শরীফটি হাফিয ইবনু
হাযর আল-আসক্বলানী সহ
পনের জনের
অধিক বিদ্বগ্ধ পন্ডিত-লেখক নিজেদের
লিখিত সুপ্রসিদ্ধ ও জনসমাদৃত গ্রন্থ
সমূহে ‘আল-মুসান্নাফ’ এর
সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
সৌদিতে কথিত ওহাবী বিপ্লবের
পর ‘আল-মুসান্নাফ’ এর
প্রথম দিককার ২খন্ড (১০টি
অধ্যায় সম্বলিত) সুকৌশলে
গায়েব করা হয়; যার
প্রথম খন্ডের প্রথম অধ্যায়ে
দুই ভিন্ন সনদে ০১
ও ১৮ নাম্বারে ‘হাদীসে
নূর’ বর্ণিত ছিল।
প্রথম খন্ডটি গায়েব করলেও
হতো। শয়তানী
দূরাভিসন্ধি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যাতে অপবাদ না
আসে তার জন্যে দ্বিতীয়
খন্ডটিও গায়েব করে যাতে
চুরি ধরা না পড়ে। কথায়
বলে- চোরের দশ দিন,
গেরস্থের এক দিন।
‘সত্য যে দিন সমাগত
হবে মিথ্যা সে দিন
বিতাড়িত হবে এবং মিথ্যা
অপসারিত হবেই’। এমনকি ইমাম আব্দুর
রাজ্জাক এর মত সর্বমান্য
ইমামুল মুহাদ্দিসীনকে ‘শীয়া’ হওয়ার অপবাদ
পর্যন্ত দিলো। আহলে হকগণের এই
দাবীকে মিথ্যা প্রমানের জন্য
ইসলামের ঊষা লগ্নের মক্কা-মদিনার কাফির-মুশরিক-মুনাফিকদের মত আধুনিক ডিজিটাল
মিডিয়া বিপ্লবের যুগে তাদের দোষর
‘ওহাবী’, লা-মাযহাবী, ‘আহলে
হাদীস’, ‘আহলে কুরআন’ নামের
বর্ণ চোরেরা নানান রূপে
ও এড্রেসে অগণিত ওয়েব সাইট
খুলে নানান ভাষায় ‘হাদীসে
নূর’ এর বিরুদ্ধে সমালোচনা
মূলক প্রবন্ধ-ফুটনোট, মন্তব্য লিখে জাল-মিথ্যা
বলে অপপ্রচার-প্রপাগন্ডা চালাচ্ছে। আল্লামা
ড. ঈসা বিন আব্দুল্লাহ
মানিঈ আল-হিময়ারীর বিরুদ্ধে
মিথ্যা হাদীস বর্ণনার অপবাদ
দিচ্ছে।
বাংলাদেশেও কিছু প্রতারক ‘হাদিসের
নামে জালিয়াতি’, ‘জাল হাদিসের ইতিবৃত্ত’,
‘প্রচলিত জাল হাদিস’ নামে
বই রচনা করে সাধারণ
মানুষের মন থেকে ‘নূরী
রাসূল’ আক্বীদাকে মুছে ফেলতে সদা
সচেষ্ট রয়েছে। ১৯৭০
সালে দেওবন্দী আলেম হাবীবুর রহমান
আযমীর নিরীক্ষণে প্রথম দুই খন্ড
ব্যতিরেকে বৈরুত, লেবানন হতে
মুদ্রিত ‘আল-মুসান্নাফ’ কে
বাতিল-নবীদ্রোহীরা অস্ত্র করে মাঠে-ময়দানে এবং লিখনীর
মাধ্যমে সুন্নী আলেম-ওলামাদের
বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে
থাকে।
‘আল-মুসান্নাফ’ এর হারানো কপির
সন্ধান:
ইতিপূর্বে
উল্লেখ করেছি যে, ষড়যন্ত্রকারীরা
কিভাবে ‘হাদীসে নূর’ কে
দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতে
চেয়েছিল। এহেন
বিরূপ ও সঙ্গীন পরিস্থিতে
পাকিস্থানের বিজ্ঞ সুন্নী আলেম
আল্লামা আব্দুল হাকীম শরফ
কাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এই ‘হাদিসে
নূর’ অন্বেষণে নেমে পড়েন।
তিনি নানান দেশের সুন্নী
আলেম-ওলামা, ছাত্র-ব্যবসায়ীদের
নিকট এর হস্ত লিখিত
কপির অনুসন্ধানের জন্য চিঠি দিতে
থাকেন। তবে
কোথা হতে তেমন কোন
সবুজ সংকেত পাননি।
তাই বলে তিনি বসে
থকেননি। এই
মর্দ্দে মুজাহিদ আপন চেষ্টা-তদবীর-অনুসন্ধান জারী রাখলেন।
অবশেষে
মদিনা ওয়ালা ‘নূর নবী’র দয়া হল। আল্লামা
আব্দুল হাকীম শরফ কাদেরীর
অত্যন্ত নিকটজন, (যাকে তিনি ইতিপূর্বে
‘হাদীসে নূর’ অন্বেষণের কাজে
লাগিয়ে রেখেছিলেন) ‘বারকাতী ফাউন্ডেশন’ র প্রতিষ্ঠাতা ও
চেয়ারম্যান, দুবাইয়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং আ’লা
হযরত ইমাম শাহ আহমদ
রেজা খান ফাযেলে বেরেলভী
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (১৮৫৬-১৯২১ খ্রি.)
এর পীরের দরবারের মুরীদ
মুহতারাম হাজী মুহাম্মদ রফিক
বারকাতী সাহেব একদা দুবাইস্থ
বাড়ীতে তাঁর সম্মানিত পীর-মুর্শিদ আল্লামা ড. সৈয়্যদ আমিন
মিঞা (মু.জি.আ.)
সাজ্জাদানশীন, মারহারা শরীফ, ভারত, এর
আগমনে এক না’ত-এ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র
মাহফিলের আয়োজন করেন; যেখানে
তিনি তৎকালীন দুবাই আওকাফের ডাইরেক্টর
আল্লামা ড. ঈসা মানিঈ
হিময়ারী (মু.জি.আ.)
কেও দাওয়াত দেন।
ইত্যবসরে এক আফগান ব্যবসায়ী
তাঁর কাছে এসে বললেন,
বারকাতী সাহেব! শুনেছি আপনি
নাকি ‘মুসান্নাফি আব্দির রাজ্জাক’ এর
হস্ত লিখিত পান্ডুলিপি খুঁজছেন?
নিন আমি এটা আপনার
জন্য নিয়ে এসেছি।
দেখা গেল এটি ৯৩৩
হিজরীতে শায়খ ইছহাক ইবনে
আব্দির রহমান সালমানী রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি বাগদাদ শরীফে লিপিবদ্ধ
করেছিলেন। (আল-হামদুলিল্লাহ!!!) তিনি হাদিয়া কত
জানতে চাইলে ঐ আফগান
ব্যবসায়ী বলেন, পাকিস্তানী দশ
লক্ষ মুদ্রা। তিনি
বলেন, এ তো বিরাট
অংক, এ অধিক মূল্য। আমি
তোমাকে চার লক্ষ দিতে
পারি, আর তাও আগামী
কাল দিতে পারব; যদি
আমার পীর সাহেব এটা
ক্রয়ের নির্দেশ দেন।
তখন ঐ ব্যক্তি বলেন,
হাজী সাহেব! আমি যদি
এটা অমূকের নিকট নিয়ে
যেতাম তিনি আমাকে ছয়
লক্ষ দিতেন। তিনি
আশ্চর্যান্বিত হযে বললেন, ঐ
ব্যক্তি এটা দিয়ে কি
করবে? সে বলল, তিনি
এটা জ্বালিয়ে ফেলতেন। বারকাতী
সাহেব বলেন, তবে তুমি
এটা তার নিকট নিয়ে
গেলে না কেন? আফগান
ব্যবসায়ী বলল, ‘আমি মনে-প্রাণে এটা মেনে
নিতে পারছিনা যে, এ ধরনের
এক দূর্লভ পবিত্র হাদীসের
পান্ডুলিপি জ্বালিয়ে ফেলবে’। এর
পরও কি এ ব্যাপারে
আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সন্দেহ থাকতে
পারে? বারকাতী সাহেব এটা ক্রয়
করে তাঁর সম্মানিত পীর
ও মুর্শিদ আল্লামা ড. সৈয়্যদ আমিন
মিঞা (মু.জি.আ.)
এর হাতে দেন এবং
না’ত মাহফিল শেষে
আল্লামা ড. ঈসা মানিঈ
হিময়ারী (মু.জি.আ.)
কে দেখাতে বলেন।
মাহফিল শেষে যখন এটা
আল্লামা ড. ঈসা মানিঈ
হিময়ারী (মু.জি.আ.)
এর হাতে দিলেন; তখন
তিনি বলেন, এটা এই
গ্রন্থেও থাকবে না।
কারণ, বিশ্বব্যাপী লাইব্রেরিগুলোতে অনুসন্ধান করে পাইনি।
তারপরও তিনি দু-চার
পৃষ্ঠা পড়ে দেখলেন এবং
আনন্দে আত্মহারা হয়ে সাজদায় পতিত
হলেন। তিনি
সাজদায় দীর্ঘক্ষণ রয়ে গেলেন, উঠছেন
না। অবশেষে
বারকাতী সাহেব তাকে সাজদা
হতে উঠালেন এবং জিজ্ঞেস
করলেন, কি ব্যাপার? তিনি
সাজদা হতে উঠে বারকাতী
সাহেবকে জড়িয়ে ধরলেন এবং
আরবদের রীতি অনুসারে কপালে
চুমু দিতে লাগলেন, আর
বললেন, হাজী রফিক মুবারকবাদ!
এতে ‘হাদীসে নূর’ বিদ্যমান।
(সুবহানাল্লাহ!) আল্লাহ তা’আলা
এরশাদ করেন, ‘আর তারা
আল্লাহর নূরকে ফুঁক দ্বারা
নিভাতে চায়, আর আল্লাহ
তার নূরকে পূর্ণকারী; যদিও
তা কাফির সম্প্রদায় অপছন্দ
করে।
ভন্ড-প্রতারকরা সতর্ক হও।
কেননা তোমাদের পরিণতি সম্পর্কে কোন
এক ফার্সী কবি সুন্দরই
বলেছেন,
چراغے را کہ ايز
دبر فردزد * اگر بروے
تفے ريشت بسوزد-
যে দীপ শিখা মহান
আল্লাহ জ্বালাবে * তাতে ফুঁক দিলে
তোর দাঁড়ি জ্বলে যাবে।
‘আল-মুসান্নাফ’ এর হারানো কপির
নতুন প্রকাশ:
দীর্ঘ
প্রতীক্ষার ক্ষণ শেষ হলো। আল্লাহর
নূরে জগত উদ্ভাসিত হলো। সত্য
প্রতিষ্ঠা পেল, মিথ্যা আধাঁরের
অতল গহ্বরে তলিয়ে গেল। আল্লামা
ড. ঈসা মানে হিময়ারী
(মু.জি.আ.) আপন
পূর্ব পুরুষ তুব্বায়ে আউয়াল
হিময়ারীর স্থলাভিষিক্ত হলেন। যোগ্য
উত্তরসূরী হিসেবে ‘হাদীসে নূর’ প্রকাশনার
দায়িত্ব নিলেন। যেভাবে
তুব্বায়ে আউয়াল হিময়ারী নূরী
রাসূলের আগমনের শত বছর
পূর্বে তাঁর হিযরতগাহ মদিনা
শরীফে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র
জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা
করে দিয়েছিলেন। আজ
তার সন্তান বাতিলের বিরুদ্ধে
‘হাদীসে নূর’র রক্ষকের
ভূমিকা নিলেন। তিনি
হস্ত লিখিত পান্ডুলিপিটি অনেক
গবেষণা করে সেই হারিয়ে
যাওয়া ১০ অধ্যায়ের উপর
মূল্যবান পাদটীকা এবং ভূমিকা সহ
‘মুয়াস্সাসাতু ফুওয়াদি বি আইনূ লিত-তাজলীদ, বৈরুত, লেবানন হতে
১৪২৫ হিজরী মুতাবিক ২০০৫
খ্রিস্টাব্দে ‘হাদীসে নূর’ সম্বলিত
‘আল-মুসান্নাফ’ এর ‘আল-জুযউল
মাফকুদি মিনাল জুযয়িল আউয়ালি
মিনাল মুসান্নাফি’ শিরোনামে প্রথম প্রকাশ করেন। আল-হামদুলিল্লাহি, আল্লাহ তাঁকে ও
তার পূর্ব পুরুষগণকে উত্তম
প্রতিদান দান করুন।
আমীন! এরপর পকিস্থানের ‘মুয়াস্সাসাতুশ
শরফ’, লাহোর, পকিস্থান হতে
আল্লামা আব্দুল হাকীম শরফ
কাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রয়োজনীয়
তথ্যাবলী সংযোজন সহ বৈরুত
হতে প্রকাশিত কপি উর্দ্দু ভাষায়
প্রকাশিত হয়।
‘হাদিসে
নূর’ প্রাপ্তির শুকরিয়া ও আনন্দ প্রকাশ
স্বরূপ পাকিস্তানের তৎকালীন সুন্নী ওলামা-মশায়েখ
লাহোরের ‘জামেয়া ইসলামীয়া’ মাঠে
২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি, রোববার
‘হাদীসে নূর কনফারেন্স’ নামে
বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন।
এতে সুন্নী অঙ্গনের আর্ন্তজাতিক
মুখপাত্রগণও অংশ গ্রহণ করে
তাঁদের মূল্যবান মতামত পেশ করেন
এবং নবী দ্রোহী বাতিল
সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ‘হাদীসে নূর’র
চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেন।
‘হাদীসে
নূর’ ও এর সরল
অনুবাদ: অত্র প্রবন্ধে ‘আল-মুসান্নাফ’র ১৮ নং
হাদীস ও এর অনুবাদ
প্রদান করা হল।
عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنْ
مَعْمَرِ عَنْ إبْنِ الْمُنْكَدِرِ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَأَلْتُ
رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَوَّلِ شَئِّ
خَلَقَهُ اللهُ تَعَالَى. فَقَالَ:
هُوَ نُوْرُ نَبِيِّكَ يَا
جَابِرُ! خَلَقَهُ اللهُ، ثُمَّ خَلَقَ
فِيْهِ كُلَّ خَيْرٍ، وَخَلَقَ
بَعْدَهُ كُلَّ شَىِّءٍ، وَحِيْنَ
خَلَقَهُ أَقَامَهُ قُدٌّامَهُ مِنْ مَقَامِ الْقُرْبِ
إِثْنَى عَشَرَ أَلْفَ سَنَةً.
ثُمَّ جَعَلَهُ أرْبَعَةَ أقْسَامٍ، فَخَلَقَ الْعَرْشَ وَالْكُرْسِىِّ مِنْ قِسْمٍ، وَحَمَلَةَ
الْعَرْشِ وَخَزَنَةَ الْكُرْسِىِّ مِنْ قِسْمٍ، وَأَقَامَ
الْقِسْمَ الرَّابِعِ فِىْ مَقَامَ الْحُبِّ
إِثْنَى عَشَرَ أَلْفَ سَنَةٍ.
ثُمَّ جَعَلَهُ أرْبَعَةَ أقْسَامٍ، فَخَلَقَ الْقَلَمَ مِنْ قِسْمٍ، وَاللَّوْحَ
مِنْ قِسْمٍ، وَالْجَنَّةَ مِنْ
قِسْم،ٍ ثُمَّ أقَامَ الْقِسْمَ
الرَّابِعِ فِىْ مَقَامِ الْخَوْفِ
إثْنَى عَشَرَ ألْفَ سَنَةٍ.
ثُمَّ جَعَلَهُ أرْبَعَةَ أجْزَاءٍ. فَخَلَقَ الْمَلَائِكَةَ مِنْ جُزْءٍ، وَالشَّمْسَ
مِنْ جُزْءٍ، وَالْقَمْرَ وَالْكَوَاكِبَ
مِنْ جُزْءٍ، وَأقَامَ الْجُزْءَ
الرَّابِعِ فِىْ مَقَامِ الرَّجَاءِ
إثْنَى عَشَرَ ألْفَ سَنَةٍ.
ثُمَّ جَعَلَهُ أرْبَعَةَ أجْزَاءٍ. فَخَلَقَ الْعَقَلَ مِنْ جُزْءٍ، وَالْعِلْمَ
وَالْحِكْمَةَ وَالْعِصْمَةَ وَالتَّوْفِيْقِ مِنْ جُزْءٍ، وَأَقَامَ
الْجُزْءَ الرَّابِعِ فِىْ مَقَامِ الْحَيَاءِ
إثْنَى عَشَرَ ألْفَ سَنَةٍ.
ثُمَّ نَظَرَ اللهُ عَزَّ
وَجَلَّ إلَيْهِ، فَتَرَشَّحَ النُّوْرَ عَرَقًا، فَقَطَرَ مِنْهُ مِائَةَ ألْفَ
وَّأرْبَعَةَ (وَعِشْرُوْنَ ألْفَ وَأرْبَعَةَ ألَافٍ) قَطَرَةً
مِنْ نُوْرٍ؛ فَخَلَقَ اللهُ
مِنْ كُلِّ قَطَرَةٍ رُوْحَ
نَبِىٍّ أَوْ رُوْحَ رَسُوْلٍ
ثُمَّ تَنَفَّسَتْ أَرْوَاحُ الْأَنْبِيَاءَ، فَخَلَقَ اللهُ مِنْ أَنْفَاسِهِمْ
الأَوْلِيَاءَ وَالشُّهَدَاءَ وَالسُّعْدَاءَ وَالْمُطِيْعِيْنَ إلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.
فَالعَرْشُ وَالْكُرْسِىُّ مِنٍ نُوْرِىْ، وَالْكُرُوْبِيُّوْنَ
مِنْ نُوْرِىْ، وَالرُّوْحَانِيُّوْنَ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ نُوْرِىْ، وَالْجَنَّةُ
وَمَا فِيْهَا مِنْ النَّعِيْمِ
مِنْ نُوْرِىْ، وَمَلَائِكةُ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ مِنْ نُوْرِىْ، وَالشَّمْسُ
وَالْقَمَرُ وَالْكَوَاكِبُ مِنْ نُوْرِىْ، وِالْعَقَلُ
وَالتَّوْفِيْقُ مِنْ نُوْرِىْ، وَأرْوَاحُ
الرَّسُلُ وَالْأَنْبِيَاءَ مِنْ نُوْرِىُ، وَالشُهَدَاءَ
وَالسُّعْدَاءَ وَالصَّالِحُوْنَ مِنْ نِتَائِجِ نُوْرِىْ،
ثُمَّ خَلَقَ اللهُ إثْنَى
عَشَرَ ألْفَ حِجَابٍ؛ فَاَقَامَ
اللهُ نُوْرِىْ وَهُوَ الْجُزْءُ الرَّابِعِ،
فِىْ كُلِّ حِجَابٍ ألْفَ
سَنَةٍ؛ وَهِىَ مُقَامَاتِ الْعُبُوْدِيَّةِ
وَالسَّكِيْنَةِ وَالصَّبْرِ وَالصِّدْقِ وَالْيَقِيْنِ. فَغَمَسَ اللهُ ذَالِكَ النُّوْرَ
فِىْ كُلِّ حِجَابٍ أَلْفَ
سَنَةٍ، فَلَمَّا أَخْرَجَ اللهُ النُّوْرَ مِنْ
الْحُجُبِ رَكِبَهُ اللهُ فِىْ الْأَرْضِ
فَكَانَ يُضِىْءُ مِنْهَا مَا بَيْنَ
الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ كَالسِّرَاجِ فِىْ الْلَيْلِ الْمُظْلِمِ،
ثُمَّ خَلَقَ اللهُ أَدَمَ
مِنَ الْأَرْضِ فَرَكِبَ فِيْهِ النُّوْرُ فِىْ
جَبِيْنِهِ، ثُمَّ اِنْتَقَلَ مِنْهُ
إِلَى شِيْثَ، وَكَانَ يَنْتَقِلُ
مِنْ طَاهِرٍ إِلَى طَيِّبٍ،
وَمِنْ طَيِّبٍ إِلَى طَاهِرٍ،
إِلَى اَنْ أَوْصَلَهُ اللهُ
صُلْبَ عَبْدِ اللهِ بْنِ
عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، وَمِنْهُ إِلَى رِحْمِ أُمِّىْ
أَمِيْنَةَ بِنْتِ وَهَبٍ، ثُمَّ
أَخْرَجَنِىْ إِلَى الدُّنْيَا فَجَعَلَنِىْ
سَيَّدَ الْمُرْسَلِيْنَ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ وَرَحْمَةً لِلْعَالَمِيْنَ وَقَائِدَ الْغُرِّالْمُحَجِّلِيْنَ. وَهَكَذَا كَانَ بَدْءُ خَلْقِ
نَبِيِّكَ يَا جَابِرُ-
অর্থ:
হযরত আব্দুর রাজ্জাক মা‘মার হতে, তিনি
ইবনু মুনকাদির হতে, তিনি জাবির
ইবনি আব্দিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে (হাদীস)
বর্ণনা করেন। জাবির
বলেন, “আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর
প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে প্রশ্ন
করেছিলাম। রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তদুত্তরে বলেন, হে জাবির!
আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি হল
তোমার নবীর “নূর” (মুবারক)। অতঃপর
তন্মধ্যে সকল কল্যাণ সৃষ্টি
করেন। তৎপর
অন্য সব বস্তু সৃষ্টি
করেন। আর
যখন তিনি (“নূর” মুবারক)
সৃষ্টি করলেন, তখন ( ঐ
“নূর”) তাঁর সামনে “মক্বামে
কুরব” (নৈকট্যের স্থানে) বার হাজার বৎসর
স্থির রাখলেন। এর
পর “নূর” (মুবারককে) চার
ভাগে ভাগ করলেন।
অতঃপর এক ভাগ দিয়ে
আরশ-কুরসি সৃষ্টি করেন,
আর এক ভাগ দিয়ে
আরশ বহণকারী (ফিরিশতা) এবং (এক ভাগ
দিয়ে) কুরসির পায়া সৃষ্টি
করেন। আবার
চতুর্থ ভাগকে “মক্বামে হুব্ব”
(প্রেমের স্তরে) বার হাজার
বৎসর স্থির রাখলেন।
অতঃপর এটিকে চার ভাগ
করলেন। এক
ভাগ দিয়ে কলম, এক
ভাগ দিয়ে লওহ, আর
এক ভাগ দিয়ে জান্নাত
সৃষ্টি করলেন। তারপর
চতুর্থ ভাগকে “মক্বামে খাওফ”
(ভয়ের স্তরে) বার হাজার
বৎসর স্থির রাখলেন এবং
এটিকে চার ভাগ করলেন। এক
ভাগ দিয়ে ফিরিশতা, এক
ভাগ দিয়ে সূর্য, আর
এক ভাগ দিয়ে চাঁদ-তারকাসমূহ সৃষ্টি করেন।
তারপর চতুর্থ ভাগকে “মক্বামে
রজা” (আশার স্তরে) বার
হাজার বৎসর স্থির রাখলেন
এবং এটিকে চার ভাগ
করলেন। এক
ভাগ দিয়ে বুদ্ধিমত্তা, একভাগ
দিয়ে জ্ঞান-প্রজ্ঞা, (আর
এক ভাগ দিয়ে) পবিত্রতা
এবং যোগ্যতা সৃষ্টি করেন।
তারপর চতুর্থ ভাগকে “মক্বামে
হায়া” (লজ্জার স্তরে) বার
হাজার বৎসর স্থির রাখলেন। অতঃপর
আল্লাহ পাক আয্যা ওয়া
জাল্লা ঐ “নূর” এর
প্রতি দৃষ্টি দিলেন।
এতে “নূর” মুবারক ঘর্মাক্ত
হয়ে (“নূর” এর) একলক্ষ
চব্বিশ হাজার ঘাম মুবারকের
ফোঁটা চুইয়ে পড়লো।
আর আল্লাহ তা’য়ালা
এর প্রত্যেক ফোঁটা হতে নবী
বা রাসুল (আলাইহিমুস সালাম)
গণের রুহ মুবারক সৃষ্টি
করেন। নবীগণ
(আলাইহিমুস সালাম) এর রুহ
মুবারক নিঃশ্বাস ফেললেন। আর
আল্লাহ তা’য়ালা এদেঁর
প্রত্যেক নিঃশ্বাস হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত
আগত ওলী, শহীদ, সৌভাগ্যশালী,
এবং অনুগত বান্দাগণকে সৃষ্টি
করেন। আরশ-কুরসি আমার “নূর”
হতে; ফিরিশতা সর্দারগণ, আধ্যাত্মিক সাধকগণ এবং (সাধারণ)
ফিরিশতাগণ আমার “নূর” হতে;
জান্নাত এবং তার মধ্যস্থ
সকল অনুগ্রহরাজি আমার“নূর” হতে;
সপ্তআকাশের ফিরিশতাকূল আমার“নূর” হতে;
রবি-শশী-তারকারজি আমার
“নূর” হতে; জ্ঞান এবং
যোগ্যতা আমার“নূর” হতে;
নবি-রাসুল (আলাইহিমুস সালাম)
গণের রুহ আমার “নূর”
হতে; শহিদ, সৌভাগ্যশালী, এবং
সৎকর্মশীল বান্দাগণ আমার “নূর”র
ফলে সৃষ্টি। আল্লাহ
তা’য়ালা এরপর বার
হাজার পর্দা সৃষ্টি করেন। অতঃপর
আল্লাহ তা’য়ালা আমার
“নূর”কে প্রত্যেক পর্দার
স্তরে এক হাজার বৎসর
করে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। আর
এটি ছিল চতুর্থ ভাগ। আর
এটা হল উপসনার, প্রশান্তি
অর্জনের, ধৈর্য্য ধারণের, মহাসত্য ও নিশ্চিত জ্ঞানার্জনের
স্তরসমূহ। তৎপর
আল্লাহ তা’য়ালা ঐ
“নূর” মুবারককে প্রত্যেক পর্দার ভিতরে এক
হাজার বৎসর করে ছুপিয়ে
রাখলেন। যখন
আল্লাহ তা’য়ালা পর্দাসমূহ
হতে ঐ “নূর” মুবারক
বের করলেন এবং তাঁকে
জমিনে রাখলেন তখন এর
আলোকে (ভূতলের) পূর্ব-পশ্চিম প্রান্ত
এমন ভাবে আলোকিত হল-
যে ভাবে অন্ধকার রাত্রিকে
প্রদীপ আলোকিত করে।
এরপর আল্লাহ তা’য়ালা
ভূমি হতে হযরত আদম
(আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি
করে তাঁর কপাল মুবারকে
ঐ “নূর” মুবারক স্থাপন
করলেন। এরপর
তা হযরত শীশ (আলাইহিস
সালাম) এর নিকট স্থানান্তারিত
হল। এভাবে
পূতঃ-পবিত্র বংশধারায় স্থানান্তরিত
হতে হতে আল্লাহ তা’য়ালা এই “নূর”
মুবারককে হযরত আব্দুল্লাহ বিন
আব্দুল মুত্তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) এর পীঠ মুবারক
পর্যন্ত পৌঁছান। আর
বাবা আব্দুল্লাহ হতে মা আমিনা
বিনতে ওহাব (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)
এর পবিত্র গর্ভাশয়ে স্থানান্তারিত
হল। অতঃপর
পৃথিবীতে আমাকে (মা আমিনার
গর্ভ হতে) বের করলেন
(শুভ জন্ম হল) এবং
তিনি (আল্লাহ তা’য়ালা)
আমাকে রাসুলগণের সর্দার, সর্বশেষ নবি, জগৎসমূহের রহমত
এবং উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী লোকগণের সর্দার করলেন।
হে জাবির! আর এভাবেই
তোমার নবীর সৃষ্টি সূচনা
ছিল”।
‘হাদীসে
নূর’ বর্ণনাকরীগণের মর্যাদা ও হাদীস বিজ্ঞানে
তাঁদের অবস্থান:
নি¤েœ ‘আল-মুসান্নাফ’
এ বর্ণিত দুই ‘হাদীসে
নূর’ বর্ণনাকারীগণের সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করা
হল।
* ১৮ নং ‘হাদীসে নূর’
যা অত্র প্রবন্ধে এবারত
সহ অনূদিত হয়েছে তার
তিনজন রাবীর আলোচানা:
১. আব্দুর রাজ্জাক: তিনি
হলেনÑ আবু বকর আব্দুর
রাজ্জাক আস-সানআনী।
বর্তমান ইয়ামেনের রাজধানী সানাআতে তাঁর জন্ম।
বংশধারা- আব্দুর রাজ্জাক বিন
হুমাম বিন নাফি’ আস-সানআনী তিনি বিশিষ্ট
হাফিজে হাদীস ও বহু
মূল্যবান গ্রন্থের প্রণেতা। মা’মার বিন
রাশিদ (৯৫-১৫৩হি.), ওবাইদুল্লাহ
বিন ওমর (ওফাত-৩৭হি.),
সওর বিন ইয়াজিদ (ওফাত-১৫৩হি.), ইমাম আওজায়ী (৮৮-১৫৭হি./৭০৭-৭৭৪খ্রি.)
ও সুফিয়ান সওরী (৯৭-১৬১হি.)
সহ অনেক ইমাম হতে
হাদীস বর্ণনা করেন।
তাঁর থেকে- ইমাম আহমদ
বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১হি.), ইসহাক
বিন রাহওয়াই (১৬১-২৩৮হি.), ইয়াহইয়া
ইবনে মুঈন (১৫৮-২৩৩হি.),
ইমাম যুহাইলী, আহমদ বিন সালিহ
(১৭০-২৪৮হি.), ইমাম ইবরাহীম ইবনে
বাশ্শার আর-রিমাদী (ওফাত-২৩৪হি.) এবং ইসহাক বিন
ইবরাহীম সহ অসংখ্য মুহাদ্দিস
হাদীস বর্ণনা করেন।
তিনি বলতেন, ‘আমি মা’মার
বিন রাশিদ (৯৫-১৫৩হি.)
এর পাঠদান মজলিসে দীর্ঘ
সাত বছর অতিবাহিত করেছি’। ইমাম
আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন,
‘আব্দুর রাজ্জাকের নিকট মা’মার
এর অনেক হাদীস মুখস্ত
ছিল’। ইমাম
যাহাবী বলেন, ‘আইম্মায়ে কেরাম
তাঁকে সিকাহ সাব্যস্থ করেছেন’। ইমাম
বুখারী বলেন, ‘ইমাম আব্দুর
রাজ্জাক মা’মার হতে
তাঁর কিতাবে (আল-মুসান্নাফে) যে
সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন
তা সবই বিশুদ্ধ’। মুহাম্মদ
ইবনে সা’দ (১৬৮-২৩০হি./৭৮৪-৮৪৫খ্রি.)
বলেন, তিনি ২১১ হিজরী
শাওয়াল মাসের মাঝামাঝি সময়
৮৫ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল
করেন। ‘সিহাস
সিত্তা’ গ্রন্থ সমূহে তাঁর
সূত্রে বর্ণিত অনেক হাদীস
বিদ্যমান।
০২. মা’মার বিন
রাশিদ: তিনি হলেন মা’মার বিন রাশিদ
আল-আজদি, আবু আরওয়া
বিন আবী আমর আল-বাসরী। তিনি
ইয়ামানের অধিবাসী। তিনি
হযরত হাসান বাসরী রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি (২১-১১০হি.) এর
জানাযায় অংশ নেন।
তিনি হযরত সাবিত আল-বুনানী (ওফাত-১২৭হি.), কাতাদাহ
বিন দিয়ামাহ (৬১-১১৮হি.), মুহাম্মদ
ইবনি শিহাব আয-যুহুরী
(৫৮-১২৪হি.), আসিম আল-আহওয়াল
(ওফাত- ১৪০হি.), যায়িদ বিন আসলাম
(ওফাত-১৩৬হি.), আমর বিন দীনার
(৪৫/৪৬-১২৬হি.), যিয়াদ
বিন আলাকা (ওফাত- ১২৫হি.),
ইয়াহইয়া বিন আবী কাসীর
(ওফাত-১২৯হি./১৩২হি.), মুহাম্মদ
বিন যিয়াদ জাহামী (ওফাত-
১১৫হি.) এবং মুহাম্মদ ইবনুল
মুনকাদির (ওফাত- ১৩০হি.) রাহমাতুল্লাহি
আলাইহিম প্রমূখ থেকে হাদীস
বর্ণনা করেন। তাঁর
উল্লেখ যোগ্য ছাত্র হলেনÑ
সুফিয়ান সওরী (৯৭-১৬১হি.),
সুফিয়ান বিন ওয়াইনা (১০৭-১৯৮হি.), আব্দুল্লাহ বিন মুবারক (১১৮-১৮১হি.), গুনদার (১১০-১৯৩হি.) ও
আব্দুর রাজ্জাক এবং ইবনে উলাইয়া
(১১০-১৯৩হি.) সহ অসংখ্য ছাত্র
হাদীস বর্ণনা করেন। আব্দুর
রাজ্জাক বলেনÑ ‘আমি মা’মার থেকে ১০
হাজার হাদীস লিখেছি’।
সিহাহ সিত্তাহ সহ অন্য সকল
বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে তার
অনেক বর্ণনা রয়েছে।
তিনি বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ও ভদ্র বর্ণনাকারী
ছিলেন। তিনি
১৫৩/১৫৪ হিজরিতে রমজান
মাসে ইন্তেকাল করেন।
০৩. ইবনুল মুনকাদির: তিনি
হলেন, আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ
ইবনুল মুনকাদির বিন আব্দিল্লাহ বিন
হুদাইর বিন আব্দিল উয্যা
বিন আমির ইবনুল হারিস
বিন হারিসা বিন সা’দ বিন তাইম
বিন র্মুরাহ বিন কা’ব
বিন লুই বিন গালিব
আত-তায়মী আল-ক্বরসী
আল-মাদানী। উপনাম:
আবু বকর। তাঁর মা উম্মে
ওয়ালাদ ছিলেন। চুলে
মেহেদী ব্যবহারের কারণে তাঁর মাথার
চুল ও দাঁড়ীসমূহ হলুদ
হয়ে গিয়ে ছিল। তিনি
সাহাবীদের মধ্য হতে হযরত
জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ (ওফাত-৭৮/৭৯হি.), আব্দুল্লাহ
ইবনু জুবাইর (০১-৭২হি.), আবু
হুরাইরা (ওফাত-৫৭/৫৮/৫৯হি.), আবু আইয়ুব আনসারী
(ওফাত-৫০/৫১হি.), রবিয়াহ
বিন উব্বাদ (ওফাত- ৯৫হি.), সফিনাহ
মাওলা রাসূলিল্লাহ, আবু কাতাদাহ (ওফাত-৬০হি.), আবু উমামাহ (ওফাত-৮৬হি.) উমাইমা বিনতে
রক্বিকাহ , মসউদ ইবনুল হিকম
(ওফাত- ৯০হি.), আনাস বিন মালিক
(ওফাত-৯০/৯১/৯২হি.),
ইউসুফ বিন আব্দিল্লাহ, আব্দুল্লাহ
ইবনু উমার (৬১০/১১খ্রি.-৭৪/৮৪হি.) ও
আয়িশা সিদ্দীকা (৬১৩/১৪খৃ.-৫৭/৫৮হি.) রাদিয়াল্লাহু আনহুম
থেকে এবং তাবিয়ীগণের মধ্য
হতে সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব
(ওফাত- ৯৪হি.), উবাইদুল্লাহ বিন আবী রাফেঈ,
উরওয়াহ বিন জুবাইর (ওফাত-
৯৪হি.), মুয়ায বিন আব্দির
রহমান, সাঈদ বিন আব্দির
রহমান সহ একদল হতে
হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তাঁর থেকে- তাঁর পুত্র
মুনকাদির (ওফাত- ১৮০হি.), মালিক
ইবনু আনাস, শুবাহ (৮২-১৬০হি.), মা’মার বিন
রাশিদ (৯৫-১৫৩হি.), রুহ
বিন কাসিম, সুফিয়ান বিন
উয়াইনাহ (১০৭-১৯৮হি.), সুফিয়ান
সাওরী (৯৭-১৬১হি.) সহ
এক দল হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তিনি
অত্যন্ত খোদাভীরু ছিলেন। তাঁর
সামনে কেউ হাদীস বর্ণনা
করলে তিনি কেঁদে দিতেন। হুমাইদী
বলেন, ‘তিনি হাফিজে হাদীস
ছিলেন’। ইমাম
মালিক বলেন, ‘তিনি ক্বারীগণের
সর্দার ছিলেন’। ইমাম
যাহাবী বলেন, তার মধ্যে
বিশ্বস্ততার সকল গুণাবলীর সমাবেশ
ঘটেছিল।
সুফিয়ান ইবনু উয়াইনাহ বলেন,
‘মুহাম্মদ ইবনু মুনকাদির সত্যের
আকর ছিলেন। পূণ্যবানগণ
তাঁর দরবারে সমবেত হতেন’।
তিনি উমাইয়্যাহ খলিফা মারওয়ান বিন
মুহাম্মদের শাসনামলে ১৩০হি . মতান্তরে ১৩১হিজরীতে ৭৬
বছর বয়সে
ইন্তেকাল করেন।
০৪. জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ:
তিনি হলেনÑ খাদিমুর রাসূল
জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ আনসারী। উপনাম:
আবু আব্দুল্লাহ, আবু আব্দুর রহমান। তাঁর
পিতার নাম: আব্দুল্লাহ, মাতার
নাম: উনাইসা বিনতে ওকবা। দাদার
নাম: আমর, দাদীর নাম:
হিনদা বিনতে কাইস। তাঁর
বংশধারাÑ জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ
ইবনু আমর ইবনু হারাম
ইবনু আমর ইবনু সুয়াদ
ইবনু সালমা আস-সুলামী
আল-আনসারী আল-মাদানী। তিনি
বদরী সাহাবী ছিলেন।
পিতা-পুত্র উভয়ে প্রথম
‘বায়াতে আক্বাবায়’ উপস্থিত ছিলেন। সবার্ধিক হাদীসবর্ণনাকারী সাহাবীগণের মধ্যে তাঁর স্থান
৬ষ্ঠ তম। তাঁর
বর্ণিত হাদীস সংখ্যা- ১৫৪০;
মুত্তাফাক আলাইহি- ০৬, একক ভাবে
বুখারীতে- ২৬ ও মুসলিমে-
২৬ টি হাদীস শরীফ
বর্ণিত হয়েছে। জাবির
বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আমার জন্য পঁচিশবার
ইস্তেগফার করেছেন, আর এর প্রত্যেকটি
আমি হাত দ্বারা গণনা
করেছি’।
তিনি শেষ বয়সে অন্ধ
হয়ে যান। ৭৮/৭৯ হিজরীতে তিনি
ইন্তেকাল করেন। মদিনার
গর্ভনর আবান বিন ওসমান
তাঁর জানাযার ইমামতি করেন এবং
তাঁকে জান্নাতুল বাক্বী শরীফে দাফন
করা হয়।
* ০১ নং হাদিসের অবশিষ্ট
দুই রাবীর আলোচনা:
০১.ইবনু শিহাব আয-যুহুরী: তিনি হলেনÑ আল-
হাফিজ, আল-ফক্বীহ মুহাম্মদ
বিন মুসলিম বিন ওবাইদুল্লাহ
বিন আব্দুল্লাহ বিন শিহাব আল-ক্বরসী আয-যুহুরী
আবু বকর আল-মাদানী। ৫০
হিজরীতে জন্ম। নির্ভর
যোগ্যতা এবং বুযুর্গীর ক্ষেত্রে
তিনি সর্বজন বিধিত।
অন্যতম জগৎ বিখ্যাত হিজাজী
ও সিরিয় ইমাম।
ইতিহাসে তিনি ইবনে শিহাব
যুহুরী নামে সুপ্রসিদ্ধ।
তিনি প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ
বিন ওমর, আব্দুল্লাহ বিন
জাফর, আনাস বিন মালিক,
জাবির বিন আব্দুল্লাহ এবং
বিখ্যাত তা’বিয়ী হযরত
সায়িব বিন ইয়াযিদ, সাঈদ
বিন মুসায়্যিব, সুলাইমান বিন ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু
আনহুম সহ তা’বিয়ীগণের
বিশাল এক দল হতে
হাদীস বর্ণনা করেন।
তিনি ১২৪/১২৫ হিজরীতে
সিরিয়ার শাগবাদা গ্রামে ইন্তেকাল করেন।
০২. সায়িব ইবনি ইয়াযীদ:
তিনি হলেনÑ সাহাবীয়ে রাসুল,
হযরত আবু ইয়াজিদ সায়িব
ইবনি ইয়াযীদ বিন সাঈদ
ইবনি সুমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। কেউ
কেউ বলেন- আয়ীজ বিন
আসওয়াদ আল-কিন্দী বা
আযদী। তিনি
‘ইবনি উখতিন নামীর’ নামে
সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন। বিদায়
হজ্বে তিনি তাঁর পিতার
সাথে উপস্থিত ছিলেন। তিনি
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,
তাঁর পিতা, হযরত ওমর,
ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম সহ অন্যান্য
সাহাবী হতে হাদীস বর্ণনা
করেন। ইমাম
বুখারী তাঁর হতে ৫টি
হাদীস বর্ণনা করেন।
তিনি তাঁর খালার সাথে
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর দরবারে ব্যাথা নিয়ে
যান। রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তার মাথা মসেহ করে
দেন এবং তার বরকতের
জন্য দো’য়া করেন। তিনি
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর মোহরে নবুয়াত দেখার
ও অযুর পানি পানের
সৌভাগ্য লাভ করেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স
ছিল ৮ বৎসর।
ইমাম বাগবী তাঁর মাওলা
আতার সুত্রে বর্ণনা করেন-
তাঁর সামনের চুলগুলো কালো
এবং সমস্ত মাথা সাদা
দেখে আমি বল্লাম, আমি
আপনার চুল হতে অধিক
আশ্চর্যজনক কিছু দেখিনি।
প্রতিত্তুরে তিনি বলেন, তুমি
কি জান না এটা
কেন? শিশুকালে খেলারত অবস্থায় রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার
সময় তাঁর হাত মোবারক
দিয়ে আমার মাথায় মসেহ
করে দেন এবং বরকতের
দো’য়া করেন।
এজন্য তা কখনও সাদা
হবে না। তাঁর
মাতার নাম: উম্মে আ’লা বিনতি শুরাই
আল-হাদরামী। আর
আ’লা ইবনি হাদরামী
তার খালু ছিলেন।
তিনি ৮০/৮২ হিজরী
মতান্তরে ৯০ হিজরীর পরে
৮৯ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল
করেন।
উপসংহার:
সম্মানিত পাঠক সুধী, ‘হাদীসে
নূর’, এর বর্ণকারীদের সংক্ষিপ্ত
তথ্য সমৃদ্ধ পরিচিতি, ইমাম
আব্দুর রাজ্জাক (র.) এবং তাঁর
‘আল-মুসান্নাফ’ গ্রন্থ নিয়ে অত্র
প্রবন্ধ বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের সুদীর্ঘ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আপনাদের সাম্যক ধারণা দিয়েছে। মনে
কোন প্রশ্নের উদ্রেক বা ভয়
সঞ্চার ঘটিয়েছে কি না জানিনা;
তবে আমি শংকিত নই। কারণ,
ঈমানদারের ‘রাসূল’ নিয়ে শয়তান
বা তার মুরীদদের তো
মাথা ব্যাথা থাকবেই।
তাদের ষড়যন্ত্র-মিথ্যাচার আমাদের ঈমানকে তরু-তাজা করার মাধ্যম
বৈ কিছুুই নয়।
আর রাসূূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আল্লাহর সৃষ্ট সর্বপ্রথম “নুর”
এই ঈমানের আলোটি নাপাক
চোর কখনো নিভাতে বা
বিস্মৃত করতে পারবে না।
কবি আশরাফ আল দীন
তার ‘পদ¥াÑমেঘনা
পাড়ে’ কবিতায় কতই সুন্দর
বলেছেনÑ
“রাসূলে
খোদার ‘নূর’ Ñ
আওয়াজের মত ছড়িয়ে পড়েছে,
দিকে দিকে বহুদূর Ñ
আলোর গতি থামে
কি কখনো ? প্রবাহ যে
তার প্রাণ!
ইরান, তুরান, গ্রানাডায়
এলো, আলোর ঐকতান ;
সে আলোর রেখা
বেগে ছুটে এলো, ভারতের
দিকে শেষে
কাতার বন্দী খোদার বান্দা,
দাঁড়ালো বাংলাদেশে।
রাসূলে খোদার নূরে Ñ
সকাল সন্ধ্যা হাসে
যে এদেশ, গজলের সুরে
সুরে”।।
এই সকল রাসূল নাাস্তিকরা
বুঝে কি না জানি
না তাদের সকল অপচেষ্ট
বিফল হয়েছে, হচ্ছে, হবেও। কেননা,
এই তো আল্লাহর “নূর”
আর একে বুঝাতে কারো
সাধ্য নেই। কোন
এক উর্দ্দু কবি পবিত্র কুরআনের
সূূরা ‘আস-সাফ’ এর
০৮ নং আয়াতের কত
সুন্দরই কাব্যানুবাদ করেছেন-
نور خدا ہے کفر
کی حرکت پہ خندہ
زن * پہونکوں سے يہ
چراغ بہجايا نہ جائيگا-
‘আল্লাহর
নূর হাসছে দেখ, কাফিরের
আচরণে-
বুঝবেনা
এই মহান বাতি, তাদের
ফুঁক দানে’।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন