বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

eid -e- milad-un nabi| সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈ গণের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)


হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধ হতে ফিরে আসলে, তাঁর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) আরজ করলেন, হুজুর আপনার প্রশংসাসূচক মিলাদ বয়ান করে আমি একটি কসীদা পড়ব। তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদকরলেন, আপনিবলুন!আল্লাহ পাক যেন আপনার মুখ ভেঙ্গে না দেন। তখন হযরতআব্বাস(রাঃ) বলেন-ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনার যখন শুভাগমন, তখন আপনার নূরের আলোতে সমগ্র আসমান-জমিন আলোকিত হয়ে গেল (বিদায়া ওয়ান-নিহায়া খন্ড-২য়, পৃ-২৪০, ২৪১, মাওয়াহিবুল লাদুনীয়া খন্ড-১ম, পৃ-১৭৫, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ পৃ-৭৭, নূর নবী পৃ-৩৫, নশরুতীব পৃ-১৭৫, আল-হাকিম, তিবরানি, খাছায়েছে কুবরা, আনোওয়ারেমোহাম্মাদিয়া)।
(২)وأَحسنُ منكَ لم ترَ قطُّ عيني وَأجْمَلُ مِنْكَ لَمْ تَلِدِ النّسَاءُ خلقتَ مبرأً منْ كلّ عيبٍ كأنكَ قدْ خلقتَ كما تشاء
অর্থশায়েরে রাসূল হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রাঃ) নবীজির সম্মুখে মিলাদ করে বলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমার চক্ষু আপনার থেকে অতীব সুন্দর আর কোন কিছু দেখেনি। আর পৃথিবীর কোন মহিলা আপনার থেকে অতীব সত্ত্বা জন্ম দেয়নি, আপনি সকল দোষত্র“টি থেকে পূত পবিত্র হয়ে সৃষ্টি হয়েছেন, মনে হয় আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সৃষ্টি হয়েছেন (দেওয়ানে হাস্সান বিন সাবিত এবং সিরাতে হালবীয়া ১ম খন্ড, পৃঃ৭৯)
عن ابن عباس رضي الله عنهما كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم فيبشرون ويحمدون اذجاء النبى صلى الله عليه وسلم وقال حلت لكم شفاعتى-
আব্দুসাল্লামহ বিন আব্বাস (রাঃ) হযরত রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম কাহিনী জনসম্মুখে বর্ণনা করতেছিলেন এমন সময় হুজুর তথায় হাজির হয়ে বললেন তোমরা যারা এ আলোচনায় শরীক হয়েছ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত হালাল হয়ে গেছে।
৪) আল্লামা আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে কালভী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বিরচিত كتاب التنوير فى مولد البشير والنذير এবং হযরত ইমাম সুয়ূতী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি রচিত سبيل الهدى فى مولد المصطفى গ্রন্থে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন:
عن ابى الدرداء قال مررت مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى يعلم وقائع ولادته لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم فقال النبى صلى الله عليه وسلم ان الله فتح عليك ابواب الرحمة- وملائكته ستغفرون لكم
হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা তিনি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হযরত আমের আনসারী (রাঃ) এর ঘরে গিয়েছিলেন। তখন হযরত আমের আনসারী (রাঃ) তাঁর সন্তাদের ও তাঁর স্বগোত্রীয় লোকদের সাথে নিয়ে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন এবং বলছিলেন, “এই দিনটি, এই দিনটি” তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন-হে আমের আনসারী!নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমার জন্য রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন। আর ফিরিশতাগন তোমার জন্য শাফা’আত কামনা করেছে। তাছাড়া যারা তোমার মতো আমার জন্মবৃত্তান্ত বর্ণনা করবে, (অর্থাৎ মিলাদ পাঠ করবে তারা) তারা তোমার মতো নাজাত লাভ করবে (আত্ব তানবীর ফি-বাশির ওয়ান নাজির, ফতোয়ায়ে আযীজিয়া)
৬। আরব তথা বিশ্বনন্দিত গীতি কবিতা গাইলেন কা‘ব বিন জুহাইর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু
ان الرسول لنورٌ يسضابه + مهندٌ من سيوف الله مسلولة-
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ র রাসুল যার আলোক প্রভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আল্লাহ র তরবারী সমূহের মাঝে তিনি তীক্ষè কোষমুক্ত তরবারীসম।

তাবেঈ গণের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(১)قال حسن البصرى (التابعى) رضى الله تعالى عنه : لو كان لى مثل جبل احد ذهبا فانفقته على قرأة مولد النبى صلى الله عليه وسلم ـ
হযরত হাসান বসরী (রাঃ) বলেন-যদি আমার কাছে ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো, তাহলে আমি সম্পূূর্ণভাবে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে খরচ করতাম (আন্ নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলম পৃ-০৮)।
(২) হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাঃ) ‘লাক্বাদ যা-আকুম রাসূলুম মিন আন্ফুসিকুম’এই আয়াতের ব্যাখার মধ্যে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা দিয়ে বলেন, - হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার যুগের অবৈধ জন্মের সামান্যতম বংশ স্পর্শ করেনি। পূতঃপবিত্র হিসেবে উত্তম ব্যক্তিদের মাধ্যমে দুনিয়াতে আগমন করেন (মাওয়াহেবে লাদুনিয়া খন্ড-১ম, পৃ-৫৬-৫৭, বিদায়া ওয়ান নিহায়া খন্ড-২য়, পৃ-২৫৫, বায়হাকী ফি শু’আবুল ঈমান খন্ড-১ম, পৃ-১১৮)।
(৩) ইমাম বাকের (রাহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গর্ভাবস্থায় হযরত মা আমেনা (রাঃ) কে স্বপ্নের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হল, গর্ভের মধ্যে যে নবীর শুভাগমন হয়েছে, ঐ নবীর নাম রাখবেন ‘আহমদ’ তথা অধিক প্রশংসিত (সিরাতে হালাভীয়া খন্ড-১ম পৃ-৭২)।
(৪) ইমাম আবু হানিফা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু কর্র্তৃক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন, তিনি বলেন:
وبك المسيح اتى بشيرا مخبرا بصفات حسنك مادحا بعلاك-
অর্থ: হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আপনার আগমনের সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি আপনার সৌন্দর্য আর উচ্চমর্যাদার প্রশংসা করে ছিলেন। ((কসীদায়ে নূমানে পৃ-০৭)।
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন