বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

eid -e- milad-un nabi | জশনে জুলুস ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’য়ালার জন্য যিনি প্রিয় হাবীবের ‘মিলাদ’ তথা শুভাগমনের মাধ্যমে নবুয়তের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। অসংখ্য দুরূদ ও সালাম সেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লামমের উপর যার পবিত্র মিলাদ এর বার্তাবাহক ছিলেন হযরত বাবা আদম আলাইহিস সালাম থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল।
মানবতার কান্ডারী, মুক্তির দিশারী রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২ই রবিউল আওয়াল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে সোমবার সোবহে সাদিকের সময় দুনিয়ায় শুভ আগমন করেন।
সত্যের মাপকাঠি সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিশুদ্ধরূপে বর্ণিত হয়েছে যে, ১২ই রবিউল আওয়াল শরীফ প্রিয় নবী হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর পবিত্র শুভ আগমনের দিন। যেমন, হাফেজ আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ্ (ওফাত ২৩৫ হিজরী) সহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন,
عن جابر وابن عباس انهما قالا ولد رسول الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول-
অর্থ: হযরত জাবের ও হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর বেলাদত শরীফ ঐতিহাসিক ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের’ (যে বছর আবরাহা তার হস্তিবাহিনী নিয়ে কা’বা শরীফ ধ্বংস করতে এসে নিজে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল)। [১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার হয়েছিল লুগুল আমান ফী শরহি ফাতহির রব্বানী, খ- ২, পৃষ্ঠা-১৮৯, বৈরুত; আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া, খ- ২, পৃষ্ঠা ১৮৯, বৈরুত]
যুগে যুগে সারা বিশ্বের ঈমানদার মুসলমানগণ শরীয়ত সম্মত উপায়ে মিলাদুন্নবী দিবসে জশ্নে জুলূস ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করে আসছে। এই জুলূস ঈমানদারদের ঈমানী খোরাক। কোরআন ও হাদীসের আলোকে এর দলিল ও ফজিলত আলোকপাত করা হলো।
জশ্নে জুলূস অর্থ ঃ
আরবীতে ‘জশন’ শব্দের অর্থ খুশি বা আনন্দ (লুগাতে কিশওয়ারী) ‘জুলূস’ শব্দটি ‘জলসা’ শব্দের বহুবচন এর অর্থ হলো বসা বা উপবেশন। আর ফার্সিতেÑ ‘জশন’ শব্দের অর্থ উৎসব, রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং ‘জুলূস’ শব্দের অর্থ হল আড়ম্বর, মিছিল করা। (ফরহাঙ্গ-ই-রাব্বানী)
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থ ঃ
প্রচলিত অর্থে ঈদ মানে খুশি। মিলাদ (ميلاد) অর্থ জন্মকাল বা জন্মের সময়। মাওলিদ (مولد) শব্দটিও অভিন্ন অর্থ বুঝায়। সেই হিসেবে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী অর্থ নবীর জন্মকালের খুশি, পৃথিবীতে তাঁর শুভাগমনকে উপলক্ষ করে বৈধ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করা।
জশ্নে জুলুস ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লাম উদ্যাপন করা একটি বৈধ ও পূণ্যময় আমল ঃ
হাদিস শরীফে আছে, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلامِ سُنَّةً حَسَنَةً ، فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ ، وَمَنْ سَنَّ فِي الإِسْلامِ سُنَّةً سَيِّئَةً فَلَهُ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْ
অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে ভাল তরিকা প্রচলন করল সে নিজের নেকী, তৎপরে যারা তদানুযায়ী আমল করল তাদের নেকী সে প্রাপ্ত হবে। তাদের নেকী হতে কিছু পরিমাণ কম করা হবে না। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত- ৩৩, বায়হাকী ১/৩৮৪)
মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি‘র ১৪৪ পৃষ্ঠায় একটি মারফু হাদিস উদ্ধৃত আছে :
لقد روى عن النبى صلى الله عليه وسلم ما راه المؤمنون حسنا فهو عند الله حسن وما رواه المؤمنون قببيحا فهو عند الله قبيح-
অর্থ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করা হয়েছে। (তিনি বলেছেন) মুমিনগণ যে কাজকে ভাল বিবেচনা করে তা আল্লাহর নিকট ভাল আর মুমিনগণ যে কাজকে মন্দ বিবেচনা করে, তা আল্লাহর নিকট মন্দ। (বুখারী ১/২৬৯ পৃষ্ঠার হাশিয়া-৬)
পবিত্র কুরআনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঃ
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (৫৮)
(১) হে হাবিব! আপনি বলুন, আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দিয়া, এবংসেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ। যা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়(সূরাঃইউনুস, আয়াতঃ৫৮)।
(২) عن ابن عباس رضي الله عنهما في الآية قال : فضل الله العلم
،ورحمته النبي صلى الله عليه وآله وسلم ، وفي الدر المنثور للحافظ السيوطي (৪/৩৬৭)
অত্র আয়াতের তাফসীর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ)দ্বারা“ইলম বা কোরআন” আর তাঁর দয়া (রাহমাতিহী) দ্বারা “হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে”বুঝানো হয়েছে। (সূরাঃআম্বিয়া, আয়াতঃ ১০৭, তাফসীরে আদ্-দুররুল মানসুর, ৪র্থ খ-, পৃঃ ৩৬৭, তাফসীরে নাঈমী-১১তম খ- পৃ-৩৬৮, তাফসীরে নূরুল ইরফান পৃঃ ৫৬১, তাফসীরে রূহুল মা’আনী ১০ম খ-, পৃঃ ১৪১, তাফসীরে কবীর ১৭ তম খ-, পৃঃ ১৩২)
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ (১০৭)
অর্থ: আর আমি আপনাকে (হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জগতসমূহের প্রতি কেবল রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি। (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াত-১০৭, ২১নং সুরা, ১৭ পারা)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا (১৭)
অর্থ: হে মানবকুল! নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর নিকট থেকে সুস্পষ্টপ্রমাণ (রাসূল) এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি উজ্জল আলো অবতীর্ণ করেছি। (সূরাঃ নিসা, আয়াত-১৭৫, ৪নং সুরা ৫নং পারা)
(৪) { قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ } رسول يعني محمداً { وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
অর্থ: (নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা ‘নূর’ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং স্পষ্ট কিতাব (কুরআন) এসেছে, নূর দ্বারা “হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ”বুঝানো হয়েছে। (সূরাঃ মায়িদা, আয়াত-১৫, ৫নং সুরা, ৬ পারা, তাফসীরে জালালাইন-পৃ:৯৭, তাফসীরে কবীর-খ-:৩য়, পৃ-৩৮৬, তাফসীরে খাজেন, খ--১ম, পৃ-৪৪৪, তাফসীরে মাদারিক খ- ১ম, পৃ-৪১, তাফসীরে রুহুল মা’আনী-খ- ৪র্থ, পৃ-৫৭, তাফসীরে বায়দ্বাবী খ--৩য়, পৃ-৩৯৮, তাফসীরে কুরতুবী খ--৩য়, পৃ-৪৮৫, তাফসীরে রুহুল বায়ান খ--৩য়, পৃ-২৭০)
(৫)هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ (৩৩)
তিনিই হন, যিনি আপন রাসূলকে পথ-নির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেন। (সূরাঃ তাওবা, আয়াত-৩৩, ৯নং সুরা, ১০ পারা)
عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ (১২৮))لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا
অর্থনিশ্চয় তোমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করেছেন তোমাদের মধ্যেথেকে ঐ রাসূল, যাঁর নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক, তোমাদের কল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুসলমানদের উপর পূর্ণ দয়ার্দ্র, দয়াময়। (সূরা-তাওবা, আয়াত-১২৮, ৯নং সুরা, ১১ পারা)
(৭) وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُبِينٌ (৬
এবং স্মরণ করুন ! যখন মারিয়াম-তনয় ঈসা বললো, ‘হে বনী ইস্রাঈল! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহরই রাসূল;আমার পূর্বেকার কিতাব সত্যায়নকারী এবং সম্মানীত রাসূলের সুসংবাদদাতা হয়ে, যিনি আমার পরে তাশরীফ আনবেন, তাঁর নাম হবে ‘আহমদ’। (সূরাঃ সাফ্ফ, আয়াত-৬, ৬১নং সুরা ২৮ পারা)
(৮) لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (১৬৪)
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদেরই মধ্যে থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং তাদেরকে পবিত্র করেন। এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন এবং তারা নিশ্চয় এর পূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল (সূরাঃ আল্ ইমরান, আয়াত-১৬৪, ৩নং সুরা ৪ পারা)।
সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে কারীমাতে কোনটিতে প্রত্যক্ষভাবে আবার কোনটিতে পরোক্ষভাবে নবীজির মিলাদের কথা বলা হয়েছে।
পবিত্র হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঃ
- أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ الْفَضْلِ الْقَطَّانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ، وَالْحَجَّاجُ، قَالَا: حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا غَيْلَانُ بْنُ جَرِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ صَوْمُ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ ؟ قَالَ: " فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ الْقُرْآنُ " أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ
অর্থ: হযরত আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সোমবারে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিঁনি ইরশাদ করেন-সোমবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং সোমবারই আমার প্রতি ওহী নাজিল করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ ১ম খ-, পৃঃ৩৬৮হাদীছ নং১৯৭৭, মুসনাদে ইমাম আহমদ, খ--৫ম, পৃ-২৮৭ হা.নং২১৫০৮, মিশকাত পৃঃ১৭৯, বায়হাকী শরীফ, খ- ১ম, পৃ-৭২, মেরকাত শরহে মিশকাত, খ--৪র্থ, পৃ-২৯১, সুনালুল কোবরা, খ--৪র্থ, পৃ-২৯৩)।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শুভ বেলাদতের বর্ণনা দিতে গিয়ে আরো বলেন- অর্থ
৩৫৫৭ - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَمْرٍو عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِي آدَمَ قَرْنًا فَقَرْنًا حَتَّى كُنْتُ مِنْ الْقَرْنِ الَّذِي كُنْتُ فِيهِ
নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামÑএর আওলাদ হতে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নির্বাচন করেছেন এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম হতে কেনানাহকে নির্বাচন করেছেন এবং কেনানার বংশ হতে কুরাইশ, কুরাইশের বংশ হতে হাশেমকে নির্বাচন করেছেন আর আমাকে হাশেমের আওলাদ হতে নির্বাচন করেছেন। (মুসলিম শরীফ ১ম খ-, পৃষ্ঠা ২৪৫; তিরমিযি শরীফ ২য় খ- ২০১ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৩৬০৫; মসনদে আহমদ, হাদীস নং ১৭০২৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ১১/৪৭৮, হদীস নং ৩২৩৮৯, মেশকাত শরীফ ৫১১ পৃষ্ঠা)
এছাড়া হযরত ইমাম তিরমিযি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত জামে তিরমিযি শরীফের ২য় খ-, ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম দিয়েছেন :
بَابُ مَا جَاءَ فى مْيلَادُ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ
তিরমিজী শরীফে ২য় খ- ২০৪ পৃষ্ঠা মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরতমুত্তালিব বিন আব্দুসাল্লামহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন-এতদসত্ত্বেও কি প্রমাণিত হয়নি যে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং করেছেন এবং তা করতে উম্মতদেরকে নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন যা হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
পবিত্র রবিউল আউওয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার সুবহে সাদিকের সময় সৃষ্টির মূল তথা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুনিয়াতে শুভাগমন করেছেন। প্রিয় নবীজির শুভাগমনের আলোচনা তিঁনি নিজেই সাহবায়ে কিরামের সাথে বর্ণনা করতেন। বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী খ--২য়, পৃ-২০২, মিশকাত শরীফ পৃ-৫১৩ সহ অসংখ্য বিশুদ্ব হাদিস গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।
খোলাফায়ে রাশেদীনের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঃ
১। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন
হাফেজ ইবনে হাজর আল হাইতুমী রহমাতুসাল্লামহি আলাইহি (৯৭৪ হিজরী) তাঁর বিখ্যাত কিতাব আল নে‘মাতুল কুবরা আলাল আলামীন’ শরীফের ৭-৮ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
قَالَ اَبُوْ َبكَرِ الْصِدِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِى فَىْ الْجَنَّةِ-
অর্থ: ইসলামের প্রথম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম খলিফা সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনে একটি দেরহামও ব্যয় করবে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (জাওয়াহিরুল বিহার- ৩/৩৫০ পৃষ্ঠা)
২। হযরত ওমর ফারুকে আযম রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু কর্তৃক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
قََالَ عُمَرَابْنِ الْخِطَّابٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْىِ اَلْاِسْلِامَ-
অর্থ: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে উদযাপন করল, সে যেন ইসলামকে পুনঃর্জীবিত করল।
৩। হযরত উসমান গণি রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
قال عثمان رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَاَلِهِ وَسَلَّمَ فَكَاَنَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرِ وَحُنَيْنٍ-
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি দেরহামও ব্যয় করবে, সে যেন বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করল।
৪। হযরত শে‘রে খোদা আলী রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাল-
مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبِبًا لِقِرْاَتِهِ لَايَخْرُجُ مِنْ الدُّيْنَا اِلَّا بِالْاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةِ بِغَيْرِ حِسَابِ -
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে, সে যেন উহা উদযাপনের মাধ্যম হল, সে পৃথিবী হতে ঈমানের সাথে প্রস্থান করবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

eid -e- milad-un nabi | abul asad jobayer rezvi | waz | bangla waz


বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

eid -e- milad-un nabi | দেশে দেশে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)


