বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

eid -e- milad-un nabi | যারা মিলাদুন্নবী উদ্যাপনকে অস্বীকার করে তাদের মুরুব্বীদের দৃষ্টিতে মিলাদুন্নবী (দঃ)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী

কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)

যুগে যুগে কালে কালে প্রত্যেকেই ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করেছেন তাদের অধীনে তাদের পরিবেশে তাদের মতো করে। ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করেছেন ভিন্ন পরিভাষার মধ্য দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে। কেউ পালন করেছেন দরূদ শরীফ, কেউ পালন করেছেন মিলাদ শরীফ দিয়ে। আর সবগুলো অনুষ্ঠানই করেছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের মাস রবিউল আওয়ালে। করেছেন এক আর মুখে বলী আউরাচ্ছেন আরেক। আমরা নাকি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদানী করেছি। যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। গোয়ালার দই গোয়ালার নিকট নাকি কখনো টক হয় না। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের দীক্ষা দিয়ে প্রত্যকের পাসাল্লাম ভারী করতে প্রত্যেকেই সচেষ্ট ও যতœবান। আমরা গড্ডলিকা প্রবাহ পরে শুধু সাফাই গিয়ে গেছি। আমাদের সাফাই না-ই শুনলে, এবার তাদের মুখে তাদের সাফাই গাওয়া শুনুন, ওহাবীদের গুরুঠাকুর, পীর মাশায়েখগণের পীর রহমাতুল্লাহ।
(১) হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহ:) কী বলেন-
مشرب فقير كا يہ ہے- كہ محفل مولد ميں شريک ہوتا ہون بلكہ ذريعاۓ بركات سمجہ كر ہرسال منعقد كرتا ہون اور قيام ميں لطف ولذت پاتاہوں-
অর্থ : এ ফকিরের নিয়ম হল- আমি মিলাদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে থাকি বরং মিলাদ অনুষ্ঠানকে বরকত লাভের অছিলা মনে করে প্রত্যেক বৎসরই মিলাদের মজলিস করে থাকি এবং অনুষ্ঠানে কিয়ামের সময় অশেষ আনন্দ ও আরাম উপভোগ করি। (হাফতে মাসয়ালা-১৫ পৃষ্ঠা)
(২) মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর উস্তাদ শাহ আহমদ সাঈদ হানাফী (রাহঃ) তার ‘মালফুজাত’এ বলেছেন-“মিলাদ শরীফ পাঠ করা এবং জন্মবৃক্তান্ত আলোচনা কালে দাঁড়িয়ে (ক্বিয়াম) যাওয়া মুস্তাহাব (মিলাদ ও ক্বিয়ামের ফতোয়া, পৃঃ৭৯, মাকামাতে সাঈদীয়া ওয়া মাকামাতে আহমাদীয়া পৃ-১২৮)।
(৩) দেওবন্দীদের অন্যতম বুযুর্গ মৌলভী আশরাফ আলী থানভী বর্ণনা করেন-হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারকের উছিলায় সমস্ত জগৎ সৃজন হয়েছে (মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , পৃ-১৯২, কৃত;আশ্রাফ আলী থানভী)।
(৪) মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী দেওবন্দীর দৃষ্টিতে মিলাদ ও কি¦য়াম মুস্তাহাব (মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম, ১ম খন্ড, পৃ-৩৩৯)।
(৫) দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাজী সৈয়্যদ আবেদ হুসাইন হানাফী, তিনি প্রত্যেক শুক্রবার মাগরীবের পর মিলাদ শরীফের আয়োজন করতেন। হাজী সাহেবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঐ মিলাদ ও ক্বিয়ামের অনুষ্ঠান জারী ছিল (মিলাদ ও কিয়ামের ফতোয়া, পৃ-৮৬)।
(৬) এ প্রসঙ্গে মক্কা শরীফের তৎকালীন মুফতী এনায়েত আহমদ রহমাতুল¬াহি আলাইহি তার প্রসিদ্ধ তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ গ্রন্থেও ১২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اور بهى علماءے لكها ہے كہ اس محفل ميں ذكر وفات شريف كا نہ چاہے اس لئے كہ يہ محفل واسطے خوشى ميلاد شريف كے منعقد ہوتى ہے ذكر غم جانكاه اس ميں محض نازيبا ہے – حرمين شريف ميں ہرگز اجازت ذكر قصة وفات كى نہیں ہے -
অর্থাৎ-আলেম সমাজ এ কথাই লিখিয়াছেন যে, এই মাহফিলে রাসূলের ওফাত শরীফ বা ইন্তেকালের আলোচনা করা ঠিক নয়, এ জন্য যে এ রবিউল আউয়াল মাসে অনুষ্ঠিত মাহফিল মীলাদুন্নবী সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর খুশি উদযাপন করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মক্কা মদীনা শরীফে রাসূল সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর ওফাত শরীফের আলোচনা করার অনুমতি কখনোই ছিল না।
(৭) ইবনে তাইমিয়া বলেন- (লামাযহাবী)
وَكَذَلِكَ مَايُحْدِثُهُ بَعْضَ النَّاسِ اِمَّا مُضَاهَاةُ لِلْنَصَارَى فِىْ مِيْلَادَ عِيْسَى عَلَيْهِ السَّلَامِ وَاِمَّا مُحَبَّةِ لِلِنَّبِى صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعْظِيْمًا وَاَللهُ قَد ْيُثيْبُهُمْ عَلَى هَذِهِ الْمُحَبَّةِ وَاَلْاِجْتِهَادِ-
অর্থ : এভাবে কিছু লোক মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান করে থাকে। এটার উদ্দেশ্য হয়ত খৃষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য। (তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্ম দিন পালন করে) অথবা তাদের উদ্দেশ্য কেবল হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শন করা। যদি দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আল্লাহ এ ধরনের মুহাব্বত ও প্রচেষ্টামূলক কার্যকলাপে সওয়াব দিবেন। (একতেদাউ সিরাতেল মুস্তাকিম পৃষ্ঠা ২৯৪)
ذكر ابن تيمية في كتابه "اقتضاء الصراط المستقيم في مخالفة أصحاب الجحيم" (২/৬৩৪-৬৩৫)
(৮) সিফায়ে সায়েল গ্রন্থে শাহ আব্দুল গণি দেহলভী সাহেব লেখেছে –
وحق انست كہ نفسى ذكر ولادت انحصرت صلى الله عليہ وسلم وسرور و فاتحة نمودن يعنى ايصال ثوب فتوح سيد الثقلين ازكمال سعادت انسان است-
অর্থ : সত্য কথা হল, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা ফাতিহা পড়ে তাঁর মহান রুহে সওয়াব রেসানী এবং তাঁর মিলাদ শরীফে আনন্দ করার মধ্যেই রয়েছে মানুষের পূর্ণাঙ্গ সৌভাগ্য। (সেফায়ে সায়েল ১৪পৃঃ)
(৯) ফতুয়ায়ে এমদাদিয়ায় উল্লেখ আছে -
والاحتفال بذكر الولادة ان كان خاليا عن البدعات المروجة جائز بل مندوب كسائر اذكاره صلى الله عليه وسلم والقيام عند ذكر ولاته ولادته الشريفه حاشا الله ان يكون كفرا-
অর্থ : রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র বেলাদত শরীফের বর্ণনা করবার জন্যে মাহফিল করা মুস্তাহাব, যখন তা (হিন্দুস্থানে প্রচলিত) ধ্বংসাতœক বিদআত সমূহ হতে পবিত্র হয় এবং তাঁর বেলাদতের বর্ণনা দিতে গিয়ে কিয়াম করা কখনও কুফরী নয়। (ফতুয়ায়ে এমদাদিয়া ৫/২৬৪ পৃষ্ঠা)
কথিত আছে, ফতুয়ায়ে এমদাদিয়ায়, তাদের ভাষায়, “স্বাক্ষর করেছেন শায়খুল হিন্দ মাহমুুদুল হাসান, শায়খুল হাদিস আনোয়ার শাহ কাস্মিরী সহ প্রখ্যাত আলেমগণ।”
১০। আশ্রাফ আলী থানবী ( ওহাবীদের নেতা) ‘তরিকায়ে মিলাদ’ কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় লেখেন : এ সমস্ত ব্যাখ্যাবলি (অর্থাৎ শিরনী, কিয়াম ইত্যাদি) প্রকৃত পক্ষে মুবাহ কাজসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এতে কোন অনিষ্ট নেই এবং সেই জন্য প্রকৃত মিলাদ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোন প্রকার নিষেধ আসতে পারে না। কিন্তু যখন এ সমস্ত মুবাহ পালনের ফলে কোন ফাসাদ এবং অনিষ্ট ঘটাইয়া থাকে তখন সাময়িকভাবে এ সমস্ত কাজ (অর্থাৎ শিরনী, কিয়াম ইত্যাদি) এবং ঐ মাহফিল নাজায়েজ ও নিষিদ্ধ বলা যাবে এবং যেখানে ঐ সমস্ত কাজের সম্ভাবনা নেই তাতে কোন নিষেধ আসতে পারে না।
টীকা : উল্লিখিত মনীষীদের উক্তিতে দেখতে পাওয়া যায়, মিলাদ, মিলাদ শরীফ, দরূদ শরীফ, কিয়াম, মিলাদুন্নবী ইত্যাদি। কিন্তু লক্ষ্যবস্তু সকলেরই এক ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা। তাই একেকজন একেক পরিভাষায় তা প্রকাশ করেছেন।

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আলী কাদেরী
কামিল (হাদিস, ফিক্হ) বি.এ (অর্নাস)
সহ -সুপার, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা (মহিলা শাখা)
মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন