মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০১৬

মদিনা মুনাওয়ারা থেকে বাংলায়



মদিনা মুনাওয়ারা থেকে বাংলায়
মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা

কবি বলেন
চীন আরব হামারা
হিন্দুস্তাঁন হামারা
মুসলিম হ্যায় হাম ওয়াতান হ্যায়
সারা জাহা হামারা
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে যুগে যুগে, কালে কালে মধুর মিষ্টি ষড়যন্ত্রের সৃষ্টি হয়ে আসছে তামাম মুলুকের লোকজন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবেসে হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছে, মুষ্টিময় কিছু কীট-পতঙ্গ হিংসায়, আগুন পুড়ে ভষ্ম হচ্ছে সে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তীর্ণ হয়ে আছে মদিনা থেকে বাংলা অবধি
মক্কা মোকাররমা থেকে শুরু করে মদিনা মনোয়ারা, ইয়ামেন, নজদ, সৌদিয়া, পাকিস্তান, ভারত, পুরো বাংলাদেশে তার তরঙ্গের দোলা এসে লেগেছে
রাফেজী, খারেজী, সালাফী, ওহাবী, মওদুদীদের ষড়যন্ত্রের স্বীকার এবং তাদের মনোবাণের আঘাতে জর্জরিত, যন্ত্রনায় কাতর নবী প্রেমিক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত
রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ সোমবার বেলা দ্বিপ্রহর মধ্যাহ্ন সূর্যের দীপ্ত দহনে মরু প্রকৃতি খা-খা করেছে এমন সময় মদিনা হতে দুই মাইল দূরবর্তী কোবাগিরির শীর্ষে দাঁড়িয়ে একজন ইহুদি দেখতে পেল; একটা ক্ষুদ্র কাফেলা মদিনা পানে অগ্রসর হচ্ছে ব্যাপার বুঝতে তার বাকি রইল না তৎক্ষণাৎ সে উচ্চসুরে চিৎকার করে বলে উঠলে; মদিনাবাসি মুসলমানগণ, প্রস্তুত হও, তোমাদের চিরবাঞ্ছিত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসছেন অমনি শতকণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে উঠলো,
শান্তির রাজা এস
আল্লাহর রাসূল এস
বেহেশতের নিয়ামৎ এস
আমরা তোমায় বরণ করি
গৃহের আঙ্গিনায় পুরমহিলারা অপেক্ষা করছিলেন হযরতকে দেখতে পেয়ে তারাও আজ আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাসিদা গেয়ে উঠলেন,
দেখ চেয়ে ওই চাঁদ উঠেছে
গগন কিনারায়
তার হাসির আভা ছড়িয়ে গেল
নিখিল দুনিয়া
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা হতে নিরুদ্দেশ হয়েছেন, সংবাদ মদিনাবাসিরা জানতে পেরেছিলেন তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমন আসন্ন হয়ে এসেছে তাঁকে অভ্যর্থনা করার জন্য মুসলমানেরা তাই প্রতিদিন প্রত্যুষে কোবা প্রান্তরে এসে সমবেত এবং সূর্যকিরণ অসহনীয় প্রখর না হওয়া পর্যন্ত তথায় অপেক্ষা করতেন, তারপর বাধ্য হয়ে ঘরে ফিরে যেতেন
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে শান্তিতে থাকতে পারলেন কৈ? আপন মুক্তি নিরাপত্তাই তাঁর বৃহত্তম বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াইল রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে শিষ্যবৃন্দসহ নির্বিঘেœ মদিনা গিয়ে আশ্রয় নিলেন এবং তিনি যে তথায় একটি রাষ্ট্রশক্তি গড়ে তুলেছেন, এই চিন্তা কোরেশদিগের অন্তরে দারুণ ক্ষোভ প্রতি হিংসার আগুন ¦লিল