পবিত্র মাহে রবিউল আউয়ালে শুধু আমাদের দেশে নয় দুনিয়ার দেশে দেশে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ইতিহাস ও সিরাতগ্রন্থ বিশেষত মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর পূর্ববর্তী বরেণ্য বুযুর্গদের লিখিত কিতাবাদী তার জ্বলন্ত প্রমাণ। যেমন আল্লামা মুসাল্লাম আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার উস্তাদ হাফীযুল হাদীস ইমান শামসুদ্দীন সাখাভী (১৪২৮-১৪৯৭ খৃ./৮৩১-৯০২ হিজরী) রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উক্তি এভাবে উল্লেখ করেন- মুসলিম জাহানের দিকে দিকে বড় বড় শহরে নগরে বড় বড় শহরে নগরে ব্যাপকভাবে হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাসাল্লামমের জন্ম মাসে মুসলমানগণ অপূর্ব ধরণের খাবার পরিবেশনসহ মিলাদ অনুষ্ঠান করে আসছেন। এই রাতে (মিলাদের রাতে) নানাবিধ সাদকা খয়রাত করেন। আনন্দ ও উল্লাস প্রকাশ এবং অন্যন্ত গুরুত্ব ও মনোযোগের সহিত মিলাদ শরীফ পাঠ করেন। মাওরিদুর রাবী ফি মাওলিদিনন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২৮ পৃষ্ঠা। বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কুস্তালানী (১৪৪৮-১৫১৭ খৃ./৮১৫-৯২৩ হিজরী) রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ও শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (১৫৫১-১৬৪২ খৃ//৯৫৮-১০৫২ হিজরী) (রাঃ) এ বিষয়ে প্রায় অনুরূপ লিখেছেন।
মুফতি এনায়ত আহমদ কারওরী (৮১৩ খৃ./ ২২৮হিজরী) লিখেনমুক্কা ও মদীনা শরীফ এবং অধিকাংশ ইসলামী শহরে প্রচলন হলো রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করা। মুসলমানদেরকে জমায়েত করে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের আলোচনা ও দুরূদ শরীফ বেশি বেশি করে পড়া, দাওয়াতীখানা অথবা শিরণী বিতরণ করা।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম শামসুদ্দীন সাখাভী (রাঃ) (১৪২৮-১৪৯৭ খৃঃ/৮৩১-৯০২ হিজরী) বলেন-মক্কা মোকাররামায় কয়েক বছর ধরে মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠানে শরীক হওয়র এবং তার বরকত অনুধাবন করার সৌভাগ্য যারা অর্জন করেছিলেন, আমিও তাদের একজন। হাফিজুল হাদীস ইমাম আবুল ফয়েজ আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী (১১১৬-১২০১ খৃঃ/ ৫১০-৫৭৯ হিজরী)
হারামাইন শরীফ, মিশর, ইয়ামন, সিরিয়া এবং থেকে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা হুযূরে পাকের মিলাদ অনুষ্ঠান করেন। রবিউল আউয়ালের নতুন চাঁদের আগমনে উল্লসিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান রবিউল আউয়ালের এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, হাতের সম্পদ টাকা পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মিলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক সওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন (আদ্দুররুল মুনাজ্জাম ১৩৬ পৃষ্ঠা)
নিুে আমি এর দু’একটি উদাহরণ পেশ করছি, যা বিষয়টি অনুধাবনে সহায়তা করবে
মক্কা ও মদীনা শরীফে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঃ
মিলাদুন্নবী সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণকারী বর্তমান সৌদি সরকার ও তার মদদপুষ্ট আলিমদের প্রভাবে যদিও আজকাল মক্কা ও মদিনা তথা হারামাইন শরীফাইনে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠিত হয় না বা এরকম অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া হয় কিন্তু আগেরকার যুগে প্রতি বছর হারামাইন শরীফাইনে অতি আড়ম্বর ও উৎসাহ উদ্দীপনায় মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠিত হত।
শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (১৭৬২ খৃঃ) রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- “ফয়জুল হারামাঈন” পৃষ্ঠা ৮০ কিতাবে বলেন,
وكنت قبل ذلك بمكة المعظمة فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم ولادته والناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم ويذكرون ارهاصاته التى ظهرت فى وقت ولادته ومشاهده قبل بعثته فرأيت انوارا-
আমি একবার হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লাময়েম জন্মের তারিখে মক্কা মোয়াজ্জামার সেই ঘরে উপস্থিত ছিলাম যেখানে হুযূরের শুভ জন্ম হয়েছিল। লোকজন হুযূরের উপর দরূদ পাঠ করছিলেন, হুযূরে পাকের জন্ম সময়কার এবং নবুওয়াত প্রকাশের পূর্বেকার আশ্চর্য ও অলৌকিক ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন। এমনি সময় হঠাৎ দেখতে পেলাম নূর চমকাচ্ছে। আমি বলিনা যে, তা আমার শরীরে চক্ষু দিয়ে দেখেছি আর এও বলব যে, রূহের চক্ষু দিয়ে দেখেছি। আল্লাহ ই জানেন, এ দু’য়ের মাঝা-মাঝি কেমন একটা অবস্থা ছিল। আমি এ নূর গুলোর মধ্যে ধ্যান করতে বুঝতে পারলাম ইহা সে সমস্ত ফিরিশতার নূর যারা এ ধরনের মজলিসে উপস্থিত হয়ে থাকেন- (ফুইউজুল হারামাইন-৮০পৃষ্ঠা)।
হযরত আব্দুল গণি মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুসাল্লামহ আলাইহি-এর পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারায় মিলাদ শরীফে শরীক হওয়ার বর্ণনা তাঁর বিশিষ্ট শাগরিদ শাহ আব্দুল হক এলাহাবাদী এভাবে বর্ণনা করেন- সিফায়ে সায়েল গ্রন্থে শাহ আব্দুল গণি দেহলভী সাহেব লেখেছে –
وحق انست كہ نفسى ذكر ولادت انحصرت صلى الله عليہ وسلم وسرور و فاتحة نمودن يعنى ايصال ثوب فتوح سيد الثقلين ازكمال سعادت انسان است-
অর্থ : সত্য কথা হল, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা ফাতিহা পড়ে তাঁর মহান রুহে সওয়াব রেসানী এবং তাঁর মিলাদ শরীফে আনন্দ করার মধ্যেই রয়েছে মানুষের পূর্ণাঙ্গ সৌভাগ্য। (সেফায়ে সায়েল)
উমদাতুল মুফাস্সিরীন জুবদাতুল মুহাদ্দিসীন জনাব মাওলানা শাহ আব্দুল গণি ছাহেব নকশবন্দী মুজাদ্দিদীকে আমি দেখেছি মদিনায় রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে রবিবার দিনে মসজিদে নববীতে মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠানে তিনি শরীক হন এবং মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় মিম্বরে বসে একের পর এক ইমামগণ রওজা শরীফের দিকে মুখ করে হুযূরে পাকের জন্মের যে আলোচনা করছিলেন তা শুনেন। কিয়ামের সময় সবার সাথে কিয়ামও করেন। এ পবিত্র মাহফিলে হাল ও বরকত যা প্রকাশ পেয়েছিল, তা বলার ভাষা নেই। (আদ্দুররুল মুনাজ্জাম-১৩৮ পৃষ্ঠা)তবে, আজকালও মক্কা-মদিনা তথা সৌদি আরবের কতিপয় বিশিষ্ট উলামাই কিরাম ও বুর্যুগানে দ্বীনের ঘরে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান অতি উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করা হয়। এই সমস্ত মাহফিলে অনেক লোক অংশগ্রহণ করে থাকেন। বিশেষত হজ্জের মৌসুমে অনুষ্ঠিতমাহফিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন।
মিশর ও সিরিয়ায় মিলাদুন্নবী ঃ
মিশর ও সিরিয়ায় মিলাদুন্নবী উদযাপনের বর্ণনায় মুসাল্লাম আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন মিশর ও সিরিয়ায় ৭৮৫ বছর আগ থেকে মুসলমান বাদশাহরা পালল করে আসছিল ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসছিল।অতএব, ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের সাথে জড়িত আছে মুসলিম ইতিহাস ঐতিহ্য। প্রতি বছর ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের মাধ্যমে মুসলিম জাতি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষা ও জীবন ব্যবস্থাকে নিজেদের কর্মজীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্দর করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এ দিন বিশ্ব মুসলিমের জন্য নতুন করে আতিœক পরিশুদ্ধির দিন। শীষাঢালা প্রাচীরের মতো মুসলিম উম্মাহার সংহতি দৃঢ় করার দিন। এ দিনে আমরা এ শপথ নেব যে, নামাজ পরিত্যাগ করবো না, হালাল-হারাম মেনে চলবো, সর্বোপরি নবীজির আদর্শে নিজেদের গড়বো। আসুন, রাসূল প্রেমে অবগাহন করে সাচ্ছা মু’মিন মুসলমানে পরিণত হয়ে দীপ্ত শপথ নিয়ে রাসূলের কাছে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন করি। আমিন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন।
“ব-মুস্তফা ব-রসা খেশ রা কে হামাঁ দ্বীন উস্তআগর বা উ না রসিদি তামাম বু-লাহাবী আস্ত”অর্থঃ তুমি মোস্তফার চরনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিলীন করে দাও। যদি তা না পার তবে তুমি আর আবু লাহাবের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi | জশনে মিলাদুন্নবী (দঃ) এর ফাজায়েল ও উপকারিতা

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)


আল্লামা কুস্তুলানী শরহে বুখারী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি আল্লামা ইবনুল জাযরীর রহ্মাতুল্লাহি আলাইহির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
فااذا كان هذا ابو لهب الكافر الذى نزل القران بذمة جوزى فى النار بفرحة ليلة مولد النبى صلى الله عليه وسلم به فما بال حال المسلم المؤحد من امته عليه السلام الذى يسر بمولده ويبدل ما تصل اليه قدرته فى محبته صلى الله عليه وسلم لعمرى انما يكون جزاؤه من الله الكريم ان يدخله بفضله العميم جنات النعيم-
অর্থ: যেই কাফের আবু লাহাব সম্পর্কে কোরআন মজিদে সরাসরি দোষ বর্ণনা করা হয়েছে (َتَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ) (ধ্বংস হয়েছে আবু লাহাবের দু‘হাত ও সে নিজে) সে একজন কাফের হওয়া সত্ত্বেও ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র রাতে সে জাহান্নামেও শান্তি পাচ্ছে। তাহলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র উম্মতগণ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তে আনন্দ করলে এবং তাঁরই মুহাব্বতে নিজের শক্তি সামর্থ সব কাজে লাগালে সে ফায়দা পাবে না কেন? খোদার কসম, দয়াল আল্লাহ পাক তাঁর অবারিত অনুগ্রহ এর প্রতিদান হিসেবে জান্নাতুন নাঈম দিতে পারেন।
এছাড়া হযরত ইমাম তিরমিযি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত জামে তিরমিযি শরীফের ২য় খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম দিয়েছেন : بَابُ مَا جَاءَ ِمْيلَادُ النَّبِى َصَّلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এতদসত্ত্বেও কি প্রমাণ হয়নি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং করেছেন এবং তা করতে উম্মতদের নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তালবাহানা ছেড়ে দিন, এখনও হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় আছে। সময় থাকতে তওবা করে নবীর খাঁটি গোলাম হয়ে যান। কারণ, সব কিছুকে নিয়ে তামাশা করা যায় না।
জশ্নে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর ফাজায়েল ও উপকারিতা সম্পর্কে শুধুমাত্র একটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো। যে ঘটনাটি আমাদের সকলেরই জানা। এমনই একজন উল্লেখযোগ্য কাফের নাম তার ‘আবু লাহাব’। যে ব্যক্তিটি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছে। এই আবু লাহাব এমনই দুষ্ট প্রকৃতির ছিল যে, আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে তার নিন্দা জানিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা (সূরা লাহাব) অবতীর্ণ করেন।
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ (১) مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ (২) سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ (৩)
অর্থঃ ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দু’হাত এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক। তার কাজে আসেনি তার সম্পদ এবং না যা সে উপার্জন করেছে। অতিশীঘ্র সে অগ্নি স্ফুলিংগময় আগুনে প্রবেশ করবে।. সুরা আল -লাহাব, আয়াত নং-১-৩, তরজমা, কান্যুল ঈমান। (বঙ্গানুবাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬৮)।
কোরআন ও হাদীসের সর্বসম্মত মাসয়ালা হলÑ কাফেরদের সব ভাল কাজের প্রতিদান তারা দুনিয়ায় পাবে, আখেরাতে পাবে না
এখন বোখারী শরীফের একটি হাদীস শরীফ দেখুনÑইমাম বুখারী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বুখারী শরীফের
كتاب النكاح তে
حَدَّثَنَا الْحَكَمُ بْنُ نَافِعٍ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ زَيْنَبَ بِنْتَ أَبِي سَلَمَةَ أَخْبَرَتْهُ أَنَّ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ أَخْبَرَتْهَا
قَالَ عُرْوَةُ وثُوَيْبَةُ مَوْلَاةٌ لِأَبِي لَهَبٍ كَانَ أَبُو لَهَبٍ أَعْتَقَهَا فَأَرْضَعَتْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا مَاتَ أَبُو لَهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهِ بِشَرِّ حِيبَةٍ قَالَ لَهُ مَاذَا لَقِيتَ قَالَ أَبُو لَهَبٍ لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْرَ أَنِّي سُقِيتُ فِي هَذِهِ بِعَتَاقَتِي ثُوَيْبَةَ
বর্ণনা করেন, হযরত উরওয়া রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা বলেন, সুয়াইবা ছিলেন আবু লাহাবের আযাতকৃত দাসী। আবু লাহাব তাকে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তিনি দুধ পান করিয়েছেন। আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার বংশের একজন স্বপ্নে তাকে খুবই খারাপ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করেন, আপনার অবস্থা কি? সে জবাবে বলল, তোমাদেরকে ছেড়ে আসার পর আমার কল্যাণজনক কিছুই হয়নি। হ্যাঁ, এই আঙ্গুল (শাহাদাত আঙ্গুল যা দ্বারা সুয়াইবাকে মুক্তি দিয়েছিল) দ্বারা আমাকে পানীয় দেওয়া হয় সুয়াইবাকে মুক্তিদানের কারণে। বুখারী শরীফ ২/৭৬৪।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালীন রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ فتح البارى এবং
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত বিশ্বখ্যাত عمدة القارى গ্রন্থে ইমাম সুহাইলী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি’র হাওয়ালা দিয়ে বর্ণনা করেন,
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালীন রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ فتح البارى এবং আল্লামা বদর উদ্দীন আইনি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত বিশ্বখ্যাত عمدة القارى গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
وذكرالسُهيلى ان العباس قال لما مات ابو لهب رايته فى منامى بعد حول فى شر حال فقاما لقيت بعدكم راحة الا ان العذاب بخفف عنى فى كل يوم اثنين وذالك ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها-
অর্থ: ইমাম সুহাইলী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি যে, অত্যন্ত দুরবস্থার মাঝে পতিত রয়েছে। সে বলল, তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর আমি শান্তির মুখ দেখে নি। তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব লাঘব করা হয়। হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু বলেন, তার এ আযাব হালকার কারনহল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র বেলাদতের দিন ছিল সোমবার। তাঁর বেলাদতের সুসংবাদ নিয়ে আসায় দাসী সুয়াইবাকে সে খুশীতে মুক্তি দেয়। (ফতহুল বারী ৯/১৪৫, উমদাতুল ক্বারী ২/২৯৯ পৃষ্ঠা) ্ ।
আল্লামা কুস্তুলানী শরহে বুখারী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি আল্লামা ইবনুল জাযরীর রহ্মাতুল্লাহি আলাইহির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
فااذا كان هذا ابو لهب الكافر الذى نزل القران بذمة جوزى فى النار بفرحة ليلة مولد النبى صلى الله عليه وسلم به فما بال حال المسلم المؤحد من امته عليه السلام الذى يسر بمولده ويبدل ما تصل اليه قدرته فى محبته صلى الله عليه وسلم لعمرى انما يكون جزاؤه من الله الكريم ان يدخله بفضله العميم جنات النعيم-
অর্থ: যেই কাফের আবু লাহাব সম্পর্কে কোরআন মজিদে সরাসরি দোষ বর্ণনা করা হয়েছে (َتَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ) (ধ্বংস হয়েছে আবু লাহাবের দু‘হাত ও সে নিজে) সে একজন কাফের হওয়া সত্ত্বেও ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র রাতে সে জাহান্নামেও শান্তি পাচ্ছে। তাহলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র উম্মতগণ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তে আনন্দ করলে এবং তাঁরই মুহাব্বতে নিজের শক্তি সামর্থ সব কাজে লাগালে সে ফায়দা পাবে না কেন? খোদার কসম, দয়াল আল্লাহ পাক তাঁর অবারিত অনুগ্রহ এর প্রতিদান হিসেবে জান্নাতুন নাঈম দিতে পারেন।
এছাড়া হযরত ইমাম তিরমিযি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত জামে তিরমিযি শরীফের ২য় খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম দিয়েছেন : بَابُ مَا جَاءَ ِمْيلَادُ النَّبِى َصَّلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এতদসত্ত্বেও কি প্রমাণ হয়নি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং করেছেন এবং তা করতে উম্মতদের নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তালবাহানা ছেড়ে দিন, এখনও হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় আছে। সময় থাকতে তওবা করে নবীর খাঁটি গোলাম হয়ে যান। কারণ, সব কিছুকে নিয়ে তামাশা করা যায় না। ঈড়ঁৎঃবংু নবমবঃং পড়ঁৎঃবংু.
“হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, যখন আবু লাহাব মারা গেল। আমি তাকে এক বছর পর স্বপ্নে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় দেখলাম। স্বপ্নে সে (আমাকে) বললÑ তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর কোন শান্তি আমার ভাগ্যে জুটেনি। বরং কঠিন আযাবে লিপ্ত আছি। কিন্তু প্রতি সোমবার আমার আযাব হালকা করে দেয়া হয়”।
হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর কারন বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন “আযাব হালকা করার কারনহল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বেলাদতের দিন ছিল সোমবার। তাঁর বেলাদতের সুভ-সংবাদ নিয়ে আসায় দাসী সুয়াইবাকে সে খুশিতে মুক্তি দেয়”। ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯/১৪৫।শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত রেওয়াতের আলোচনা করে বলেনÑ
‘এ বর্ণনাটি মিলাদ অনুষ্ঠানে খুশি ও মাল সম্পদ দানকারীর জন্য একটি দলীল ও সনদ। আবূ লাহাব; যার নিন্দায় কোরআনে পাকে সূরা নাজিল হয়েছে, সে যেহেতু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বেলাদতের খুশিতে দাসী আযাদ করে আযাবের ক্ষেত্রে শিথিলতা লাভ করেছে। তাহলে ঐ সব মুসলমানদের কেমন মর্ত্তবা অর্জিত হবে, যার অন্তরে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মহব্বত পরিপূর্ণ থাকবে এবং এসব ঘটনায় খুশি বা আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। তবে হ্যাঁ অনৈসলামিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরী। কেননা এসবের কারণে মানুষ মিলাদের বরকত থেকে মাহ্রুম হয়ে যায়। (মাদারেজুন নবুয়্যত, ১/১৯)
ইমাম কিরমানী বলেনÑ
: قال الحافظ ابن ناصر الدين الدمشقي في كتابه : "مورد الصادي في مولد الهادي" : قد صح أن أبا لهب يخفف عنه العذاب في مثل يوم الإثنين لإعتاقه ثويبة سرورا بميلاد النبي صلى الله عليه وآله وسلم ثم أنشد : إذا كان هذا كافرا جاء ذمه وتبت يداه في الجحيم مخلدا أتى أنه في يوم الإثنين دائما يخفف عنه بالسرور أحمدا فما الظن بالعبد الذي كان عمره بأحمد مسرورا ومات موحدا
فإذا كان هذا الكافر الذي جاء القرآن بذمه يخفف عنه العذاب لفرحه بمولد المصطفى صلى الله عليه وآله وسلم فما بال الذي يحتفل بذلك . وهذا ما ذكره وقرره أيضا شيخ القراء والمحدثين الحافظ شمس الدين بن الجزري في "عرف التعريف بالمولد الشريف
(৪) বুখারী শরীফের অন্যতম ব্যাখ্যাকারী ইমাম হাফেজ কুস্তালানী (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করুক, যিনি নবীজির ‘মিলাদুন্নবীর’ মাসের রাতগুলো ঈদে পরিণত করে। যাতে করে তার এই আমল ঐ ব্যক্তির (দুশমনের) জন্য ভীষণভাবে অসুখ হয়ে যায়, যার কোন চিকিৎসা নাই (মাওয়াহেবে লাদুনিয়া ১ম খন্ড, পৃ-১৪৮)
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল¬ামা ইমাম কুস্তালানী রহমাতুল¬াহি আলাইহি বলেন,
ولا زال أهل الاسلام يحتفلون بشهر مولوده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصد قون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعنتون بقرأة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم
অর্থাৎ- প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে, উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল¬াহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়। (“মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া” ১ম খন্ড, পৃ-১৪৮)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi | প্রসঙ্গ : ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন উপলক্ষে জুলুছ বা মিছিল বের করা

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)


নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভূমিষ্ট হন-তখন এমন কতিপয় আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছিল-যা সচরাচর দেখা যায় না। প্রথম ঘটনাটি স্বয়ং বিবি আমেনা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এভাবে- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আগমন প্রাক্কালে আজিমুশ্শান আয়োজন ঃ
আমর বিন কুতাইবা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি, যিনি ছিলেন একজন জ্ঞান সমুদ্র ব্যক্তিত্ব, ‘যখন হযরত আমিনা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা এর খেদ্মতে হুজুরের বেলাদত শরীফের সময় নিকটবর্তী হল, তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে বললেনÑ তোমরা আকাশ সমূহের দরজা খুলে দাও জান্নাতের দরজা খুলে দাও। সেদিন সূর্য অনুপম সৌন্দর্যপূর্ণ নূর ধারণ করেছিল এবং আল্লাহ পৃথিবীর সকল মহিলাদের জন্য নির্ধারিত তাকদির করে দিলেন যে, হুজুরের বরকতে তারা পুত্র সন্তান জন্ম দিবে। সিরাতে হালবিয়া, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৮।
১. হযরত মা আমেনা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা বলেন, “যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর প্রকাশ লাভ হয়, তৎক্ষনাত এমন নূর বের হয়Ñ যা দ্বারা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত দিগন্ত আলোকময় হয়ে যায়”। সিরাতে হালবিয়া, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯১।
২. আল বেদায়া ওয়ান নেহায়াতে উল্লেখ আছে- হযরত সাইয়্যেদা আমেনা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত অতীব গুরুত্বের সাথে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, তখন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করতে পতাকা উড্ডয়ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমার চোখের পর্দা তুলে দিলেন, ভূপৃষ্ঠের পূর্ব-পশ্চিমের সব কিছু আমার সম্মুখে এনে দেয়া হলো, ফলে আমি তা চর্ম চোখে দেখে নিলাম। আর আমি তিনটি পতাকা দেখলাম। একটি পতাকা পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে উড্ডীন করা হয়েছে, দ্বিতীয়টি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কা’বা ঘরের ছাদে উড্ডীন করা হয়েছে। আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৬/২৯৮; খাছায়েছে কুবরা ১/৮১; সিরাতে হালবিয়া পৃষ্ঠা ১০৯
০৩. মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পবিত্র শুভ জন্মলগ্নে বেহেশতি হুরগণ হযরত আছিয়া রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা এবং হযতর মরিয়ম আলাইহিস্ সালাম এর নেতৃত্বে তাঁকে অভিবাদন জ্ঞাপন করেছেন। হযরত আমিনা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা থেকে নিম্ন বর্ণিত হাদিসে আশ্চর্যান্বিত ঘটনা এভাবে বিবৃত হয়েছেÑ
‘তিনি বলেন, মহিলাদের ন্যায় আমার যখন প্রসব বেদনা শুরু হল, তখন আমি একটি বিকট আওয়াজ শুনলাম। যদ্দরুণ আমার মধ্যে ভীতি সঞ্চারিত হল। অতঃপর আমি দেখলাম যে, একটি ধুসর বর্ণের পাখির পালক আমার হৃদয় ছুঁয়ে দিল, ফলে আমার সব রকম ভয়-ভীতি ও ব্যথা বিদূরিত হতে লাগল। অতঃপর আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই হঠাৎ দেখলাম যে, আমার সামনে সাদা পানীয় (শরবত) পেশ করা হল এবং বৃত্ত আমাকে পরিবেষ্টন করল। আমি দেখলাম, এমন কতগুলো সুন্দরী রমনীদেরকে, যাদের গঠন প্রকৃতি লম্বায় খর্জ্জুর বৃক্ষ ও আবদে মানাফের কন্যাদের মত মনে হচ্ছিল। তারা আমাকে তাদের অঙ্গনে নিয়ে গেল। তখন আমি সেই ভেবে হয়রান হয়ে গেলাম যে, এঁরা কোথা থেকে এলো এবং তাঁরা এই বেলাদতের সংবাদটি কি করে অবগত হলো! তখন তাঁরাই বলল, আমি ফেরআউনের বিবি আছিয়া এবং আমি ইমরান তনয়া মরিয়ম আর আমাদের সাথে এরা হল জান্নাতের হুর (সুবহানাল্লাহ্)।’. মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া ১/১২৪; যূরক্বানী আলাল মাওয়াহিব ১/২০৯, সিরাতে হালাবিয়া ১ম খন্ড- ৬৭ পৃষ্ঠা, নুজহাতুল মাজালিস ২য় খন্ড- ৮৩ পৃষ্ঠা, নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৯৪ পৃষ্ঠা, সালতানাতে মোস্তফা ৩৬ পৃষ্ঠা আরবী ইবারতসহ রয়েছে ২২নং সিরিয়ালে)।
খাছায়েছে কোব্রা খন্ড ২য়, পৃ-২২৮, ও তারিখুল খামীছ পৃ-৩৩২ গ্রন্থে যথাক্রমে আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতি ( রাহমাতুল্লাহি আলাই) এবং Í আল্লামা আবুবকর দিয়ার বিকরী (রাহমাতুল্লাহি আলাই) বিবি আমেনা (রাঃ)-এর একটি বর্ণনা এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন ঃ বিবি (আমেনা রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহা) বলেন- যখন আমার প্রিয় পুত্র ভূমিষ্ট হলেন, তখন আমি দেখতে পেলাম- তিনি সিজদায় পড়ে আছেন। তারপর মাথা উর্দ্ধগামী করে শাহাদাৎ অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করে বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় পাঠ করেছেন “আশহাদু আললা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নি রাসুলুল্লাহ” (যিকর জামীল-১২ পৃষ্ঠা, মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া ১ম খন্ড ২১ পৃষ্ঠা সূত্রে)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:-
أنا دعوة أبي إبراهيم وبشرى أخي عيسى ورأت أمي حين حملت بي أنه خرج منها نور أضاء لها قصور الشام-
“অর্থাৎ- আমি আমার পিতা ইবরাহীমের দোয়া, আমার ভাই ঈসার প্রদত্ত সুসংবাদ, আমি আমার মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় তার পেট থেকে একটি নূর বের হয় যার তাজাল্লীতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ দেখতে পান। (সীরাতে ইবনে হিশাম-১/৩০২)
অন্য বর্ণনায় এসেছে: ثم اِنَّ أُمِّي رَأَتْ فِي الْمَنَامِ أَنَّ الَّذِي فِي بَطْنِهَا نُورঅর্থ:- “এরপর আমার মা ঘুমের ঘোরে দেখলেন তার পেটে যিনি আছেন তিনি নূর”। (মাওয়াহেবুল লাদুন্যিয়াহ-১/৭৪, মুসনাদে আহমদ-৪/১২৭, আল মুসতাদরাক লিল হাকেম-২/৪৫৩, ইবনু হিব্বান-৪/৬৪) প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরে মুজাস্সাম হওয়ার কারণে শয়তান তাঁকে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা। উপরোক্ত বর্ণনায় কয়েকটি বিষয় প্রমানিত হলো ঃ
(১) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বেলাদত উপলক্ষে বেহেস্ত ও আকাশ হতে পবিত্র নারী ও হুর ফিরিস্তাগন জুলুছ করে বিবি আমেনার (রাঃ) কুটিরে আগমন করেছিলেন এবং নবীজীর সম্মানার্থে দন্ডায়মান হয়ে কিয়াম করেছিলেন। আর ফিরিস্তাদের হয়ে এবং জুলুছ ছিল আকাশ ছোঁয়া জুলুছ। তাই আমারাও নবীজীর সম্মানে কিয়াম করি ও জুলুছ করি।
(২) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নূরের আলোতে বিবি আমেনা (রাঃ) পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অবলোকন করেছিলেন। যাদের অন্তরে নবীজীর নূর বিদ্যমান, সেসব অলীগণেরও দিব্যদৃষ্টি খুলে যায়। তাঁরা লাওহে মাহফুযও দেখতে পান (মসনবী শরীফ ১২০ পৃষ্ঠা)।
(৩) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম উপলক্ষে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থান আলো ও পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা উত্তম। ইহা আল্লাহ ও ফিরিস্তাদের সুন্নাত। (আল হাভীলিল ফতোয়া ২য় খন্ড ৩৮০ পৃষ্ঠা)
(৪) কোরআন নাযিলের ৪০ বৎসর পূর্বেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আদর্শ- ‘কালেমা ও নামায’ বাস্তবায়ন করেছিলেন। মূলতঃ থিউরিটিক্যাল কোরআন নাযিলের পূর্বেই প্র্যাকটিক্যাল কোরআন (নবী) নাযিল করেছিলেন। কোরআন হলো হাদিয়া- আর নবী হলেন সেই হাদিয়ার মালিক। হাদিয়া ও তার মালিকের মধ্যে যে সম্পর্ক-তা সর্বজন বিদিত।
(৫) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে জুলুছ এবং শুকরিয়ার আনন্দ মিছিল বের করা ফিরিস্তাদেরই অনুকরণ (আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত ১২ পৃষ্ঠা)। মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া ১ম খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা গ্রন্থের বর্ণনায় আকাশ হতে জমীন পর্যন্ত ফেরেস্তাদের জুলুছ বা মিছিল পরিস্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
আল্লাহ পাক বলেন- قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (৫৮
“তোমরা আল্লাহর ফযল ও রহমত স্বরূপ নবীকে পেয়ে আনন্দ-উল্লাস করো”। (সূরা ইউনুছ ৫৮ আয়াতের তাফসীর দেখুন- রুহুল মাআনীতে)।
জালালুদ্দীন সুয়ুতি তাঁর আল হাভী লিল ফাতাওয়া ১ম খন্ড ১৯৬ পৃষ্ঠা গ্রন্থে ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনে সব রকমের আনন্দ-উল্লাসকে বৈধ বলে উল্লেখ করেছেন।
মদিনা শরীফে সাহাবায়ে কেরামদের আনন্দ মিছিল ঃ
মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের ৪১৯নং পৃষ্ঠাবাবু ফি হাদিসীল হিজরা’ অধ্যায়ে হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে জানা যায়, রাসূলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কা মুকাররামা থেকে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় আগমন করেন ঐ সময় মদীনার মুসলমানগন কেউ কেউ বাড়ি- ঘরের ছাদের ওপর উঠে আবার কেউ কেউ রাস্তায় মিছিল করে ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাহহি ওয়াসাল্লাম) শ্লোগানর মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। হাদীস শরীফের ইবারতটি নিন্মরূপ- “ফাসাইয়াদার রিজালা ওয়ান নিসায়া পাওকাল বুইউতি ওয়াতাপাররাকাল গিলমানা ওয়াল খাদমী ফিতত্ তারকী ইউনাদুনা ইয়া মুহাম্মদু ইয়া রাসুল্লাল্লাহ্ িইয়া মুহাম্মদু ইয়া রাসুল্লাল্লাহি”।
অর্থাৎ- রাসূলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ১২ই রবিউল আউয়াল যে দিন মদীনা মুনাওয়ারায় তাশরীফ আনেন, তখন মদীনা শরীফের অসংখ্য নারী-পুরুষ ঘরের ছাদের ওপর আরোহন করেন এবং ছোট ছেলে মেয়েরা মদীনার অলি গলিতে (দলবদ্ধ মিছিল সহকারে) ইয়া মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শ্লোগান দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন।
যেমনটি বর্তমানে জশ্নে জুলূসে হয়। কেউ কেউ বাড়ীর ছাদে উঠে মিছিল দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন। আবার অনেকে রাস্তায় রাস্তায় মিছিলে শরীক হয়ে “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)” শ্লোগান দিয়ে ও নাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পড়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। আরেকটি হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা যায়, হযরত আনাছ (রাঃ) হতে বণিৃত রাসূলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিরতের প্রাক্কালে মসজিদে কুবা থেকে (শুক্রবার দিন ১২ই রবিউল আউয়াল, ২৪শে সেপ্টেম্বর ৬২২ খৃষ্টাব্দে) মদীনা শরীফে পৌছেন। তখন মদীনার প্রত্যেক মুসলমানের আশা ছিল যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেন তাদের মেহমান হন। তারা এগিয়ে যখন উষ্ট্রীর নিশানা ধরিতে চান, তখন হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, উষ্ট্রিকে ছেড়ে দাও। এ উষ্ট্রী আল্লাহ র নির্দেশিত। এটা যেখানে বসবে সে স্থানে আমার অবস্থান। সে সময় বনি নজ্জার গোত্রের ছোট ছোট মেয়েগন খুবই আনন্দের সহিত মধুর স্বরে গান করছিলেন ও হাত দ্বারা দফ দফ বাজাইতে বাজাইতে এ শের বা কবিতা পাঠ করতে করতে ঘর থেকে বাহিরে আসছিলেন।
عن أنس بن مالك: - أن النبي صلى الله عليه و سلم مر ببعض المدينة . فإذا هو بجوار يضربن بدفهن ويتغنين ويقلن نحن جوار من بني النجار * يا حبذا محمد من جار
“নাহ্নু জাওয়ারী মিন্ বানীননাজ্জার ইয়া হাব্বাজা মুহাম্মদ মিন্জার”
অর্থাৎ- “আমরা নজ্জার বংশীয় ভদ্র মেয়ে এবং হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কতই না ভাল প্রতিবেশী”। ইবনে মাজাহ শরীফ- ১৩৭ পৃষ্ঠা।
পূর্ব যুগের জুলুছ
ইবনে দিহহইয়া সম্পর্কে খাল্লেকান লিখেন, প্রাচীনকালে ১০৯৫-১১২১ খৃষ্টাব্দে মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে ধর্মীয় জুলুছ বের করা হতো। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এতে অংশ নিতেন। উযির আফযলের যুগে এ আনন্দ মিছিল বের করা হতো। এ সময় রাজপথসমূহ লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো। পরবর্তীতে এ উৎসবের প্রসার ঘটে আফ্রিকার অন্যান্য শহরে, ইউরোপের স্পেনে এবং ভারতবর্ষে। (মাকরিজী, ইবনে খাল্লেকান আদ্দুরারুল মুনাজ্জাম ১৩৬ পৃষ্ঠা, মাওদুরাবী ফিমাওলিদিন নাবী ২৮ পৃষ্ঠা)।সুতরাং যারা জশনে জুলুছকে নূতন প্রথা, শিরিক ও বিদআত বলে- তারা অতীত ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে মূর্খ। নবীবিদ্বেষ তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছে। (বিস্তারিত ইতিহাস জানার জন্যে দৈনিক জনকষ্ঠ ৩০শে আগস্ট’৯৬ মিলাদের ইতিকথা পড়–ন)। জশনে জুলুছ বের করা কোরআনী আয়াত দ্বারাই প্রমাণিত
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi | যারা মিলাদুন্নবী উদ্যাপনকে অস্বীকার করে তাদের মুরুব্বীদের দৃষ্টিতে মিলাদুন্নবী (দঃ)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)

যুগে যুগে কালে কালে প্রত্যেকেই ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করেছেন তাদের অধীনে তাদের পরিবেশে তাদের মতো করে। ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করেছেন ভিন্ন পরিভাষার মধ্য দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে। কেউ পালন করেছেন দরূদ শরীফ, কেউ পালন করেছেন মিলাদ শরীফ দিয়ে। আর সবগুলো অনুষ্ঠানই করেছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের মাস রবিউল আওয়ালে। করেছেন এক আর মুখে বলী আউরাচ্ছেন আরেক। আমরা নাকি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদানী করেছি। যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। গোয়ালার দই গোয়ালার নিকট নাকি কখনো টক হয় না। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের দীক্ষা দিয়ে প্রত্যকের পাসাল্লাম ভারী করতে প্রত্যেকেই সচেষ্ট ও যতœবান। আমরা গড্ডলিকা প্রবাহ পরে শুধু সাফাই গিয়ে গেছি। আমাদের সাফাই না-ই শুনলে, এবার তাদের মুখে তাদের সাফাই গাওয়া শুনুন, ওহাবীদের গুরুঠাকুর, পীর মাশায়েখগণের পীর রহমাতুল্লাহ।
(১) হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহ:) কী বলেন-
مشرب فقير كا يہ ہے- كہ محفل مولد ميں شريک ہوتا ہون بلكہ ذريعاۓ بركات سمجہ كر ہرسال منعقد كرتا ہون اور قيام ميں لطف ولذت پاتاہوں-
অর্থ : এ ফকিরের নিয়ম হল- আমি মিলাদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে থাকি বরং মিলাদ অনুষ্ঠানকে বরকত লাভের অছিলা মনে করে প্রত্যেক বৎসরই মিলাদের মজলিস করে থাকি এবং অনুষ্ঠানে কিয়ামের সময় অশেষ আনন্দ ও আরাম উপভোগ করি। (হাফতে মাসয়ালা-১৫ পৃষ্ঠা)
(২) মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর উস্তাদ শাহ আহমদ সাঈদ হানাফী (রাহঃ) তার ‘মালফুজাত’এ বলেছেন-“মিলাদ শরীফ পাঠ করা এবং জন্মবৃক্তান্ত আলোচনা কালে দাঁড়িয়ে (ক্বিয়াম) যাওয়া মুস্তাহাব (মিলাদ ও ক্বিয়ামের ফতোয়া, পৃঃ৭৯, মাকামাতে সাঈদীয়া ওয়া মাকামাতে আহমাদীয়া পৃ-১২৮)।
(৩) দেওবন্দীদের অন্যতম বুযুর্গ মৌলভী আশরাফ আলী থানভী বর্ণনা করেন-হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারকের উছিলায় সমস্ত জগৎ সৃজন হয়েছে (মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , পৃ-১৯২, কৃত;আশ্রাফ আলী থানভী)।
(৪) মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী দেওবন্দীর দৃষ্টিতে মিলাদ ও কি¦য়াম মুস্তাহাব (মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম, ১ম খন্ড, পৃ-৩৩৯)।
(৫) দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাজী সৈয়্যদ আবেদ হুসাইন হানাফী, তিনি প্রত্যেক শুক্রবার মাগরীবের পর মিলাদ শরীফের আয়োজন করতেন। হাজী সাহেবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঐ মিলাদ ও ক্বিয়ামের অনুষ্ঠান জারী ছিল (মিলাদ ও কিয়ামের ফতোয়া, পৃ-৮৬)।
(৬) এ প্রসঙ্গে মক্কা শরীফের তৎকালীন মুফতী এনায়েত আহমদ রহমাতুল¬াহি আলাইহি তার প্রসিদ্ধ তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ গ্রন্থেও ১২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اور بهى علماءے لكها ہے كہ اس محفل ميں ذكر وفات شريف كا نہ چاہے اس لئے كہ يہ محفل واسطے خوشى ميلاد شريف كے منعقد ہوتى ہے ذكر غم جانكاه اس ميں محض نازيبا ہے – حرمين شريف ميں ہرگز اجازت ذكر قصة وفات كى نہیں ہے -
অর্থাৎ-আলেম সমাজ এ কথাই লিখিয়াছেন যে, এই মাহফিলে রাসূলের ওফাত শরীফ বা ইন্তেকালের আলোচনা করা ঠিক নয়, এ জন্য যে এ রবিউল আউয়াল মাসে অনুষ্ঠিত মাহফিল মীলাদুন্নবী সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর খুশি উদযাপন করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মক্কা মদীনা শরীফে রাসূল সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর ওফাত শরীফের আলোচনা করার অনুমতি কখনোই ছিল না।
(৭) ইবনে তাইমিয়া বলেন- (লামাযহাবী)
وَكَذَلِكَ مَايُحْدِثُهُ بَعْضَ النَّاسِ اِمَّا مُضَاهَاةُ لِلْنَصَارَى فِىْ مِيْلَادَ عِيْسَى عَلَيْهِ السَّلَامِ وَاِمَّا مُحَبَّةِ لِلِنَّبِى صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعْظِيْمًا وَاَللهُ قَد ْيُثيْبُهُمْ عَلَى هَذِهِ الْمُحَبَّةِ وَاَلْاِجْتِهَادِ-
অর্থ : এভাবে কিছু লোক মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান করে থাকে। এটার উদ্দেশ্য হয়ত খৃষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য। (তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্ম দিন পালন করে) অথবা তাদের উদ্দেশ্য কেবল হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শন করা। যদি দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আল্লাহ এ ধরনের মুহাব্বত ও প্রচেষ্টামূলক কার্যকলাপে সওয়াব দিবেন। (একতেদাউ সিরাতেল মুস্তাকিম পৃষ্ঠা ২৯৪)
ذكر ابن تيمية في كتابه "اقتضاء الصراط المستقيم في مخالفة أصحاب الجحيم" (২/৬৩৪-৬৩৫)
(৮) সিফায়ে সায়েল গ্রন্থে শাহ আব্দুল গণি দেহলভী সাহেব লেখেছে –
وحق انست كہ نفسى ذكر ولادت انحصرت صلى الله عليہ وسلم وسرور و فاتحة نمودن يعنى ايصال ثوب فتوح سيد الثقلين ازكمال سعادت انسان است-
অর্থ : সত্য কথা হল, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা ফাতিহা পড়ে তাঁর মহান রুহে সওয়াব রেসানী এবং তাঁর মিলাদ শরীফে আনন্দ করার মধ্যেই রয়েছে মানুষের পূর্ণাঙ্গ সৌভাগ্য। (সেফায়ে সায়েল ১৪পৃঃ)
(৯) ফতুয়ায়ে এমদাদিয়ায় উল্লেখ আছে -
والاحتفال بذكر الولادة ان كان خاليا عن البدعات المروجة جائز بل مندوب كسائر اذكاره صلى الله عليه وسلم والقيام عند ذكر ولاته ولادته الشريفه حاشا الله ان يكون كفرا-
অর্থ : রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র বেলাদত শরীফের বর্ণনা করবার জন্যে মাহফিল করা মুস্তাহাব, যখন তা (হিন্দুস্থানে প্রচলিত) ধ্বংসাতœক বিদআত সমূহ হতে পবিত্র হয় এবং তাঁর বেলাদতের বর্ণনা দিতে গিয়ে কিয়াম করা কখনও কুফরী নয়। (ফতুয়ায়ে এমদাদিয়া ৫/২৬৪ পৃষ্ঠা)
কথিত আছে, ফতুয়ায়ে এমদাদিয়ায়, তাদের ভাষায়, “স্বাক্ষর করেছেন শায়খুল হিন্দ মাহমুুদুল হাসান, শায়খুল হাদিস আনোয়ার শাহ কাস্মিরী সহ প্রখ্যাত আলেমগণ।”
১০। আশ্রাফ আলী থানবী ( ওহাবীদের নেতা) ‘তরিকায়ে মিলাদ’ কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় লেখেন : এ সমস্ত ব্যাখ্যাবলি (অর্থাৎ শিরনী, কিয়াম ইত্যাদি) প্রকৃত পক্ষে মুবাহ কাজসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এতে কোন অনিষ্ট নেই এবং সেই জন্য প্রকৃত মিলাদ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোন প্রকার নিষেধ আসতে পারে না। কিন্তু যখন এ সমস্ত মুবাহ পালনের ফলে কোন ফাসাদ এবং অনিষ্ট ঘটাইয়া থাকে তখন সাময়িকভাবে এ সমস্ত কাজ (অর্থাৎ শিরনী, কিয়াম ইত্যাদি) এবং ঐ মাহফিল নাজায়েজ ও নিষিদ্ধ বলা যাবে এবং যেখানে ঐ সমস্ত কাজের সম্ভাবনা নেই তাতে কোন নিষেধ আসতে পারে না।
টীকা : উল্লিখিত মনীষীদের উক্তিতে দেখতে পাওয়া যায়, মিলাদ, মিলাদ শরীফ, দরূদ শরীফ, কিয়াম, মিলাদুন্নবী ইত্যাদি। কিন্তু লক্ষ্যবস্তু সকলেরই এক ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা। তাই একেকজন একেক পরিভাষায় তা প্রকাশ করেছেন।

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e-milad-un nabi| মুজতাহেদীন, মনীষীগণ কর্তৃক মিলাদুন্নবী (দঃ) পালন

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)


১। ইমাম শাফেয়ী রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু কর্তৃক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন, তিনি বলেন:
من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم اخوانا وهيا طعاما واخلى مكانا وعمل احسانا وصار سببا لقراته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والشهداء والصالحين ويكون فى الجنة النعيم-
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্য কিছু ঈমানদার ভাইদের একত্রিত করে এবং মিলাদের জন্য কিছু তাবারকের ব্যবস্থা করে, আল্লাহ তাঁকে সিদ্দিকীন, শোহাদা-সালেহীনদের সাথে জান্নাতুন নাঈমে থাকার ব্যবস্থা করবেন।
২। আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন
يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام
অর্থ: আমাদের জন্য হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তে শোকরিয়া আদায় করা মুস্তাহাব। (তাফসীরে রুহুল বয়ান- ৯/৫৬-৫৭ পৃষ্ঠা)
৪। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি আল্লামা সাখাবী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি‘র উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন :
كنت ممن تشرف بادراك المولد فى مكة المشرفة عدة سنين وتعرف مااشتمل عليه من البركة المشار لبعضه-
অর্থ: যারা কয়েক বৎসর ব্যাপী মক্কা শরীফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তম্মধ্যস্থ বরকতের পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন আমি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। (রিসালাতিল মাওরুদুর রাবী ফি মাওলিদীন নবী ৮৫পৃঃ)
৫। বিখ্যাত সূফী ও ফকিহ সাইয়্যেদ আহমদ আবেদীন রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম ইবনে হাজর রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি‘র ‘আলা মাওলুদুল কবির’ কিতাবের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁর বিরচিত ‘নে‘মাতুল কুবরা’ গ্রন্থে লেখেন :
فينبغى لكل صادق فى حبه صلى الله عليه وسلم ان يستبشر بهذا الشهر السار وينعقد فيه محفلا- يقرأ فيه ماصح فى مولده صلى الله عليه وسلم من لاثار فعسى ان يدخل الجنة مع الابرار-
অর্থ: যারা আল্লাহ র হাবিবের প্রতি প্রকৃত মহব্বত রাখেন তাদের উচিত এই রবিউল আওয়াল মাসের আগমনে আনন্দিত হওয়া এবং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের অনুষ্ঠান করা সেই মাহফিলে রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’র জন্ম সম্বন্ধীয় সহীহ হাদিসসমূহ পাঠ করা। আশা করা যায় ও প্রকার লোকেরা আল্লাহ পাকের নেক বান্দাগণের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৬। আল্লামা ইবনুল জাওজী রহমাতুসাল্লামহি আলাইহি বলেন:
ومن خواصه انه امان فى ذالك العام وبشرى عاجلة بنيل المرام-
অর্থ: মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠান দ্বারা যে সব উপকার লাভ হয়ে থাকে তন্মধ্যে ইহা অন্যতম ও পরীক্ষিত যে, সে বৎসর বিপদাপদ হতে নিরাপদ থাকা যায় এবং নিজের ন্যায় সঙ্গত আকাক্সক্ষাপূর্ণ হয়ে থাকে।
৭। আল্লামা ইবনুল জাযরী রহমাতুসাল্লামহি আলাইহি বলেন :
ولم يكن فى ذالك الا ارعام الشيطان وسرور- اهل الايمان-
অর্থ: এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র অনুষ্ঠান দ্বারা শয়তানের পিঠে কষাঘাত পড়ে। আর ঈমানদারগণের হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। (সিরতুশ সামিয়া)
৮। ইমাম নববীর ওস্তাদ ইমাম আবু শামা রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
وَ مِنْ اَحْسَنِ مَا ابْتَدَعَ فِىْ زَمَانِنَا مِنْ هَذَا الْقَبِيْلِ مَاكَانَ يَفْعَلُ بِمَدِيْنَةِ اَرْبَلِ جَبَرَهَا اللهُ تَعَالَى كُلُّ عَامَ فِى الْيَوْمِ الْمُوَافِقِ لِيَوْمِ مَوْلِدِ النَّبِى صِلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الصَّدَقَاتِ وَالْمَعْرُوْفِ وَاَظْهَارِ الزِّيْنَةِ وَالسُّرُوْرِ فَاِنَّ ذّاِلكَ مَعَ مَافِيْهِ مِنَ الْاَحْسَانِ اِلَى الْفُقَرَاءِ بِمَحَبَّةِ النَّبِى صِلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعْظِيْمِهِ وَجَلَالَةِ فِى قَلْبِ فَاعِلِهِ وَشْكُرِ اللهِ عَلَى اِيْجَادِ رَسُوْلِهِ الَّذِى اَرْسَلَهُ رَحْمَةُ لِلْعَالَمِيْنَ صِلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: আমাদের জামানায় আরবাল শহরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র বেলাদতের দিন যে সব দান-খয়রাত সৌন্দর্য এবং আনন্দ প্রকাশের জন্য করা হয়, তা বিদআতে হাসানারই অন্তর্ভুক্ত। কেননা এর মাধ্যমে ফকীরদের প্রতি এহসান করা ছাড়াও আরো রয়েছে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুহাব্বত, মর্যাদা এবং তা‘জিম করার বহিঃপ্রকাশ। আর আল্লাহ তা‘য়ালা রহমাতুল্লিল আলামিন রূপে যে নেয়ামত দান করেছেন, তজ্জন্য শোকরিয়া প্রকাশ করার বিষয় নিহিত রয়েছে।
৯। ইমাম কুস্তুলানী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
لازال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولده عليه السلام ويعلمون الولائم ويتصدقون فى لياليه انواع الصدقات يظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقراة مولجه الكريم يظهر عليهم من بركاته كل فضل عظيم ومما جرب من خواصه انه امان فى ذالك العام وبشرى عاجله بنيل البغية والمرام فصح الله امرا اتخذ ليالى شهر مولده المبارك اعياد اليكون اشد علة من فى قلبه مرض-(المواهب الدنية)
অর্থ:রবিউল আওয়াল যেহেতু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদতের মাস। সেহেতু অত্র মাসে তামাম মুসলমান সবসময় মিলাদ শরীফের খুশিতে মাহফিলের আয়োজন করে আসছে। তারা রাতে দান-সদকা করে থাকে, আর সৎ আমল সম্পাদন করে থাকে। বিশেষত, এসব মাহফিলে বরকত যে পাওয়া যায়, তা পরীক্ষিত; এ মাহফিলের জন্য ঐ বছর নিরাপদে অতিবাহিত হবে। আর স্বীয় উদ্দেশ্য ও হাজত পূর্ণ হওয়ার দ্রুত সুসংবাদ লাভ করবে। যে ব্যক্তি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদের মাসের রাত্রসমূহে ঈদ পালন করবে, যাতে করে যাদের অন্তঃকরণে ব্যধি আছে, তাঁদেরকে যন্ত্রনা দেওয়া হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘য়ালা স্বীয় করুণা ও অনুগ্রহ দান করবেন।
১০। ইমামুল হাফেজ সাখাভী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
لازال اهل الاسلام فى سائر الاقطار والمدن يحتفلون فى شهى مولده صِلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بعمل الولائم البديعة المشتملة على الامور البهجة الرفيعة ويتصجقون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقرثة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم-( سبل الهدى)
অর্থ: বিশ্বের চতুর্দিকে ও শহরগুলোতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের মাসে মুসলমানরা বড় বড় আনন্দ অনুষ্ঠান করে থাকে। এ মাসের রাত্রসমূহে প্রাণ খুলে সদকা করা হয়, আনন্দ প্রকাশ করা হয়, বেশি বেশি নেক আমল করা হয় এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের ঘটনাবলি পড়ে পড়ে আনুগত্য প্রকাশ করা হয়। ফলে তাদের উপর রাশি রাশি বরকত থেকে বিপুল পরিমাণ করুণা বর্ষিত হয়।
১১। হাফেজ আবু জুরআ ইরাকী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
وسئل عن فعل المولد امستحب او مكروه وهل ورد فيه شئ او فعله من يقتدى به قال اطعام مستحب فى كل وقت فكيف اذا انضم ذالك من السلف والايلزم من بدعة كونه مكروها فكم من بدعة مستحبه بل واجبه-(تشنيف الاذان)
অর্থ: মাহফিলে মিলাদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হল, এটি কি মুস্তাহাব না কি মাকরুহ? এ সম্বন্ধে কোন কিছু ওয়ারেদ হয়েছে কি না কিংবা যাকে এক্তেদা করা যায়, এমন কেউ এটা করেছেন কিনা? তিনি বলেন, সবসময় আহার করানো মুস্তাহাব। তাহলে খাওয়ানোর আনন্দটা যদি এ সম্মানিত মাসে নূরে নবূয়তের হুজর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুক্ত হয়, তাহলে এর মর্যাদা কিরূপ হবে? আমরা জানি না এটি সলফে সালেহীন করেছেন কি না, কিন্তু পূর্বযুগে না হওয়াতে তা মাকরুহ হওয়া আবশ্যক নয়। কেননা এমন অনেক বিদআত আছে, যা সলফে সালেহীন কৃত না হওয়া সত্ত্বেও মুস্তাহাব এমনকি ওয়াজিব বটে।
১২। ইমাম ইবনে হাজর মক্কী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
الموالد والاذكار التى تفعل عندنا اكثرها مشتمل على خيى كصدقة وذكر وصلاة وسلام على رسول الله صلى الله عليه وسلم-( فتاوى حديثة)
অর্থ: আমাদের এখানে মিলাদ মাহফিল জিকির-আজকার যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তার অধিকাংশই ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন :সদকা করা, জিকির করা, দরূদ পড়া ও রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাম পেশ করা।
১৩। হযরত ইসমাইল হাক্কী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
ومن تعظيمه عمل المولد اذالم فيه منكر--
অর্থ: রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র মিলাদ শরীফ অনুষ্ঠান করাও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি দিক, যদি তাতে গর্হিত কোন কাজ না হয়। (রুহুল বয়ান ৭/৬৬১)
১৪। ভারত উপমহাশের খ্যাতনামা আলেম ও পীর মাশায়েখগণের পীর হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
مشرب فقير كايه هى كه محفل مولد مين شريك هوتا هون بلكه ذريعه بركات سجى كر هرسال منعقد كرتا هون اور قيام مين لطف ولذت پاتاهون-
অর্থ: এ ফকিরের নিয়ম হল আমি মিলাদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে থাকি বরং মিলাদ অনুষ্ঠানকে বরকত লাভের অছিলা মনে করে প্রত্যেক বৎসরই মিলাদের মজলিস করে থাকি এবং অনুষ্ঠানে কিয়ামের সময় অশেষ আনন্দ ও আরাম উপভোগ করি। (হাফতে মাসয়ালা- ১৫ পৃষ্ঠা)।
১৫। হযরত শাহ ওলীউসাল্লামহ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুসাল্লামহি আলাইহি বলেন :
اخبرنى سيدى الوالد قال كنت اصنع فى ايام المولد طعاما صلة بالنبى صلى الله عليه وسلم فلم فعتح لى فى سنة من السنين شئى اصنع به طعاما فلم اجد الاحمصا مقليا فقسمته بين الناس فرايته صلى الله عليه وسلم وبين يديه هذا الحمص-( الانتباه في سلاسل اولياء الله)
অর্থ: আমার মুহতারাম পিতা বলেন, আমি রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’র বেলাদত দিবসসমূহে তাঁর আন্তরিক সম্পর্ক প্রদর্শনার্থে ভোজের ব্যবস্থা করতাম। এক বৎসর এমন হল যে, এ অনুষ্ঠানের জন্য একমাত্র ছোলা ভাজা ব্যতীত অন্য কিছুরই সংস্থান হল না। অগত্যা তা-ই লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দিলাম। পরে যখন রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলাম যে, ঐ ছোলা ভাজা তাঁর সম্মুখে রক্ষিত।
১৭। হযরত শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন :অর্থ: দ্বিতীয়টি হল মিলাদ মজলিস। এতে রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখে পূর্ব নিয়মানুযায়ী সব লোকজন সমবেত হয়ে দরূদ পাঠে মনোনিবেশ করে এরপর এই ফকির (আমি নিজে) উক্ত মজলিসে উপস্থিত হয়।
১৮। “ফয়জুল হারামাঈন” পৃ. ৮০ কিতাবে বলেন,
وكنت قبل ذلك بمكة المعظمة فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم ولادته والناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم ويذكرون ارهاصاته التى ظهرت فى وقت ولادته ومشاهده قبل بعثته فرأيت انوارا-
শাহ ওলী উসাল্লামহ মোহাদ্দিস দেহলভী (রাহঃ) বলেন-আমি প্রথমে মক্কা মোয়াজ্জামায় অবস্থানকালে মিলাদুন্নবী দিবসে উপস্থিত ছিলাম এবং লোকেরা নবীজির উপর দরূদ শরীফ পাঠ করতে ছিলেন এবং তাঁর নূরানী মো’জেযা সমূহ নিয়ে আলাপচারিতায় ছিলেন। বিশেষত সমস্ত মো’জেযা শুভ জন্মদিবসে এবং জন্মের পূর্ব মুহূর্তে যে সকল ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল সেসব উল্লেখ করে ছিলেন। এমতাবস্থায় আমি কতগুলো নূর হঠাৎ প্রকাশ হতে দেখলাম! আল্লাহ ভাল জানেন, আমি চর্ম চোখে দেখা নূর এবং রূহানী চোখে নূরের দৃশ্য বর্ণনা করতে পারব না। তারপর আমি ঐ নূরগুলো সম্পর্কে চিন্তা করে বুঝলাম যে, ফেরশতাগণ এ প্রকার ঘটনাবলি ও মজলিসমূহের জন্য নিয়োজিত হয়েছেন। এগুলো ফেরেশতাদের নূর, আরো দেখতে পেলাম যে, ফেরেশতাগনের নূরের সাথে আল্লাহর রহমতের নূরগুলো মিলিত হচ্ছে (ফুইউজুল হারামাইন পৃঃ৮০)।
(১৯) শাহআবদুল হক মোহাদ্দিস দেহলভী (রাহঃ) অন্য কিতাবে বলেন-আমি মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠানে দরূদ শরীফ এবং দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করে থাকি (আখবারুল আখ্য়ার, পৃঃ৬২৪)।
২০। ইমামে রাব্বানী সাইয়েদ মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রাহ.) এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন,
ديگر در باب مولود خوانى اندراج يافته بوددر نفس قرآن خواندن بصوت حسن ودرقصائد نعت ومنقبت خواندن چہ مضائقہ است-
অর্থাৎ- আপনার চিঠিতে মৌলুদখানি সম্পর্কে উল্লেখ ছিল। মধুর কণ্ঠে কোরআন পাকের তেলাওয়াত ও নবী পাক সাসাল্লামাসাল্লামহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে আক্বদাসে ক্বাসিদাসমূহ, নাত, জীবন বৃত্তান্ত পাঠে ক্ষতি কি? (অর্থাৎ কোন ক্ষতি নেই)। মুজাদ্দিদে আলফে সানী: মাকতুবাত শরীফ: পৃ. ১৫৭, মাকতুবাত নং ৭২ ।
২১। হযরত শাহ আব্দুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী ( রাহমাতুল্লাহি আলাই) এর রচিত মাসামাতে বিস সুন্নাহ নামক কিতাবে ৭৮পৃষ্ঠাতেউল্লেখ আছে।যে রাত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুভাগমন করেছেন সেই রাত্রি নিঃসন্দেহে শবে কদরের রাত্র হতে শ্রেষ্ঠ। কেননা মহান আল্লাহ ্ তাঁর প্রিয় হাবীব রাহমাতুল্লিল আলামীনকে সে রাত্রে প্রেরন করেছেন।
ইমাম নববী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহিÑএর ওস্তাদ আল্লামা আবুশামাহ্ রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি الباعث على البدع والحوادث কিতাবে লিখেছেন,
মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে ভাল কাজ করা মোস্তাহাব। আল হাভী লিল ফতওয়া, কৃত: আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহ:)।
২২। মোল্লা আলী ক্বারী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সব দেশের ওলামা-মাশায়েখ মাহফিলে মিলাদে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উহার সমাবেশকে এতই তা’জিম করেন যে, কেহই অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেন না। এতে শরীক হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই মোবারক মাহফিলের বরকত হাসিল করা।. আনওয়ারে ছাতেয়া, পৃষ্ঠা ১৪৪।
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi| সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈ গণের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)


হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধ হতে ফিরে আসলে, তাঁর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) আরজ করলেন, হুজুর আপনার প্রশংসাসূচক মিলাদ বয়ান করে আমি একটি কসীদা পড়ব। তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদকরলেন, আপনিবলুন!আল্লাহ পাক যেন আপনার মুখ ভেঙ্গে না দেন। তখন হযরতআব্বাস(রাঃ) বলেন-ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনার যখন শুভাগমন, তখন আপনার নূরের আলোতে সমগ্র আসমান-জমিন আলোকিত হয়ে গেল (বিদায়া ওয়ান-নিহায়া খন্ড-২য়, পৃ-২৪০, ২৪১, মাওয়াহিবুল লাদুনীয়া খন্ড-১ম, পৃ-১৭৫, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ পৃ-৭৭, নূর নবী পৃ-৩৫, নশরুতীব পৃ-১৭৫, আল-হাকিম, তিবরানি, খাছায়েছে কুবরা, আনোওয়ারেমোহাম্মাদিয়া)।
(২)وأَحسنُ منكَ لم ترَ قطُّ عيني وَأجْمَلُ مِنْكَ لَمْ تَلِدِ النّسَاءُ خلقتَ مبرأً منْ كلّ عيبٍ كأنكَ قدْ خلقتَ كما تشاء
অর্থশায়েরে রাসূল হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রাঃ) নবীজির সম্মুখে মিলাদ করে বলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমার চক্ষু আপনার থেকে অতীব সুন্দর আর কোন কিছু দেখেনি। আর পৃথিবীর কোন মহিলা আপনার থেকে অতীব সত্ত্বা জন্ম দেয়নি, আপনি সকল দোষত্র“টি থেকে পূত পবিত্র হয়ে সৃষ্টি হয়েছেন, মনে হয় আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সৃষ্টি হয়েছেন (দেওয়ানে হাস্সান বিন সাবিত এবং সিরাতে হালবীয়া ১ম খন্ড, পৃঃ৭৯)
عن ابن عباس رضي الله عنهما كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم فيبشرون ويحمدون اذجاء النبى صلى الله عليه وسلم وقال حلت لكم شفاعتى-
আব্দুসাল্লামহ বিন আব্বাস (রাঃ) হযরত রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম কাহিনী জনসম্মুখে বর্ণনা করতেছিলেন এমন সময় হুজুর তথায় হাজির হয়ে বললেন তোমরা যারা এ আলোচনায় শরীক হয়েছ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত হালাল হয়ে গেছে।
৪) আল্লামা আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে কালভী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বিরচিত كتاب التنوير فى مولد البشير والنذير এবং হযরত ইমাম সুয়ূতী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি রচিত سبيل الهدى فى مولد المصطفى গ্রন্থে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন:
عن ابى الدرداء قال مررت مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى يعلم وقائع ولادته لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم فقال النبى صلى الله عليه وسلم ان الله فتح عليك ابواب الرحمة- وملائكته ستغفرون لكم
হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা তিনি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হযরত আমের আনসারী (রাঃ) এর ঘরে গিয়েছিলেন। তখন হযরত আমের আনসারী (রাঃ) তাঁর সন্তাদের ও তাঁর স্বগোত্রীয় লোকদের সাথে নিয়ে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন এবং বলছিলেন, “এই দিনটি, এই দিনটি” তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন-হে আমের আনসারী!নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমার জন্য রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন। আর ফিরিশতাগন তোমার জন্য শাফা’আত কামনা করেছে। তাছাড়া যারা তোমার মতো আমার জন্মবৃত্তান্ত বর্ণনা করবে, (অর্থাৎ মিলাদ পাঠ করবে তারা) তারা তোমার মতো নাজাত লাভ করবে (আত্ব তানবীর ফি-বাশির ওয়ান নাজির, ফতোয়ায়ে আযীজিয়া)
৬। আরব তথা বিশ্বনন্দিত গীতি কবিতা গাইলেন কা‘ব বিন জুহাইর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু
ان الرسول لنورٌ يسضابه + مهندٌ من سيوف الله مسلولة-
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ র রাসুল যার আলোক প্রভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আল্লাহ র তরবারী সমূহের মাঝে তিনি তীক্ষè কোষমুক্ত তরবারীসম।

তাবেঈ গণের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(১)قال حسن البصرى (التابعى) رضى الله تعالى عنه : لو كان لى مثل جبل احد ذهبا فانفقته على قرأة مولد النبى صلى الله عليه وسلم ـ
হযরত হাসান বসরী (রাঃ) বলেন-যদি আমার কাছে ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো, তাহলে আমি সম্পূূর্ণভাবে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে খরচ করতাম (আন্ নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলম পৃ-০৮)।
(২) হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাঃ) ‘লাক্বাদ যা-আকুম রাসূলুম মিন আন্ফুসিকুম’এই আয়াতের ব্যাখার মধ্যে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা দিয়ে বলেন, - হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার যুগের অবৈধ জন্মের সামান্যতম বংশ স্পর্শ করেনি। পূতঃপবিত্র হিসেবে উত্তম ব্যক্তিদের মাধ্যমে দুনিয়াতে আগমন করেন (মাওয়াহেবে লাদুনিয়া খন্ড-১ম, পৃ-৫৬-৫৭, বিদায়া ওয়ান নিহায়া খন্ড-২য়, পৃ-২৫৫, বায়হাকী ফি শু’আবুল ঈমান খন্ড-১ম, পৃ-১১৮)।
(৩) ইমাম বাকের (রাহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গর্ভাবস্থায় হযরত মা আমেনা (রাঃ) কে স্বপ্নের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হল, গর্ভের মধ্যে যে নবীর শুভাগমন হয়েছে, ঐ নবীর নাম রাখবেন ‘আহমদ’ তথা অধিক প্রশংসিত (সিরাতে হালাভীয়া খন্ড-১ম পৃ-৭২)।
(৪) ইমাম আবু হানিফা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু কর্র্তৃক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন, তিনি বলেন:
وبك المسيح اتى بشيرا مخبرا بصفات حسنك مادحا بعلاك-
অর্থ: হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আপনার আগমনের সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি আপনার সৌন্দর্য আর উচ্চমর্যাদার প্রশংসা করে ছিলেন। ((কসীদায়ে নূমানে পৃ-০৭)।
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi |খোলাফায়ে রাশেদীনের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)


১। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন
হাফেজ ইবনে হাজর আল হাইতুমী রহমাতুসাল্লামহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব আল নে‘মাতুল কুবরা আলাল আলামীন’ শরীফে বর্ণনা করেন-
قَالَ اَبُوْ َبكَرِ الْصِدِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِى فَىْ الْجَنَّةِ-
অর্থ: ইসলামের প্রথম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম খলিফা সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনে একটি দেরহামও ব্যয় করবে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (জাওয়াহিরুল বিহার- ৩/৩৫০ পৃষ্ঠা) রাদিয়াল্লাহু
২। হযরত ওমর ফারুকে আযম রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু কর্তৃক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
قََالَ عُمَرَابْنِ الْخِطَّابٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْىِ اَلْاِسْلِامَ-
অর্থ: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে উদযাপন করল, সে যেন ইসলামকে পুনঃর্জীবিত করল।
৩। হযরত উসমান গণি রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
قال عثمان رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَاَلِهِ وَسَلَّمَ فَكَاَنَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرِ وَحُنَيْنٍ-
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি দেরহামও ব্যয় করবে, সে যেন বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করল।
৪। হযরত শে‘রে খোদা আলী রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাল-
مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبِبًا لِقِرْاَتِهِ لَايَخْرُجُ مِنْ الدُّيْنَا اِلَّا بِالْاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةِ بِغَيْرِ حِسَابِ -
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে, সে যেন উহা উদযাপনের মাধ্যম হল, সে পৃথিবী হতে ঈমানের সাথে প্রস্থান করবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৫। হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
আব্বাস রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু বলেন,
وانت لما ولدت اشرفت الارض وضائب بنورك الافق-
অর্থ: ইয়া রাসুলাসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার যখন শুভাগমন হল, তখন আপনার নূরে পাকের আলোতে সমগ্র আসমান জমিন আলোকিত হয়ে গেল।
ونحن فى ﺫالك الضياء وفى النور- روسبل الرشاد لخترق-
অর্থ: আমরা সেই নূরের আলোতে আছি। আর হেদায়েতের সকল পথে আমরা রয়েছি। সেগুলো অন্ধকারকে দূরীভূত করেছে।
فنقل من صالب الى رحم- واﺫامضى عالم بدا طبق-
অর্থ: ইয়া রাসুলাসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার এমন এক যুগ অতিবাহিত হয়েছিল, সে সময় আপনি পবিত্রময় পিতার রেহেম হতে পবিত্রময় মাতার রেহেমে স্থানান্তরিত হতে ছিলেন এ যুগ চলে যাওয়ার পর আরেক যুগ তথা যুগে যুগে এসেছেন।
وردت نار الخليل مستترا- فى صلبه انت كيف جترك-
অর্থ: ইব্রাহিম খলিলুসাল্লামহর পৃষ্ঠদেশে আপনি তো আগুনের মধ্যে লুকায়িত ভাবে গিয়ে ছিলেন। আপনি যখন আছেন ঐ আগুন দিয়ে কিভাবে আপনি দগ্ধ হতে পারেন। (মাওয়াহিবে লাদুনিয়া- ১/১৭৫ পৃষ্ঠা, বেদায়া ও নেহায়া- ২/২৪০-৪১ পৃষ্ঠা, মাছাবাতা মিন সুন্নাহ- ৭৭ পৃষ্ঠা, নুর নবী- ৩৫ পৃষ্ঠা)
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi | পবিত্র হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)

পবিত্র হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
- أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ الْفَضْلِ الْقَطَّانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ، وَالْحَجَّاجُ، قَالَا: حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا غَيْلَانُ بْنُ جَرِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ صَوْمُ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ ؟ قَالَ: " فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ الْقُرْآنُ " أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ فِي الصَّحِي
(১) অর্থহযরত আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সোমবারে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিঁনি ইরশাদ করেন-সোমবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং সোমবারই আমার প্রতি ওহী নাজিল করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, পৃঃ৩৬৮হাদীছ নং১৯৭৭, মুসনাদে ইমাম আহমদ, খন্ড-৫ম, পৃ-২৮৭ হা.নং২১৫০৮, মিশকাত পৃঃ১৭৯, বায়হাকী শরীফ, খন্ড ১ম, পৃ-৭২, মেরকাত শরহে মিশকাত, খন্ড-৪র্থ, পৃ-২৯১, সুনালুল কোবরা, খন্ড-৪র্থ, পৃ-২৯৩)।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শুভ বেলাদতের বর্ণনা দিতে গিয়ে আরো বলেন- অর্থ
৩৫৫৭ - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَمْرٍو عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِي آدَمَ قَرْنًا فَقَرْنًا حَتَّى كُنْتُ مِنْ الْقَرْنِ الَّذِي كُنْتُ فِيهِ
নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামÑএর আওলাদ হতে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নির্বাচন করেছেন এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম হতে কেনানাহকে নির্বাচন করেছেন এবং কেনানার বংশ হতে কুরাইশ, কুরাইশের বংশ হতে হাশেমকে নির্বাচন করেছেন আর আমাকে হাশেমের আওলাদ হতে নির্বাচন করেছেন। মুসলিম শরীফ, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৫৮; তিরমিযি শরীফ, হাদিস নং ৩৬০৫; মসনদে আহমদ, হাদীস নং ১৭০২৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ১১/৪৭৮, হদীস নং ৩২৩৮৯
এছাড়া হযরত ইমাম তিরমিযি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত জামে তিরমিযি শরীফের ২য় খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম দিয়েছেন :
بَابُ مَا جَاءَ فى مْيلَادُ النَّبِى َصَّلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّ
তিরমিজী শরীফে ২য় খন্ড ২০৪ পৃষ্ঠা মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরতমুত্তালিব বিন আব্দুসাল্লামহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন-এতদসত্ত্বেও কি প্রমাণিত হয়নি যে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং করেছেন এবং তা করতে উম্মতদেরকে নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন যা হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
পবিত্র রবিউল আউওয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার সুবহে সাদিকের সময় সৃষ্টির মূল তথা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুনিয়াতে শুভাগমন করেছেন। প্রিয় নবীজির শুভাগমনের আলোচনা তিঁনি নিজেই সাহবায়ে কিরামের সাথে বর্ণনা করতেন। বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী খন্ড-২য়, পৃ-২০২, মিশকাত শরীফ পৃ-৫১৩ সহ অসংখ্য বিশুদ্ব হাদিস গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)

সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)

মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi | বিভিন্ন নবীদের যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) এর প্রমান ।

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)

সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)

নবীদের যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
১। হযরত আদম আলাইহিস সালাম’র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন ঃ
হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করার পর যখন একাকী বেহেস্তের মধ্যে অবস্থান করেছেন, তখন তাঁর বাম পাজরের হাড় দিয়ে হযরত হাওয়া আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হল। হযরত হাওয়া আলাইহিস সালামকে দেখে হযরত আদম আলাইহিস সালাম সামনে অগ্রসর হতে চাইলে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে নির্দেশ এল তাঁকে আক্বদ এবং মোহরানা ধার্যের পূর্বে স্পর্শ করতে পারবে না। অতঃপর আল্লাহ র হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র মিলাদে পাকের মাধ্যমে আক্বদ সম্পন্ন করা হল। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র উপর ১০ বার দরূদ শরীফ পাঠকে মোহরানা ধার্য করা হল। উক্ত বিবাহর খুৎবার মধ্যে আল্লাহ তা’য়ালা স্বয়ং নিজের প্রশংসা করার পর ইরশাদ করেন :
محمد حبيبى ورسولى انى قد زوجت الاشياء ليدلوا به على وحدنية--- يا ادم وياحوا اسكعا جنبى وكلا من ثمرتي-
অর্থ: হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার প্রিয় ও আমার রাসুল। আমি প্রত্যেক জিনিসকে (জীব) জোড়া জোড়া করে তৈরি করে দিলাম, যাতে এসব আমার ওহাদানিয়াতের ওপর দলিল হয়। (মাদারেজুন নবুয়ত)
আরেক বর্ণনায় এসেছে : হযরত আদম আলাইহিস সালাম হযরত হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহার স্বপ্নের মধ্যে আসলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্বোধন করে বলেন :
مرحبا بك يامحمد صلى الله تعالى وعليك وسلم
অর্থ: হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে ধন্যবাদ, স্বাগতম।
হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহা জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কে? আপনার পরিচয় দিন। উত্তর আসল আমি আবুল বশর আদম আলাইহিস সালাম। হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহা বলেন, আপনি কি চান? উত্তরে বললেন :
ابشرى ياامنة فقد حملت بسيد البشر وفخر ربيعة ومضر-
অর্থ: হে আমেনা খাতুন! সুসংবাদ মানবজাতির সরদার ও রবীয়া ও মুযর গোত্রের গৌরবময়ী নুরানী সত্তাকে তুমি ধারণ করছো।
রেয়াজুল মুযাককেরীনের বর্ণনা দিয়ে মায়ারেজুন নবুয়ত কিতাবে হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু হতে বর্ণনা এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
ان ادم عليه السلام لما نظر الى ساق العرش راى مكتوبا عليه لااله الا الله محمد رسول الله من اذنب ذنبا فلا مغفرة ولاتوبة له الابالصلوة على محمد عبده-
অর্থ: হযরত আদম আলাইহিস সালাম আরশের পায়াতে দৃষ্টিপাত করার পর দেখতে পেলেন, সেখানে লেখা আছে لااله الا الله محمد رسول الله এর পর লেখা আছে, যে ব্যক্তি কোন গুনাহ করবে তার জন্য ক্ষমা ও তওবা নেই; যতক্ষণ না আল্লাহ র হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র উপর দরূদ পড়ে।
২। হযরত নূহ আলাইহিস সালাম‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন:
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম‘র উম্মতদের শাস্তি দেওয়ার নিমিত্তে প্লাবনের মাধ্যমে তাদের ধ্বংস করার অভিপ্রায় আল্লাহ পাক তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের হেফাজতের লক্ষ্যে কিশতী বানানোর নির্দেশ দেন। যখন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম‘র প্রতি কিশতী তৈরীর হুকুম আসল, তখন কিশতীর কাঠামো তৈরীর জন্য নবীদের সংখ্যানুপাতে ১ লক্ষ ২৪ হাজার কাঠ আসে। অলৌকিভাবে প্রত্যেক কাঠে এক এক নবীর নাম অঙ্কিত ছিল। সেই কাঠসমূহ দিয়ে কিশতী নির্মাণ কাজ শেষ করলে নবীদের নাম মুছে যায়। অতঃপর আল্লাহ র পক্ষ থেকে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম‘র প্রতি নির্দেশ আসল যে, আমার (আল্লাহ) নাম নিয়ে শুরু করবে আর আমার বন্ধু (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাম নিয়ে কিশতীর কাজ শেষ করবে। সে অনুযায়ী শুরু করলে আরও ৪টি কাঠের প্রয়োজন দেখা দেয়। পরদিন ৪টি তক্তা ইসলামের চার খলিফার নামে আসে। সেগুলো সংযুক্ত করে দিলে কিশতী তৈরি হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লামা জামী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- “আগর নামে মুহাম্মদ রা নহ আ ওয়ারদে সফী আদম, না আদম ইয়া ফতে তুবা নহ নুহ আয গরক্ব নাজজায়না”।
অর্থ: হযরত আদম আলাইহিস সালাম যদি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র নাম মোবারকের অছিলা নিয়ে দোয়া না করতেন, তাহলে তাঁর তওবা কবুল হত না, আর নবীপাকের নামের অছিলায় হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তুুফান থেকে মুক্তি পেলেন।
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এসে আল্লাহ র হাবীবের প্রতি সালাম জানিয়ে বলেন :السلام عليك ياحبيب الله হযরত আমেনা খাতুন রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহা তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম। আরো বলেন :
ابشرى ياامنة فقد حملت بصاحب النصر والفتوح
অর্থ: সুসংবাদ হে আমেনা! আপনি গর্ভধারণ করেছেন বিজয় এবং বিজয় অর্জনকারীকে।
৩। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন
হযরত আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম একবার স্বপ্নের মধ্যে জান্নাত পরিভ্রমণ করেন। জান্নাতের বিশালতা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ বেহেস্ত কার জন্য এবং এটা কার মালিকানাধীন? উত্তর আসল :
اعيدت محمد صلى الله تعالى عليه واله وسلم وامته-
অর্থ: আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উম্মতের জন্য সৃষ্টি করেছি। অতঃপর হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বেহেস্তের বাগিচার গোড়ার দিকে অবলোকন করে দেখতে পেলেন,
شهادة ان لا اله الا الله-
দ্বারা গাছের গোড়ালী তৈরি আর কান্ডের প্রতি অবলোকন করে দেখতে পেলেন মুহাম্মদ রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বারা কান্ড তৈরি। আর ফুলের দিকে অবলোকন করে দেখতে পেলেন। سبحان الله والحمد لله দ্বারা ফুলের কাঠামো তৈরি আছে।
হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এ স্বপ্ন তাঁর কওমের নিকট বর্ণনা করলে, তারা তাঁর নিকট হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মতের পুরো বিবরণ জানতে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম সেজদায় পড়লেন এবং আল্লাহ র নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র শান-মান সম্পর্কে পুর্ণাঙ্গ বিবরণ অবগত হবার জন্য আবেদন জানালেন। অতঃপর হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র পুর্ণাঙ্গ বিবরণ অবগত করালেন এবং সুসংবাদ দিলেন যে তিনি আপনার ও আপনার বংশধরের মাধ্যমে দুনিয়াতে তাশরীফ আনবেন। এ বর্ণনা শুনে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামের মাথায় হাত রেখে বললেন যে :
يارب اجعلنى من امته صلى الله عليه وسلم
হে আল্লাহ ! আমাকে তাঁর উম্মতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এসেও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লক্ষ্য করে বিবি আমেনাকে সালাম দিয়েছেন।
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (১২৯
৪। হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন:
গর্ভধারণের ৭ম মাসে হযরত ইসমাঈল জবিহুসাল্লামহ এসে আল্লাহ র হাবিবকে বলেন-
السلام عليكم يا امنة من اختاره الله
আমেনা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহা‘র জবাবে তিনি তাঁর পরিচয় দিয়ে বলেন: ابشرى يا امنة فقد حملت بالنبى الرجيح المليح
অর্থ: সুসংবাদ আমেনা আপনি উজ্জ্বল সর্বক্ষেত্রে প্রধান্য বিস্তারকারী নবীকে গর্ভধারণ করেছেন।কথিত আছে, হযরত ইব্রাহিম খলিলুসাল্লামহ ও ইসমাঈল জবিহুসাল্লামহ যখন খানায়ে কা‘বা নির্মাণ করেন তখন তাঁরা আল্লাহ র নিকট এ নবীর জন্য দোয়া করেছিলেন যা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে।
৫। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন
অষ্টম মাসে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর হাবিবকে বললেন,
السلام عليكم ياخير الله
তিনি হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহা‘র নিকট নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি মুসা আলাইহিস সালাম। তিনি সুসংবাদ দেন,
ابشرى ياامنة فقد حملت بمن ينزل عليك القران.
অর্থ: হে আমেনা! আপনাকে সুসংবাদ। আপনি এমন নবীকে গর্ভধারণ করেছেন, যার উপর কোরআন নাযিল হবে।
৬। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন ও কিয়াম ঃ
নবম মাসে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নবীকে এসে সালাম দেন,
السلام عليكم يا خاتم رسول اللهতাঁকে হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহা পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, আমি ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং সুসংবাদ দেন-
ابشرى ياامنة حملت بالنبى الكرم والرسول المعظم وزال عنك لبؤس والعنا والسقم والالم-
অর্থ: হে আমেনা! আপনাকে সুসংবাদ। আপনি এমন একজন নবীকে গর্ভধারণ করেছেন, যিনি নবীদের মধ্যে মহানবী ও রাসুলদের মধ্যে মহান রাসুল। তাঁর মাধ্যমে আপনার থেকে দুঃখ-দুর্দশা, ভয়-ভীতি, ব্যথা-বেদনা উপশম করেছেন।
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُبِينٌ (৬
কিতাবে বর্ণিত আছে সকল পয়গম্বর তাঁদের স্ব স্ব উম্মতের নিকট রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র আগমনের শুভ সংবাদ দিয়েছেন”। যেমন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর কথা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে অর্থ: আমি আমার পরে এমন একজন রাসুলের আগমনের শুভ সংবাদ দিচ্ছি যার পাক নাম হবে ‘আহমদ’। (সুরা সফ-৬)

ফেরেস্তাদের মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন
রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদতের রাতে ফেরেস্তাগণ হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম‘র নেতৃত্বে হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহা‘র ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত ও সালাম পাঠ করে ছিলেন। তাতে বোঝা যায় যে, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সুন্নাতে মালাইকা’। ফেরেস্তাদের মিলাদে আওয়াজ শুনে শয়তান পলায়ন করেছে। অতএব, যারা এ হবে তারা তা হবে।
হযরত সুফিয়া রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহা বলেন, বেলাদতের সাথে সাথেই তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল : لااله الا الله আর ফেরেস্তাগণ যে, তাঁকে السلام عليك يا رسول الله বলেছিলেন আমি নিজ কানে তা শুনেছি। (আন নি’মাতুল কুবরা- ৯-১২ পৃষ্ঠা)

হুরদের মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন ও কিয়াম ঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাসাল্লামমের পবিত্র আগমনলগ্নে বেহেশতের হুরেরা হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবর্ধনা জানিয়েছেন। হযরত আমেনা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা হতে বর্ণিত,
قَالَتْ ثُّمَ اَخَذَنَىِ مَايَاْخُذُ النَّسَاءَ فَسَمِعَتُ وَجَيَةً عَظِيْمَةً ثُمَّ رَايْتُ كَانَ جَنَاحُ طَائِرِ اَبْيَضُ قَدْ مَسَحَ عَلَى فُوَاِدىْ فَذَهَبَ عَنِّى الرَّعْبُ وَكُلُّ وَجْعِ اَجِدْهُ ثُمُّ الْتَفَتَّ فَاِذَا اَنَا بِشَرْبَةِ بَيْضَاَء فَتَنَاوَ لْتُهَا فَاِذَاهِىْ اَعْلَى مِنَ الْعَسْلِ فَاَصَابَنِى نُوْرٌعَالِ ثُمَّ رَايْتُ نِسْوَةَ كَالنَّحْلِ طِوَالًا كَاَنَّهُنَّ مِنْ بَنَاتِ عَبْدِ مَنَافِ يُحَدِّقْنَ بِىْ فَبَيْنَمَا اَنَا اَتَعَجَّبُ وَاَقْوَلُ وَاَغُوْثَاهُ مِنْ اَيْنَ عَلِمْنَ فَقُلْنَ بِىْ نَحْنُ اَسْيَةُ اِمْرَاَةُ فِرْعَوْنَ وَمَرْيَمَ اِبْنَةَ عِمْرَانَ وَهَوُلَاءِ مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ-
অর্থ: তিনি বলেন, মহিলাদের ন্যায় আমার যখন প্রসব বেদনা শুরু হল, তখন আমি একটি বিকট আওয়াজ শুনলাম। যদ্দরুন আমার মধ্যে ভীতি সঞ্চারিত হয়। অতঃপর আমি দেখলাম যে, একটি ধুসর বরণ পাখির পালক আমার হৃদয় ছুঁয়ে দিল, ফলে আমার সব রকম ভয়-ভীতি ও ব্যথা বিদূরিত হতে লাগল। অতঃপর আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই হঠাৎ দেখলাম যে, আমার সামনে সাদা পানীয় (শরবত) পেশ করা হল এবং আমি তা পান করলাম; যা ছিল মধু থেকে মিষ্ট। এরপর একটি নূরের বৃত্ত আমাকে পরিবেষ্টন করল। আমি দেখলাম, এমন কতগুলো সুন্দরী রমনীদেরকে যাদের গঠন প্রকৃতি লম্বায় খেজুর বৃক্ষ ও আবদে মুনাফের কন্যাদের মতো মনে হচ্ছিল। তারা আমাকে তাদের অঙ্গনে নিয়ে গেল। তখন আমি এ ভেবে হয়রান হয়ে গেলাম যে, এরা কোত্থেকে এল এবং তাঁরা এ বেলাদতের সংবাদ কি করে অবগত হল! তখন তাঁরাই বলল, আমি ফেরআউনের বিবি আছিয়া এবং আমি ইমরান তনয়া মরিয়ম আমাদের সাথে এরা হল জান্নাতের হুর। (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলম, আনওয়ারে মুহাম্মদী, ২য় খন্ড, ৩৩পৃষ্ঠা)
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi | কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (২য় পর্ব)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

পবিত্র কুরআনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (৫৮)
১. হে হাবিব! আপনি বলুন, আল্লাহ রই অনুগ্রহ ও তাঁরইদয়া, এবংসেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ। যা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়(সূরাঃইউনুস, আয়াতঃ৫৮)।
২. عن ابن عباس رضي الله عنهما في الآية قال : فضل الله العلم
،ورحمته النبي صلى الله عليه وآله وسلم ، وفي الدر المنثور للحافظ السيوطي (৪/৩৬৭)
অত্র আয়াতের তাফসীর হযরত আব্দুসাল্লামহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- আল্লাহ র অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ)দ্বারা“ইলম বা কোরআন” আর তাঁর দয়া (রাহমাতিহী) দ্বারা “হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ”বুঝানো হয়েছে (সূরাঃআম্বিয়া, আয়াতঃ ১০৭, তাফসীরে আদ্-দুররুল মানসুর, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৩৬৭, তাফসীরে নঈমী-১১তম খন্ড পৃ-৩৬৮, তাফসীরে নূরুল ইরফান পৃঃ ৫৬১, তাফসীরে রূহুল মা’আনী ১০ম খন্ড, পৃঃ ১৪১, তাফসীরে কবীর ১৭ তম খন্ড, পৃঃ ১৩২)।
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ (১০৭)
অর্থ: আর আমি আপনাকে (হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জগতসমূহের প্রতি কেবল রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ১০৭)।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا (১৭)
অর্থ: হে মানবকুল! নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহ র নিকট থেকে সুস্পষ্টপ্রমাণ (রাসূল) এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি উজ্জল আলো অবতীর্ণ করেছি। (সূরাঃ নিসা, আয়াত ঃ ১৭৫)।
(৪) { قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ } رسول يعني محمداً { وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
অর্থ: (নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহ র পক্ষ থেকে একটা ‘নূর’ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং স্পষ্ট কিতাব (কুরআন) এসেছে, নূর দ্বারা “হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ”বুঝানো হয়েছে (সূরাঃমায়িদা, আয়াতঃ১৫, তাফসীরে জালালাইন-পৃ:৯৭, তাফসীরে কবীর-খন্ড:৩য়, পৃ-৩৮৬, তাফসীরে খাজেন, খন্ড-১ম, পৃ-৪৪৪, তাফসীরে মাদারীক-খন্ড ১ম, পৃ-৪১, তাফসীরে রুহুল মা’আনী-খন্ড ৪র্থ, পৃ-৫৭, তাফসীরে বায়দ্বাবী খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯৮, তাফসীরে কুরতুবী খন্ড-৩য়, পৃ-৪৮৫, তাফসীরে রুহুল বায়ান খন্ড-৩য়, পৃ-২৭০
(৫)هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ (৩৩)
তিনিই হন, যিনি আপন রাসূলকে পথ-নির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেন (সূরাঃ তাওবা, আয়াতঃ৩৩)।
عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ (১২৮))لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا
অর্থনিশ্চয় তোমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করেছেন তোমাদের মধ্যেথেকে ঐ রাসূল, যাঁর নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক, তোমাদের কল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুসলমানদের উপর পূর্ণ দয়ার্দ্র, দয়াময় (সূরাঃ তাওবা, আয়াতঃ১২৮)।
(৭) وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُبِينٌ (৬
এবং স্মরণ করুন ! যখন মারিয়াম-তনয় ঈসা বললো, ‘হে বনী ইস্রাঈল! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহ রই রাসূল;আমার পূর্বেকার কিতাব সত্যায়নকারী এবং সম্মানীত রাসূলের সুসংবাদদাতা হয়ে, যিনি আমার পরে তাশরীফ আনবেন, তাঁর নাম হবে ‘আহমদ’ (সূরাঃ সাফ্ফ, আয়াতঃ৬)।
(৮) لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (১৬৪)
অর্থনিশ্চয় আল্লাহ র মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদেরই মধ্যে থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং তাদেরকে পবিত্র করেন। এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন এবং তারা নিশ্চয় এর পূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল (সূরাঃআল্ ইমরান, আয়াত ঃ ১৬৪)।সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে কারীমাতে কোনটিতে প্রত্যক্ষভাবে আবার কোনটিতে পরোক্ষভাবে নবীজির মিলাদের কথা বলা হয়েছ্্ে ।

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)

সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)

মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

eid -e- milad-un nabi | কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (১ম পর্ব)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)

সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)

মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭


بسْمِ اللهِ الرََّحْمَنِ الرَحِيْم
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’য়ালার জন্য যিনি প্রিয় হাবীবের ‘মিলাদ’ তথা শুভাগমনের মাধ্যমে নবুয়তের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। অসংখ্য দুরূদ ও সালাম সেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লামমের উপর যার পবিত্র মিলাদ এর বার্তাবাহক ছিলেন হযরত বাবা আদম আলাইহিস সালাম থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল।
মানবতার কান্ডারী, মুক্তির দিশারী রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২ই রবিউল আওয়াল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে সোমবার সোবহে সাদিকের সময় দুনিয়ায় শুভ আগমন করেন।
সত্যের মাপকাঠি সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিশুদ্ধরূপে বর্ণিত হয়েছে যে, ১২ই রবিউল আওয়াল শরীফ প্রিয় নবী হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর পবিত্র শুভ আগমনের দিন। যেমন, হাফেজ আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ্ (ওফাত ২৩৫ হিজরী) সহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন,
عن جابر وابن عباس انهما قالا ولد رسول الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول-
অর্থঃ হযরত জাবের ও হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর বেলাদত শরীফ ঐতিহাসিক ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের’ (যে বছর আবরাহা তার হস্তিবাহিনী নিয়ে কা’বা শরীফ ধ্বংস করতে এসে নিজে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল) ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার হয়েছিললুগুল আমান ফী শরহি ফাতহির রব্বানী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা-১৮৯, বৈরুত; আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৮৯, বৈরুত]
যুগে যুগে সারা বিশ্বের ঈমানদার মুসলমানগণ শরীয়ত সম্মত উপায়ে মিলাদুন্নবী দিবসে জশ্নে জুলূস ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করে আসছে। এই জুলূস ঈমানদারদের ঈমানী খোরাক। শরীয়তের আলোকে এর দলিল ও ফজিলত আলোকপাত করা হলো।


জশ্নে জুলূস অর্থ ঃ
আরবীতে ‘জশন’ শব্দের অর্থ খুশি বা আনন্দ (লুগাতে কিশওয়ারী) ‘জুলূস’ শব্দটি ‘জলসা’ শব্দের বহুবচন এর অর্থ হলো বসা বা উপবেশন। আর ফার্সিতেÑ ‘জশন’ শব্দের অর্থ উৎসব, রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং ‘জুলূস’ শব্দের অর্থ হল আড়ম্বর, মিছিল করা। (ফরহাঙ্গ-ই-রব্বানী)।

ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থ ঃ
প্রচলিত অর্থে ঈদ মানে খুশি। মিলাদ (ميلاد) অর্থ জন্মকাল বা জন্মের সময়। মাওলিদ (مولد) শব্দটিও অভিন্ন অর্থ বুঝায়। সেই হিসেবে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী অর্থ নবীর জন্মকালের খুশি, পৃথিবীতে তাঁর শুভাগমনকে উপলক্ষ করে বৈধ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করা।
জশ্নে জুলুস ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লাম উদ্যাপন করা একটি বৈধ ও পূণ্যময় আমল ঃ
হাদিস শরীফে আছে-
مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلامِ سُنَّةً حَسَنَةً ، فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ ، وَمَنْ سَنَّ فِي الإِسْلامِ سُنَّةً سَيِّئَةً فَلَهُ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْ
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে ভাল তরিকা প্রচলন করল সে নিজের নেকী, তৎপরে যারা তদানুযায়ী আমল করল তাদের নেকী সে প্রাপ্ত হবে। তাদের নেকী হতে কিছু পরিমাণ কম করা হবে না। (মিশকাত- ৩৩, বায়হাকী ১/৩৮৪)
মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি‘র ১৪৪ পৃষ্ঠায় একটি মারফু হাদিস উদ্ধৃত আছে :
لقد روى عن النبى صلى الله عليه وسلم ما راه المؤمنون حسنا فهو عند الله حسن وما رواه المؤمنون قببيحا فهو عند الله قبيح-
অর্থ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করা হয়েছে। (তিনি বলেছেন) মুমিনগণ যে কাজকে ভাল বিবেচনা করে তা আল্লাহ র নিকট ভাল আর মুমিনগণ যে কাজকে মন্দ বিবেচনা করে, তা আল্লাহ র নিকট মন্দ। (বুখারী ১/২৬৯ পৃষ্ঠার হাশিয়া # ৬)
সম্মানিত পাঠক, ইসলামী শরীয়তের আলোকে পবিত্র জশ্নে জুলুছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, এতে সহযোগীতা করা এবং যোগদান করা অতীব পূণ্যময় ও বরকতময় একটি আমল। এ দাবীর অনুকূলে নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো। তার পূর্বে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানগুলোর কাঠামো ও কর্মসূচী কি রকম হওয়া চাইÑ এ বিষয়টি জানা প্রয়োজন। এ কাঠামো ও কর্মসূচীগুলো নির্ধারণ করার জন্য পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম এবং বুজুর্গানে দ্বীনের উদ্ধৃতি ও মতামতের অনুসরণ প্রয়োজন। যাতে কেউ একথা বলতে না পারে যে, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করা বর্তমান যুগের আবিস্কার। এর ফলে একজন সাধারণ পাঠকও বর্তমান প্রচলিত মিলাদুন্নবী মাহফিলের কাঠামো এবং তুলণামূলক ধারণা পেতে সক্ষম হবে, মিল-অমিলের স্বরূপ খুঁজে পাবে।

ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের কাঠামো ঃ
সম¥ানিত পাঠক, বর্তমান যুগে কেহ কেহ বলে থাকেন, আমাদের দেশে প্রচলিত মিলাদ আর পূর্বযুগের মিলাদ এক নয়। এ’দুয়ের পার্থক্যের একটা মেরুদন্ড নির্মাণ করে উনারা প্রচলিত মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে অবৈধ, হারাম ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে থাকেন। বিষয়টি খোলাসা করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের মিলাদ-মাহফিল বলতে কি বুঝায়? বলবেন, মানুষদের একত্রিত হওয়া, সম্মেলন করা, জুলুস তথা শোভাযাত্রা বের করা, আনন্দ প্রকাশে না'তে রাসুল পরিবেশন করা, নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শান-মান আলোচনা করা, কুরআন-খানি ও দরূদ শরীফ তেলাওয়াত করা, দান-সদকা ও তাবাররুকাতের ব্যবস্থা করা, লাইটিং ও ডেকোরেশন করে মাহফিলটাকে মনোগ্রাহী সাজে সাজানো সর্বোপরী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি প্রেম ভালবাসা প্রদর্শন করা ইত্যাদি। এ-ই আমাদের দেশের বর্তমানকার মিলাদ মাহফিলের কাঠামো ও কর্মসূচী।
এবার পূর্ববর্তী কয়েকজন ওলামায়ে কেরামের প্রদত্ত কাঠামো তুলে ধরা হলোÑ যাদের গ্রহণযোগ্যতা সর্বকালে, সর্বযুগে এবং প্রশ্নাতীত।
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপনের করণীয়তার ক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে পূর্বে উল্লেখিত কার্যাদির উপর সীমাবদ্ধতা থাকা, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনের বিষয়টি বুঝা যায়। যেমন- কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা করা, পানাহার করানো, নবীর শান-মান সম্বলিত কবিতা তথা না'তে রাসুল আবৃত্তি করা এবং এমন সব আধ্যাতিক গজল পরিবেশন করা যেগুলো অন্তরাত্মাকে পারলৌকিক কল্যাণকর নেক আমল করতে তাড়িত করে, জাগিয়ে তোলে”। আল হাভী লিল ফতওয়া, কৃত: আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহ:)।
হাফিজুল হাদিস আল্লামা শামসুদ্দীন মুহাম্মদ সাখাভী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি থেকেও মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের অনুরূপ কাঠামো পাওয়া যায়। তিনি মিশর এবং সিরিয়ার মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের কাঠামো বর্ণনা করার সময় উপরুক্ত কর্মসূচীগুলোর সাথে উত্তম পোশাক পরিধান করা, পানীয় ব্যবস্থা করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, আলোকসজ্জা করা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করেন। আল মাওরেদুর রাভী, ৮৫ কৃত: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:)।
জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ মোল্লা আলী ক্বারী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কর্মসূচীগুলোকে পর্যায়ক্রমে সাজিয়েছেন এভাবে, “বিভিন্ন খতম পড়া, অবিরাম কুরআন তেলাওয়াত করা, উচ্চ আওয়াজে না’ত বা গজল আবৃত্তি করা, বিভিন্ন প্রকারের বৈধ আনন্দ ও খুশি উদ্যাপন করা এবং উন্নত ভোজন সামগ্রী তথা তাবাররুকাতের এন্তেজাম করা”।আল মাওরেদুর রাভী, কৃত: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:)।
সম্মানিত পাঠক, হাদীস শাস্ত্রে আবু জুরআ রাজী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি এর নাম জানেনা এরকম মুহাদ্দিস পৃথিবীতে এসেছে কিনা সন্দেহ। তিনি হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ছিলেন। ৩৭৫ হিজরীতে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। সমসাময়িক এবং পরবর্তী যুগের সমস্ত মুহাদ্দিস উনার নাম শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত করতে বাধ্য হন। মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আনুষ্ঠানিকতার শরয়ী ফয়সালা সম্পর্কে উনাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি যে কথা বলেছিলেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণÑ ‘ওলীমার আয়োজন করা এবং মানুষদেরকে আহার করানো সর্বাবস্থায়ই যখন মোস্তাহাব, তখন মর্যাদাপূর্ণ এই রবিউল আওয়াল মাসে নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নবুয়্যতের নূর প্রকাশিত হওয়ার আনন্দের সাথে উপরোক্ত বিষয়গুলো সংযোজিত হলেতো আর এর বৈধতা ও বরকতময়তার ব্যাপারে প্রশ্নই থাকেনা। সলফে সালেহীন থেকে এ মতামতের বিপরীত কোন কিছুই আমার জানা নেই। (রুহুস সিয়ার)
সম্মানিত পাঠক! মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে যারা এ যুগের আবিস্কার বলে অপপ্রচার চালায় ইমাম আবু জুরআ রাজী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছ থেকে তাদের নতুন করে সবক নেওয়া উচিত। তিনি দু’এক শতাব্দী আগের ইমাম নন বরং সেই হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ। তিনি বিশেষ কাঠামোয় ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে বৈধ বলে ফতোয়া দিয়ে গেছেন।
সুতরাং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপনের কাঠামোগুলো হল, ১. নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আগমনের ঘটনাবলী ও শান-মান আলোচনা করা। ২. সম্মেলন তথা জশ্নে জুলূছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর আয়োজন করা। ৩. কুরআন তেলাওয়াত, না'তে রাসুল ও গজল আবৃত্তি করা। ৪. বেশী বেশী নেক আমল করা। ৫. মানুষদেরকে পানাহার করানো তথা তাবাররুক পরিবেশন ও দান-সদকা করা। ৬. দরূদ শরীফ পাঠ করা। ৭. আলোকসজ্জা করা। ৮. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৯. আনন্দ উদ্যাপন করা। ১০. উন্নত বস্ত্র পরিধান করা ইত্যাদি।
প্রিয় পাঠক, নিম্নের কথাগুলো অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করুন। তাহলে দেখতে পাবেন, সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে প্রত্যেক যুগেই ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচীতে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপিত হয়ে আসছে।

ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অর্ন্তনিহিত তত্ত্ব ঃ
উপরে দশটি বাস্তব কর্মসূচীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভাব্য অন্যান্য বৈধ কর্মসূচীর মাধ্যমেও ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করা যায়। তবে এ সকল কর্মসূচী ও আনুষ্ঠানিকতার নিগুঢ়তত্ত্ব একটাইÑ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে শুভাগমন করা আল্লাহর অপার অনুগ্রহ, নিয়ামত ও রহমত।
যেমন, ইবনে হাজর আসকালানী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
واى نعمة اعظم من النعمة ببروز هذا النبى نبى الرحمة فى ذالك اليوم
অর্থঃ রহমতের এ নবী আমাদের মাঝে শুভাগমন করেছেনÑ এর চেয়ে বড় নিয়ামত আর কি হতে পারে। আল হাভী লিল ফতওয়া, কৃত: আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহ:)।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ان بعث الرسول ليس بواجب عليه سبجانه الا بموجب وعده وفضله وكرمه على عباده-
অর্থঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করা আল্লাহর উপর আবশ্যক নয়। শুধুমাত্র বান্দার উপর অনুগ্রহ ও দয়ার পরশ হয়ে এবং প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুসারেই তাঁকে প্রেরণ করেছেন। আল মাওরেদুর রাভী, কৃত: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী।
আল্লামা আবু শায়েখ রহমাতুসাল্লামহি আলাইহি বলেন :
عن ابن عباس رضي الله عنهما ان الفضل العلم والرحمة محمد صلى الله تعالى عليه وسلم (روح المعانى)
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত, ফজল হল ইলম, আর রহমত হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । (রুহুল মায়ানী ১০/১৪১)
সুতরাং প্রমাণিত হলো, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শুভাগমন আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত, দয়া-করুণা ও অফুরন্ত নিয়ামত স্বরূপ। এ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করাই ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর নিগুঢ় তত্ত্ব ও রহস্য।
ইমাম সুয়ূতী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহিÑএর ভাষায় শুনুন,
فيستحب لنا اظهار الشكر بمولده عليه الصلاة والسلام-
অর্থঃ যেহেতু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শুভাগমন আমাদের জন্য রহমত, সেহেতু তাঁর শুভাগমনের শুকরিয়া আদায় করা আমাদের জন্য মোস্তাহাব। আল হাভী লিল ফতওয়া, কৃত: আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহ:)।
ইবনে হাজর আসকালানী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ما يفهم منه الشكر لله تعالى
অর্থঃ যে সমস্ত কর্মসূচীর মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা যায় তা দিয়েই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা চাই। আল হাভী লিল ফতওয়া, কৃত: আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহ:)।

গত কাল ৯ই রবিউল আওয়াল ঢাকায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উপলেক্ষ্যে জুলুস শেষে মাহফিলে হুজুর কেবলা তাহের শাহ (মাঃ) দোয়া করেন। দোয়াটির Video দেখুন।