 সে প্রতি হিংসার অনল নিবারণ করতে আসলাম গোত্রের বারিদা নামক একদলপতি সত্তর জন রণদুর্দর্ষ বেদুইনবীর সঙ্গে নিয়ে হযরতের পথ আগলিয়ে অপেক্ষা করছিল কিন্তু বিধিবাম কাল হল তাদের অপেক্ষা কোন যাদুমন্ত্রে এমন হল? একজন নয়, দু-জন নয়- সত্তরজন রক্ত-মাতাল নর-শার্দুল মর্হুতের মধ্যে কিরূপ বশীভূত হয়ে গেল জ্ঞানের অজান্তে রাখে আল্লাহ মারে কে? মারে আল্লাহ রাখে কে? দার্শনিক শাশ^ তত্ত্বটি যেন ফের তথ্য হয়ে ফিরে এল হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করতে এসে নিজেদের ঘৃণিত পশু- জীবনকেই হত্যা করল
এমনি মধুর বেশে হযরত চললেন মদিনা পানে সকল নিগ্রহ, সকল অত্যাচারের মধ্য দিয়ে, শত্রুদলের সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে হযরত ভেসে ঊঠলেন আজ এক অপূর্ব মহিমায় অপরূপ রূপে
এক আকাশের সূর্য এসে আজ আরেক আকাশে উদিত হল উদয়গিরির শিখরে শিখরে, এতদিন ছিল শুধু ঝঞ্ঝা মেঘের তুমুল গর্জন আর সূর্যের পথ রোধের নিষ্ফল প্রয়াস কিন্তু সূর্যের তাতে কতটুকু ক্ষতি হল মেঘলোকের বহু উর্ধ্বপদ দিয়ে গোপনে গোপনে সূর্য আরেক দিগন্তে এসে কখন যে হেসে দাঁড়াল, ঝঞ্ঝা বজ্র-বাদল তা জানতে পারলনা ফল হল যে, উদয়-অচলকে সে খানিকটা দরিদ্র করে আসল
হযরত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে সত্যই জগতের সম্মুখে তুলে ধরলেন যে, নবীরা কোনদিন আপন দেশে সম্মানিত হন না পৃথিবী অস্থায়ী, সুখ অস্থায়ী মানুষ ক্ষণস্থায়ী, ভালোবাসা চিরস্থায়ী
কাজেই মদিনাবাসি মুসলমানদিগকে জব্দ করার জন্য কোরেশগণ বদ্ধপরিকর হল ইহার জন্য সুযোগ জুটতে বিলম্ব হল না হযরতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জাগিয়ে তোলবার উপকরণ তারা মদিনা নগরেই লাভ করল প্রচুর সময়ে আব্দুল্লাহ বিন উবাই নামক খাজ্রাজ বংশীয় সম্ভ্রান্ত প্রতিপত্তিশালী মুনাফেক মদিনায় বাস করত
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত মদিনাবাসিরা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে তাদের প্রধান বানাবে  বলে মনস্থির করেছিল কিন্তু হযরতের শুভাগমনে তামামই ওলট-পালট হয়ে গেল স্বভাবতই তার ক্রোধ গিয়ে পড়ল নিরূপরাধ হযরতের উপর বলা বাহুল্য, কোরেশগণ সুযোগের সদ্ধবহার করতে ছাড়ল না তারা গোপনে পত্র লেখে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে লাগল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও কোরেশদের দুরভিসন্ধিতে যোগদান করল
এদিকে ইহুদিরাও সন্ধিশর্ত মানলনা সর্বপ্রকার ধর্মস্বাধীনতা নাগরিক অধিকার দান করা সত্ত্বে তাদের চিরবিশ^াসঘাতক মন হযরতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠল
হযরত এবার নবরূপে দেখা দিলেন এত দিন তিনি বিধর্মীদের অত্যাচার নীরবে সহ্য করে আসছেন, জন্মভূমি ত্যাগ করেছেন এবার আর না তিনি দেখলেন, নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ বা হিযরত একটা সাময়িক প্রতিক্রিয়া মাত্র দ্বারা স্থায়ী জয়লাভ হয় না বলিষ্ঠ জাগ্রত জীবনের লক্ষণ নয়, বেঁচে থাকতে হলে অত্যাচারীর যালিমকে সক্রিয় ভাবে প্রতিহত করতে হবে
ক্রমেই ইহুদী-কাফেরদের মধ্যে বিভেদ শুরু হল, আনসার মোহাজেরিনদের প্রীতি, প্রেম মমতার বন্ধন সুদৃঢ় হতে লাগল
কী গভীর প্রেম ছিল হযরত আবু বকর  রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর হৃদয় পটে পরিবারবর্গকে শত্রুদের মধ্যে ছেড়ে হযরতের হিযরতের সাথী হলেন আর আবু লাহাব, আবু জাহলের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনায় হিযরত করতে হয়েছে
যুগের বিবর্তনে, সময়ের আবর্তনে কালের পিঠে চড়ে সে বাতাস আজ সুকোমল প্রাণ ভারত উপমহাদেশে এসেও দোল খাচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে সে রাহুগ্রাসে গ্রাস করছে তীব্র থেকে তীব্রতর আঘাত হানছে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়ে যাদের জীবন বিবর্ণ হয়েছে ইবনে তাইমিয়া, আব্দুল ওহাব ইবনে নজদী, মি. মওদুদী, আশ্রাফ আলী থানবী, কাসেম নানতুবী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, খলিল আমহদ আম্বেটবী, ইলিয়াস মেওয়াতী, মুফতী শফী, খারেজী, রাফেজী, সালাফী, লা মাযহাবী প্রমূখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য না পাওয়ার বেদনা যে কত কষ্টময় সেদিন বুঝে ছিল ইহুদিরা আজ বুঝেনি বাতিলেরা তাদেরকে উদ্দেশ করে কবি বলেন-
সবারে বাস  রে ভালো
নইলে মনের কালো মুছবে না রে!
আজ তোর যাহা ভালো
ফুলের মতো দে সবারে
করি তুই আপন আপন,
হারালি যা ছিল আপন
বিলিয়ে দে তুই যারে তারে
যারে তুই ভাবিস ফণী
তারো মাথায় আছে মণি
বাজা তোর প্রেমের বাঁশি
ভবের বনে ভয় বা কারে?
সবাই যে তোর মায়ের ছেলে
রাখবি কারে, কারে ফেলে?
একই নায়ে সকল ভায়ে
যেতে হবে রে ওপারে
নবীর ভালোবাসায় সিঁক্ত হলো যাঁদের হৃদয় ধন্য হল ইহকালে, উজ্জ্বল পরকাল হযরত আব্দুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী আজমেরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহজালাল ইয়মেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা উকাড়ভী, আল্লামা ইকবাল, কাজী নজরুল ইসলাম, আল্লামা শেরে বাংলা আজিজুল হক রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ আজ আশেকে রসুল হৃদয়পটে স্বরণীয় বরনীয় হয়ে আছেন এবং কালের পরিক্রমায় অমর হয়ে থাকবেন কবি বলেন-
নিন্দুকের বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো,
যুগ জনমের বন্ধু আমার, আধাঁর ঘরের আলো
সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে,
নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে
বিশ^জনে নিঃস্ব করে পবিত্রতা আনে,
সাধকজনে বিস্তারিত তার মতো কে জানে?
বিনা মূল্যে ময়লা ধুয়ে করে পরিষ্কার,
বিশ^মাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথা আর?
নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ^হিতের তরে,
আমার আশাপূর্ণ হবে তাহার কৃপাভরে
জীবনকে একটি প্রশ্ন করে এখানেই শেষ করছি
জীবন!
নাই কোনো কিছুর কূল
নবী হল সব কিছুর মূল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন