sunniaqida
বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬
রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬
মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০১৬
বুযুর্গানে কেরামের হাত-পা চুম্বন
বুযুর্গানে কেরামের হাত-পা চুম্বন
মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম কাদেরী
শিষ্টাচার একটি মানবীয় বিশেষগুণ, যার দ্বারা মানুষ নিজেই অন্যের সম্মানের পাত্র হয়। ইসলামে শিষ্টাচার একটি উত্তম আদর্শ বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহর অলীগণের হাত-পা চুমু দেওয়া , তাঁদের পবিত্র বস্তু, চুল, পোশাক-পরিচ্ছেদ ও ব্যবহৃত বস্তু ইত্যাদির সম্মান করা, চুমু দেওয়া এর মধ্যে অন্যতম। নি¤েœ কতিপয় দলীলের ভিত্তিতে তা প্রমাণ করা হল-
১. পবিত্র বস্তুকে চুমু দেয়া জায়েয। পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ ফরমান- وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًاوًّقُوُلُوُاحِطَّةٌ- -অর্থাৎ ওহে বনী ঈসরাইল বায়তুল মুকাদ্দাসের দরজা দিয়ে নতশিরে প্রবেশ কর এবং বল আমাদের গুনাহ মাফ করা হোক। এ আয়াত থেকে অবগত হওয়া গেল যে আম্বিয়া কিরাগণের আরামগাহ বায়তুল মুকাদ্দাসকে সম্মান করা হলো অর্থাৎ বনী ইসরাঈলকে ওখানে নতশিরে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ আয়াত দ্বারা এটাও বোঝা গেল যে, পবিত্র স্থান সমূহে তাওবা তাড়াতাড়ি কবুল হয়।
২. মিশ্কাত শরীফের- اَلْمُصَافَحَةِ وَالْمُعَانَقَةُ অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে-عنْ زَرَاعٍ وَكَانَ فِيْ وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ لَمَّا قَدمْنَا الْمَدِيْنَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا فَنُقَبِّلَ يَدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَه- - অর্থাৎ- হযরত যারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যিনি আব্দুল কায়সের প্রতিনিধিভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, যখন আমরা মদীনায় আসলাম তখন আমরা নিজ নিজ বাহন থেকে তারাতারি অবতরন করতে লাগলাম। অত:পর আমরা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র হাত-পা মোবারক চুমু দিয়েছিলাম। মিশ্কাত শরীফের اَلْكَبَائِرِ وَعَلَامَاْتِ النِّفَاقِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত ছাফওয়ান ইবনে আস্সাল থেকে বর্ণিত আছে- (অতঃপর হুযুর আলাইহিস সালামের হাত ও পা মুবারকে চুমু দেন) ।
* আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে- عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَبَّلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُثْمَانَ ابْنُ مَطْعُوْنٍ وَهُوَمَيِّتٌ - অর্থাৎ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উছমান ইবনে মাতউনকে মৃতাবস্থায় চুমু দিয়েছেন।
৩. ইমাম বুখারী (রা:) ‘যিরা ইবনে আমের থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা‘র দরবারে হাজির হই, কিন্তু আমি তাঁকে চিনতাম না। জনৈক ব্যক্তি আমাকে ইশারা করে বললেন, “ইনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অত:পর আমি তাঁর পবিত্র হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে চুম্বন করতে লাগলাম”।
৪. হযরত সাফওয়ান ইবনে আসসাল (রাঃ) হতে বর্ণিত اِنَّ قَوْمًا مِّنَ الْيَهُوْدِىِّ قَبَّلَ اَيْدِىَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَقَبَّلَ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ - অর্থাৎ, ইহুদীদের একটি গোত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হস্ত-পদ মুবারক চুম্বন করেছে।
৫.হাদীস শরীফে আরো এসেছে-
حدثنا موسي بن اسماعيل قال حدثنا مطر بن عبد الرحمن الا عنق قال حدثني امرأة من صباح عبد القيس يقال لها ام ابان ابنه الوازع عن جدها ان جدها الوازع ابن العامر قال قدمنا فقبا ذلك رسول الله فاخذنا بيده ورجليه نقبلها- -
অর্থাৎ, আব্দুল কায়স প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হযরত ওয়াযে‘ ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, একদা আমি মদীনা শরীফে পদার্পন করলে জনৈক ব্যক্তি বলেন, তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল। অত:পর আমরা হুজুরের পবিত্র হাত ও পদযুগল মোবারক ধরে চুম্বন করলাম।
৬.বুখারী শরীফের আল-আদাবুল মুফরাদে উল্লেখ আছে-
حدثنا عبد الرحمن بن المبارك قال حدثنا سفيان بن حبيب قال حدثنا شعبة قال حدثنا عمر وعن ذكوان عن صهيب قال رأيت عليّا يقبل يد العباس ورجليه-
অর্থাৎ, হযরত সোহাইব (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আলী (রাঃ) কে দেখেছি, তিনি হযরত আব্বাস (রাঃ) কে হাত ও পায়ে চুমু দিচ্ছেন।
ان قبل يد عالم او سلطان عادل بعلمه لا باس به-
যদি আলিম বা ন্যায়পরায়ণ বাদশার হাতে-পায়ে চুমু দেয়া হয় তাঁদের ইলম ও ন্যায়পরায়ণতার কারণে, তাহলে এতে কোন ক্ষতি নেই ।
৭. প্রসিদ্ধ শিফা শরীফে উল্লেখিত আছে-
كَانَ اِبْنُ عُمَرَ يَضَعُ يَدَهْ عَلَى الْمِنْبَرِ الَّذِىْ يَجْلِسُ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْخُطْبَةِ ثُمّ يَضَعُهَاعَلَى وَجْهِهِ-
যে মিম্বরে দাঁড়িয়ে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দিতেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ইবনে উমর (রাঃ) সেটাতে হাত লাগিয়ে মুখে মাখতেন (চুমু দিতেন)।
৮. আল্লামা ইবনে হাজার রচিত ফাতহুল বারী শরহে বুখারীর ষষ্ঠ পারার ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
اِسْتَنْبَطَ بَعْضُهُمْ مِنْ مَشْرُوْعِيَّةِ تَقْبِيْلِ الْاَرْكَانِ جَوَازَ تَقْبِيْلِ كُلِّ مَنْ يَّسْتَحِقُّ الْعَظْمَةَ مْن اَدَمِىٍّ وَغَيْرِهِ نُقِلَ عَنِ الاِمَامْ اَحْمَدَ اَنَّه ‘سُئِلَ عَنْ تَقْبِيْلِ مِنْبَرِ النَّبِىِّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ وَتَقْبِيْلِ قَبْرِهِ فَلَمْ يَرَ بِهِ بَاسًا وَّنُقِلَ عَن ابْنِ اَبِى الصِّنْفِ اليَمَانِى اَحَدِ عُلَمَاءِ مَكَّةَ مِنَ الشَّافِعِيَّةِ جَوَازَ تَقْبِيْلِ الْمُصْحَفِ وَاَجْزَاءِ الْحَدِيْثِ وَقُبُوْرِ الصَّالِحِيْنَ مُلْخَصًا-
অর্থাৎ, কা‘বা শরীফের স্তম্ভগুলোর চুম্বন থেকে কতেক উলামায়ে কিরাম, বুযুর্গাণে দ্বীন ও অন্যান্যদের পবিত্র বস্তুসমুহ চুম্বনের বৈধতা প্রমাণ করেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁর কাছে কেউ জিজ্ঞাসা করেছিল- হুযূর আলাইহিস সালামের মিম্বর বা পবিত্র কবর মুবারকে চুমু দেয়াটা কেমন? তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, কোন ক্ষতি নেই। মক্কা শরীফের শাফেঈ উলামায়ে কিরামের অন্যতম হযরত ইবনে আবিস সিন্ফ ইয়ামানী থেকে বর্ণিত আছে- কুরআন করীম ও হাদীছ শরীফের পাতাসমূহ এবং বুযুর্গানে দ্বীনের কবরসমূহ চুমু দেয়া জায়েয। দুররুল মুখতারের পঞ্চম খন্ড কিতাবুল কারাহিয়াতের শেষ অধ্যায় الاستبراء এর মুসাফাহা পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছেÑ
وَلَا بَاسَ بِتَقْبِيْلِ يَدِا الْعَالِمِ وَالسُّلْطَنِ الْعَادِلِ-
অর্থাৎ, আলিম ও ন্যায়পরায়ণ বাদশার হাতে চুমু দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই। এ জায়গায় ফাত্ওয়ায়ে শামীতে হাকিমের একটি হাদীছ উদ্ধৃত করেছে, যার শেষাংশে বর্ণিত আছে-
قَال ثُمَّ اَذِنَ لَه ‘فَقَبَّلَ رَأْسَه وَرِجْلَيْهِ وقَالَ لَوْ كُنْتُ اَمِرًا اَحَدًا اَنْ تَسْجُدَ لَاحَدٍ لَاَمَرْتُ الْمَرْأَةَ اَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَقَالَ صَحِيْحُ الْاَسْنَادِ-
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছেন। তাই সে তাঁর মস্তক ও পা মুবারক চুমু দিলেন। অতঃপর হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান যদি আমি কাউকে সিজ্দার হুকুম দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে হুকুম দিতাম স্বামীকে সিজ্দা করতে।
প্রখ্যাত ‘তুশেখ’ গ্রন্থে আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (রহঃ) বলেছেন-
اِسْتَنْبَطَ بَعْضُ الْعَارِفِيْنَ مِنْ تَقُبِيْلِ الْحَجَرِالْاَسْوَدِ تَقْبِيْلَ قُبُورِالصَّالِحِيْنَ-
হাজরে আসওয়াদের চুম্বন থেকে কতেক আরেফীন বুযুর্গানে কিরামের মাযারে চুমু দেয়ার বৈধতা প্রমাণ করেছেন।
চুম্বন পাঁচ প্রকারঃ
* আশীর্বাদসূচক চুম্বন। যেমন, বাবা ছেলেকে চুমু দেয়।
* সাক্ষাৎকারের চুম্বন। যেমন, কতেক মুসলমান কতেক মুসলমানকে চুমু দেয়।
* স্নেহের চুম্বন। যেমন, ছেলে মা-বাবাকে দেয়।
* বন্ধুত্বের চুম্বন। যেমন, এক বন্ধু অপর বন্ধুকে চুমু দেয়।
* কামভাবের চুম্বন। যেমন, স্বামী স্ত্রীকে দেয়।
কেউ কেউ ধার্মিকতার চুম্বন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের চুম্বনকে এর সাথে যোগ করেছেন। আদ-দুররুল মুখতারে আলমগীরীর মত পাঁচ প্রকার চুম্বনের বর্ণনা দিয়েছেন। তবে নিম্ন লিখিত বক্তব্যটুকু বর্ধিত করেছেন-
قُبْلَةُ الدِّيَانَةِ لِلْحَجْرِ الْاَسْوَدِ وَتَقْبِيْلُ عُتْبَةِ الْكَعْبَةِ وَتَقْبِيْلُ الْمُصْحَفِ قِيْلَ بِدْعَةِ لَكِنْ رُوِىَ عَنْ عُمَرَ اَنَّه‘ كَانَ يَاْخُذُ الْمُصُحَفِ كُلَّ غَدَاةٍ وَّيْقَبِّلُهْ وَاَمَّا تَقْبِيْلُ الْخَبْزِ فَجَوَّزَ الشَّافِعِيَّةُ اَنَّه‘ بِدْعَةٌ مُّبَاحَةٌ وَّقِيْلَ حَسَنَةٌ مُّلَخَّصًا-
অর্থাৎ দ্বীনদারীর এক প্রকার চুম্বন রয়েছে, সেটা হচ্ছে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন ও কা‘বা শরীফের চৌকাঠে চুম্বন। কুরআন পাককে চুমু দেয়াটা কতেক লোক বিদ‘্আত বলেছেন। কিন্তু হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি প্রতিদিন সকালে কুরআন পাক হাতে নিয়ে চুমু খেতেন এবং রুটি চুমু দিয়াকে শাফেঈ মাযহাবের লোকেরা জায়েয বলেছেন। কেননা এটা বিদ্আতে জায়েযা। অনেকে এটাকে বিদ্‘আতে হাসানা বলেছেন।
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ ফরমান-
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلَّى-
অর্থাৎ, (তোমরা মক্বামে ইব্রাহীমকে নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ কর) মাকামে ইব্রাহীম ওই পাথরকে বলে, যেটার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইব্রাহীম খলীল (আঃ) কা‘বা শরীফ তৈরী করেছেন। তাঁর পবিত্র কদমের বরকতে সেই পাথরের এ মর্যাদা লাভ হলো- সারা দুনিয়ার হাজীরা ওই দিকে মাথানত করে। এ সব ইবারত থেকে প্রতীয়মান হলো- চুম্বন কয়েক প্রকারের আছে এবং পবিত্র বস্তুকে চুমু দেয়াটা দ্বীনদারীর আলামত।
* তারিখে নিশাপুরে বর্ণিত- ‘মহান ব্যাক্তিদের হস্তপদ চুম্বন করা মুস্তাহাব’ ।
* ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ইলমে হাদীসের প্রবক্তা আল্লামা শায়খ শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেছেন- কদমবুচি (পা চুম্বন) করা জায়েজ আছে ।
* হযরত বড়পীর সৈয়্যদ আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) এর বয়স ১৮ বছর, তখন উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বাগদাদ শরীফে যাওয়ার সময় বিদায়ের প্রাক্কালে তাঁর মাকে কদমবুচি করেন, যা ছিল তাঁর মায়ের সাথে শেষ সাক্ষাত। আর মা তাঁকে বিদায়লগ্নে নসিহত করেন, সদা সত্যকথা বলবে কোন দিন মিথ্যা কথা বলবে না ।
ক্রান্তিতে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের পবিত্র বাণী-
مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيْرَنَا وَلَمْ يُوَقِّرْ كَبِيْرَنَا فَلَيْسَ مِنَّا-
অর্থাৎ, যে বড়কে সম্মান করে না এবং ছোটকে ¯েœহ করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। সুতরাং বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই শিক্ষা।
উপর্যুক্ত আলোচনার দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হলো যে, আদব, ভক্তি, সম্মান প্রদর্শণার্থে বুযুর্গানে দ্বীন,পিতা-মাতা, শিক্ষকমন্ডলী, পীর-মাশায়েখগণের হস্ত-পদ চুম্বন অনুরূপ কাবা শরীফ, কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের পাতা সমূহের উপর চুম্বন জায়েয ও বরকতময়। এমনকি বুযুর্গানে দ্বীনের চুল, পোশাক ও অন্যান্য পবিত্র বস্তুর সম্মান করা এবং যুদ্ধকালীন ও অন্যান্য মুসিবতের সময় এগুলো থেকে সাহায্য লাভ করা কুরআন কারীম থেকে প্রমাণিত আছে। কুরআন কারীমে ইরশাদ ফরমান-
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ اِنَّ اَيَةَ مُلْكِهِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ فِيْهِ سَكِيْنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ اَلُ مُوْسَى وَاَلُ هَرُوْنَ تَحْمِلُهُ اَلْمَلَئِكَةُ-
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধর এবং এটা তোমাদের জন্য অবশ্যই কর্তব্য অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, أصحابي كالنجوم بأيّهم اقتديتم اهتديتم -আমার সাহাবীগণ তারকারাজির ন্যায়, তোমরা যাকেই অনুসরন করবে সৎ পথ পাবে।
সুতরাং বুঝা গেল যে, যারা কদমবুচি করাকে বিদ‘আত, শিরক, হিন্দুদের নিয়ম ইত্যাদি বলে থাকে, তারা মূলতঃ পবিত্র কুরআন হাদীসের অপব্যাখ্যাকারী, সমাজে ফেতনা সৃষ্টিকারী, ভ্রান্ত আকী¡দায় বিশ^াসী এবং তারাই ওহাবী নামে আখ্যায়িত। আল্লাহ তা‘য়ালা আমাদের ঈমান ও আমল হেফাজত করুন। আমিন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম কাদেরী
শিষ্টাচার একটি মানবীয় বিশেষগুণ, যার দ্বারা মানুষ নিজেই অন্যের সম্মানের পাত্র হয়। ইসলামে শিষ্টাচার একটি উত্তম আদর্শ বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহর অলীগণের হাত-পা চুমু দেওয়া , তাঁদের পবিত্র বস্তু, চুল, পোশাক-পরিচ্ছেদ ও ব্যবহৃত বস্তু ইত্যাদির সম্মান করা, চুমু দেওয়া এর মধ্যে অন্যতম। নি¤েœ কতিপয় দলীলের ভিত্তিতে তা প্রমাণ করা হল-
১. পবিত্র বস্তুকে চুমু দেয়া জায়েয। পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ ফরমান- وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًاوًّقُوُلُوُاحِطَّةٌ- -অর্থাৎ ওহে বনী ঈসরাইল বায়তুল মুকাদ্দাসের দরজা দিয়ে নতশিরে প্রবেশ কর এবং বল আমাদের গুনাহ মাফ করা হোক। এ আয়াত থেকে অবগত হওয়া গেল যে আম্বিয়া কিরাগণের আরামগাহ বায়তুল মুকাদ্দাসকে সম্মান করা হলো অর্থাৎ বনী ইসরাঈলকে ওখানে নতশিরে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ আয়াত দ্বারা এটাও বোঝা গেল যে, পবিত্র স্থান সমূহে তাওবা তাড়াতাড়ি কবুল হয়।
২. মিশ্কাত শরীফের- اَلْمُصَافَحَةِ وَالْمُعَانَقَةُ অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে-عنْ زَرَاعٍ وَكَانَ فِيْ وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ لَمَّا قَدمْنَا الْمَدِيْنَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا فَنُقَبِّلَ يَدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَه- - অর্থাৎ- হযরত যারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যিনি আব্দুল কায়সের প্রতিনিধিভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, যখন আমরা মদীনায় আসলাম তখন আমরা নিজ নিজ বাহন থেকে তারাতারি অবতরন করতে লাগলাম। অত:পর আমরা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র হাত-পা মোবারক চুমু দিয়েছিলাম। মিশ্কাত শরীফের اَلْكَبَائِرِ وَعَلَامَاْتِ النِّفَاقِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত ছাফওয়ান ইবনে আস্সাল থেকে বর্ণিত আছে- (অতঃপর হুযুর আলাইহিস সালামের হাত ও পা মুবারকে চুমু দেন) ।
* আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে- عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَبَّلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُثْمَانَ ابْنُ مَطْعُوْنٍ وَهُوَمَيِّتٌ - অর্থাৎ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উছমান ইবনে মাতউনকে মৃতাবস্থায় চুমু দিয়েছেন।
৩. ইমাম বুখারী (রা:) ‘যিরা ইবনে আমের থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা‘র দরবারে হাজির হই, কিন্তু আমি তাঁকে চিনতাম না। জনৈক ব্যক্তি আমাকে ইশারা করে বললেন, “ইনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অত:পর আমি তাঁর পবিত্র হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে চুম্বন করতে লাগলাম”।
৪. হযরত সাফওয়ান ইবনে আসসাল (রাঃ) হতে বর্ণিত اِنَّ قَوْمًا مِّنَ الْيَهُوْدِىِّ قَبَّلَ اَيْدِىَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَقَبَّلَ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ - অর্থাৎ, ইহুদীদের একটি গোত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হস্ত-পদ মুবারক চুম্বন করেছে।
৫.হাদীস শরীফে আরো এসেছে-
حدثنا موسي بن اسماعيل قال حدثنا مطر بن عبد الرحمن الا عنق قال حدثني امرأة من صباح عبد القيس يقال لها ام ابان ابنه الوازع عن جدها ان جدها الوازع ابن العامر قال قدمنا فقبا ذلك رسول الله فاخذنا بيده ورجليه نقبلها- -
অর্থাৎ, আব্দুল কায়স প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হযরত ওয়াযে‘ ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, একদা আমি মদীনা শরীফে পদার্পন করলে জনৈক ব্যক্তি বলেন, তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল। অত:পর আমরা হুজুরের পবিত্র হাত ও পদযুগল মোবারক ধরে চুম্বন করলাম।
৬.বুখারী শরীফের আল-আদাবুল মুফরাদে উল্লেখ আছে-
حدثنا عبد الرحمن بن المبارك قال حدثنا سفيان بن حبيب قال حدثنا شعبة قال حدثنا عمر وعن ذكوان عن صهيب قال رأيت عليّا يقبل يد العباس ورجليه-
অর্থাৎ, হযরত সোহাইব (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আলী (রাঃ) কে দেখেছি, তিনি হযরত আব্বাস (রাঃ) কে হাত ও পায়ে চুমু দিচ্ছেন।
ان قبل يد عالم او سلطان عادل بعلمه لا باس به-
যদি আলিম বা ন্যায়পরায়ণ বাদশার হাতে-পায়ে চুমু দেয়া হয় তাঁদের ইলম ও ন্যায়পরায়ণতার কারণে, তাহলে এতে কোন ক্ষতি নেই ।
৭. প্রসিদ্ধ শিফা শরীফে উল্লেখিত আছে-
كَانَ اِبْنُ عُمَرَ يَضَعُ يَدَهْ عَلَى الْمِنْبَرِ الَّذِىْ يَجْلِسُ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْخُطْبَةِ ثُمّ يَضَعُهَاعَلَى وَجْهِهِ-
যে মিম্বরে দাঁড়িয়ে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দিতেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ইবনে উমর (রাঃ) সেটাতে হাত লাগিয়ে মুখে মাখতেন (চুমু দিতেন)।
৮. আল্লামা ইবনে হাজার রচিত ফাতহুল বারী শরহে বুখারীর ষষ্ঠ পারার ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
اِسْتَنْبَطَ بَعْضُهُمْ مِنْ مَشْرُوْعِيَّةِ تَقْبِيْلِ الْاَرْكَانِ جَوَازَ تَقْبِيْلِ كُلِّ مَنْ يَّسْتَحِقُّ الْعَظْمَةَ مْن اَدَمِىٍّ وَغَيْرِهِ نُقِلَ عَنِ الاِمَامْ اَحْمَدَ اَنَّه ‘سُئِلَ عَنْ تَقْبِيْلِ مِنْبَرِ النَّبِىِّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ وَتَقْبِيْلِ قَبْرِهِ فَلَمْ يَرَ بِهِ بَاسًا وَّنُقِلَ عَن ابْنِ اَبِى الصِّنْفِ اليَمَانِى اَحَدِ عُلَمَاءِ مَكَّةَ مِنَ الشَّافِعِيَّةِ جَوَازَ تَقْبِيْلِ الْمُصْحَفِ وَاَجْزَاءِ الْحَدِيْثِ وَقُبُوْرِ الصَّالِحِيْنَ مُلْخَصًا-
অর্থাৎ, কা‘বা শরীফের স্তম্ভগুলোর চুম্বন থেকে কতেক উলামায়ে কিরাম, বুযুর্গাণে দ্বীন ও অন্যান্যদের পবিত্র বস্তুসমুহ চুম্বনের বৈধতা প্রমাণ করেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁর কাছে কেউ জিজ্ঞাসা করেছিল- হুযূর আলাইহিস সালামের মিম্বর বা পবিত্র কবর মুবারকে চুমু দেয়াটা কেমন? তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, কোন ক্ষতি নেই। মক্কা শরীফের শাফেঈ উলামায়ে কিরামের অন্যতম হযরত ইবনে আবিস সিন্ফ ইয়ামানী থেকে বর্ণিত আছে- কুরআন করীম ও হাদীছ শরীফের পাতাসমূহ এবং বুযুর্গানে দ্বীনের কবরসমূহ চুমু দেয়া জায়েয। দুররুল মুখতারের পঞ্চম খন্ড কিতাবুল কারাহিয়াতের শেষ অধ্যায় الاستبراء এর মুসাফাহা পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছেÑ
وَلَا بَاسَ بِتَقْبِيْلِ يَدِا الْعَالِمِ وَالسُّلْطَنِ الْعَادِلِ-
অর্থাৎ, আলিম ও ন্যায়পরায়ণ বাদশার হাতে চুমু দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই। এ জায়গায় ফাত্ওয়ায়ে শামীতে হাকিমের একটি হাদীছ উদ্ধৃত করেছে, যার শেষাংশে বর্ণিত আছে-
قَال ثُمَّ اَذِنَ لَه ‘فَقَبَّلَ رَأْسَه وَرِجْلَيْهِ وقَالَ لَوْ كُنْتُ اَمِرًا اَحَدًا اَنْ تَسْجُدَ لَاحَدٍ لَاَمَرْتُ الْمَرْأَةَ اَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَقَالَ صَحِيْحُ الْاَسْنَادِ-
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছেন। তাই সে তাঁর মস্তক ও পা মুবারক চুমু দিলেন। অতঃপর হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান যদি আমি কাউকে সিজ্দার হুকুম দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে হুকুম দিতাম স্বামীকে সিজ্দা করতে।
প্রখ্যাত ‘তুশেখ’ গ্রন্থে আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (রহঃ) বলেছেন-
اِسْتَنْبَطَ بَعْضُ الْعَارِفِيْنَ مِنْ تَقُبِيْلِ الْحَجَرِالْاَسْوَدِ تَقْبِيْلَ قُبُورِالصَّالِحِيْنَ-
হাজরে আসওয়াদের চুম্বন থেকে কতেক আরেফীন বুযুর্গানে কিরামের মাযারে চুমু দেয়ার বৈধতা প্রমাণ করেছেন।
চুম্বন পাঁচ প্রকারঃ
* আশীর্বাদসূচক চুম্বন। যেমন, বাবা ছেলেকে চুমু দেয়।
* সাক্ষাৎকারের চুম্বন। যেমন, কতেক মুসলমান কতেক মুসলমানকে চুমু দেয়।
* স্নেহের চুম্বন। যেমন, ছেলে মা-বাবাকে দেয়।
* বন্ধুত্বের চুম্বন। যেমন, এক বন্ধু অপর বন্ধুকে চুমু দেয়।
* কামভাবের চুম্বন। যেমন, স্বামী স্ত্রীকে দেয়।
কেউ কেউ ধার্মিকতার চুম্বন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের চুম্বনকে এর সাথে যোগ করেছেন। আদ-দুররুল মুখতারে আলমগীরীর মত পাঁচ প্রকার চুম্বনের বর্ণনা দিয়েছেন। তবে নিম্ন লিখিত বক্তব্যটুকু বর্ধিত করেছেন-
قُبْلَةُ الدِّيَانَةِ لِلْحَجْرِ الْاَسْوَدِ وَتَقْبِيْلُ عُتْبَةِ الْكَعْبَةِ وَتَقْبِيْلُ الْمُصْحَفِ قِيْلَ بِدْعَةِ لَكِنْ رُوِىَ عَنْ عُمَرَ اَنَّه‘ كَانَ يَاْخُذُ الْمُصُحَفِ كُلَّ غَدَاةٍ وَّيْقَبِّلُهْ وَاَمَّا تَقْبِيْلُ الْخَبْزِ فَجَوَّزَ الشَّافِعِيَّةُ اَنَّه‘ بِدْعَةٌ مُّبَاحَةٌ وَّقِيْلَ حَسَنَةٌ مُّلَخَّصًا-
অর্থাৎ দ্বীনদারীর এক প্রকার চুম্বন রয়েছে, সেটা হচ্ছে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন ও কা‘বা শরীফের চৌকাঠে চুম্বন। কুরআন পাককে চুমু দেয়াটা কতেক লোক বিদ‘্আত বলেছেন। কিন্তু হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি প্রতিদিন সকালে কুরআন পাক হাতে নিয়ে চুমু খেতেন এবং রুটি চুমু দিয়াকে শাফেঈ মাযহাবের লোকেরা জায়েয বলেছেন। কেননা এটা বিদ্আতে জায়েযা। অনেকে এটাকে বিদ্‘আতে হাসানা বলেছেন।
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ ফরমান-
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلَّى-
অর্থাৎ, (তোমরা মক্বামে ইব্রাহীমকে নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ কর) মাকামে ইব্রাহীম ওই পাথরকে বলে, যেটার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইব্রাহীম খলীল (আঃ) কা‘বা শরীফ তৈরী করেছেন। তাঁর পবিত্র কদমের বরকতে সেই পাথরের এ মর্যাদা লাভ হলো- সারা দুনিয়ার হাজীরা ওই দিকে মাথানত করে। এ সব ইবারত থেকে প্রতীয়মান হলো- চুম্বন কয়েক প্রকারের আছে এবং পবিত্র বস্তুকে চুমু দেয়াটা দ্বীনদারীর আলামত।
* তারিখে নিশাপুরে বর্ণিত- ‘মহান ব্যাক্তিদের হস্তপদ চুম্বন করা মুস্তাহাব’ ।
* ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ইলমে হাদীসের প্রবক্তা আল্লামা শায়খ শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেছেন- কদমবুচি (পা চুম্বন) করা জায়েজ আছে ।
* হযরত বড়পীর সৈয়্যদ আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) এর বয়স ১৮ বছর, তখন উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বাগদাদ শরীফে যাওয়ার সময় বিদায়ের প্রাক্কালে তাঁর মাকে কদমবুচি করেন, যা ছিল তাঁর মায়ের সাথে শেষ সাক্ষাত। আর মা তাঁকে বিদায়লগ্নে নসিহত করেন, সদা সত্যকথা বলবে কোন দিন মিথ্যা কথা বলবে না ।
ক্রান্তিতে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের পবিত্র বাণী-
مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيْرَنَا وَلَمْ يُوَقِّرْ كَبِيْرَنَا فَلَيْسَ مِنَّا-
অর্থাৎ, যে বড়কে সম্মান করে না এবং ছোটকে ¯েœহ করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। সুতরাং বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই শিক্ষা।
উপর্যুক্ত আলোচনার দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হলো যে, আদব, ভক্তি, সম্মান প্রদর্শণার্থে বুযুর্গানে দ্বীন,পিতা-মাতা, শিক্ষকমন্ডলী, পীর-মাশায়েখগণের হস্ত-পদ চুম্বন অনুরূপ কাবা শরীফ, কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের পাতা সমূহের উপর চুম্বন জায়েয ও বরকতময়। এমনকি বুযুর্গানে দ্বীনের চুল, পোশাক ও অন্যান্য পবিত্র বস্তুর সম্মান করা এবং যুদ্ধকালীন ও অন্যান্য মুসিবতের সময় এগুলো থেকে সাহায্য লাভ করা কুরআন কারীম থেকে প্রমাণিত আছে। কুরআন কারীমে ইরশাদ ফরমান-
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ اِنَّ اَيَةَ مُلْكِهِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ فِيْهِ سَكِيْنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ اَلُ مُوْسَى وَاَلُ هَرُوْنَ تَحْمِلُهُ اَلْمَلَئِكَةُ-
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধর এবং এটা তোমাদের জন্য অবশ্যই কর্তব্য অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, أصحابي كالنجوم بأيّهم اقتديتم اهتديتم -আমার সাহাবীগণ তারকারাজির ন্যায়, তোমরা যাকেই অনুসরন করবে সৎ পথ পাবে।
সুতরাং বুঝা গেল যে, যারা কদমবুচি করাকে বিদ‘আত, শিরক, হিন্দুদের নিয়ম ইত্যাদি বলে থাকে, তারা মূলতঃ পবিত্র কুরআন হাদীসের অপব্যাখ্যাকারী, সমাজে ফেতনা সৃষ্টিকারী, ভ্রান্ত আকী¡দায় বিশ^াসী এবং তারাই ওহাবী নামে আখ্যায়িত। আল্লাহ তা‘য়ালা আমাদের ঈমান ও আমল হেফাজত করুন। আমিন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
কবি নজরুলের লিখনিতে নবী প্রেমের উন্মেষ - একটি বিশ্লেষণ
কবি নজরুলের লিখনিতে নবী প্রেমের উন্মেষ ঃ একটি বিশ্লেষণ
মাও. আ.ম.ম. মাছুম বাকী বিল্লাহ
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙ্গালী জাতির ও বাংলা সাহিত্যের এক মহা সম্পদ। নজরুলের জন্ম বাঙালী মুসলিম সমাজে। সব মহৎ শিল্পী-সাহিত্যিকদের মত তিনি স্ব-জাতি মুসলমানদের জন্য তাঁর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভেবেছেন। বিশেষ করে বাঙালী মুসলিম সমাজের জন্য তাঁর কলম ছিল ক্ষুরধার। আর এ জন্যই তিনি নিজের বিণীত পরিচয়ে “খাদেমুল ইসলাম নজরুল ইসলাম” লিখতেও এতটুকুন কুণ্ঠাবোধ করেননি। তিনি তাঁর লিখনীতে মুসলমানদের নবী বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত, স্বাধীনতার মুক্তির সনদ ও করুণার মূর্ত প্রতীক হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মোজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যে বর্ণনাতীত ভালোবাসা, প্রেম ও শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন তা হয়ত আর কোন বাঙালী সাহিত্যিক দেখিয়ে যাননি। কি তাঁর গান, কি কবিতা সব জায়গায় তিনি রাসূল প্রেমের এক দ্যূতি ছড়িয়েছেন। যা আজো কোটি মুসলমানদের মুখের কথা, প্রাণের কথা। আমার গবেষণায় আমি তাঁকে রাসূল প্রেমে এমন এক মহান সাধক ও চিরবিভোর অবস্থা পেয়েছি যেন তিনি তাঁর সবকিছু নবী প্রেমে সপে দিয়েছেন আর নিজেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন বাধ্য শিষ্য রুপে আত্মপ্রকাশ করাতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।
কবিতায় দরুদ ঃ
কবি নজরুল লিখেন-
উরজ্ য়্যামেন্ নজ্দ হেজাজ্ তাহামা ইরাক শাম
মেসের ওমান্ তিহারান-স্মরি’ কাহার বিরাট নাম,
পড়ে- “সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম”
কবি এখানে ইয়ামেন, নজদ, হিজাজ, ইরাক, ইরান, মিসর, ওমান ও তেহরান সহ বিশ্বব্যাপী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম মোবারক নিয়ে মানুষ কিরুপ শ্রদ্ধা ও পূর্ণভক্তি সহকারে উনার প্রতি দরুদ পড়েন তার উল্লেখ করেন।
কবি আরো বলেন- “আমার সালাম পৌছে দিও নবীজীর রওজায়”
সৃষ্টির প্রাণ ঃ
নজরুল তাঁর কবিতায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সৃষ্টিজগতের দম বা প্রাণ বলে সম্বোধন করেছেন। তাঁর ইনতিকালের পর মক্কা ও মদিনার অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
মক্কা ও মদিনায় আজ শোকের অবধি নাই।
যেন রোজ-হাশরের ময়দান, সব উন্মাদ সম ছুটে !
কাঁপে ঘন ঘন কাবা, গেল গেল বুঝি সৃষ্টির দম টুটে !
আর মিরাজের রজনীতে সৃষ্টিজগতের সেই প্রাণ আল্লাহর কাছে সৃষ্টি জগতের উর্ধ্বে লা মাকামে যাওয়ার কারণেই পৃথিবীর সবকিছু ছিল অচল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এসে দেখেন, তাঁর যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে সম্পন্ন করা অযুর পানি এখনো গড়িয়ে যাচ্ছে, বিছানাটা এখনো উষ্ণ। অথচ ঘুরে এসেছেন অগণিত মাইলের দূরপথ।
আয়াতের অনুবাদ ঃ
আমপারার দুটি আয়াতে আল্লাহ পাক বিশেষভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন। আর নজরুল তার কাব্যিক অনুবাদ করেছেন এইভাবে-
আয়াত-“(হে নবী) আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি” (অনুবাদ- “করিনি কি মহীয়ান মহিমা-বিথার?” আয়াত-“(হে নবী) আপনার পালনকর্তা অতিসত্বর আপনাকে এমন দান করবেন, অতপর আপনি তাতে সন্তুষ্ট হবেন।’ অনুবাদ- “অচিরাৎ তব প্রভু দানিবেন, (সম্পদ) খুশী হইবে যাতে।”
বায়রনের যেমন গ্রীসের প্রতি হৃদয়ের একটা টান ছিল নজরুলের ছিল তেমনি “জাজিরাতুল আরব” এর প্রতি। এই আকর্ষণের কারণ যে ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মভুমি তাতে সন্দেহ নেই। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি নজরুলের সীমাহীন অনুরাগ প্রদর্শন। ‘খেয়াপারের তরণী’ কবিতায় নজরুল এই মহামানবের প্রতি তাঁর অনুরাগ প্রথম প্রদর্শন করেন। এ কবিতায় তিনি বললেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদক্ষতম কান্ডারী, সুতরাং যাঁরা ইসলাম-তরণীর আরোহী, তাদের শত ঝড়-ঝঞ্ঝায় কোন বিপদের আশঙ্কা নেই। সমস্যা-সঙ্কুল এই পৃথিবীর তমসাকীর্ণ সময় ততক্ষণ নির্ভয়ে পাড়ি দিতে পারবে যতক্ষণ তারা হযরতের নির্দেশিত পথে চলবে।
মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ ঃ
১৯৩০ খ্রীস্টাব্দের দিকে নজরুল যখন ইসলামী গান লিখতে শুরু করেন, তখন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর প্রশস্তিমূলক নাত (হযরত মুহাম্মদ দ. এর শানে রচিত কবিতা বা পদ) রচনার সময় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে নজরুল একটি কাব্যগ্রন্থ রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় নজরুল এই কাব্যটি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেন নি। নবীর জীবনী বর্ণনামূলক এই দীর্ঘ প্রবন্ধ কাব্যের ১৭টি পরিচ্ছেদ কবি সম্পন্ন করেন, কিন্তু ১৮তম পরিচ্ছেদটি তিনি সম্পূর্ণ করতে পারেন নি। “সাম্যবাদী” নামে এই পরিচ্ছেদের মাত্র ষোলটি পংক্তি রচিত হয়েছিল। নজরুলের আকস্মিক রোগাক্রান্ত এবং নিশ্চল হওয়ার দরুণ “মরু-ভাস্কর” অসমাপ্ত থেকে যায়। মরুভাস্কর গ্রন্থের ভুমিকায় কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী প্রমীলা বলেন ঃ
“বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর জীবনী নিয়ে একখানী বৃহৎ কাব্যগ্রন্থ রচনার কথা তিনি প্রায়ই বলতেন।”
কবি এ কাব্যগ্রন্থে নবীজী (দ.)’র বাল্যকালের প্রায় পুরো সময়টাকেই সুচারুরুপে এক কাব্যিক অলংকার দিয়ে বর্ণনা করেছেন। বিশ্বনবী (দ.) কে শিশু অবস্থায় যখন মা ‘আমিনা’ বাবা আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যান। ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে মা ‘আমিনার’ ইন্তিকালের হৃদয় বিদারক কাহিনী তুলে ধরেন এভাবে-
“কিছু দূর আসি’ পথ-মঞ্জিলে আমিনা কয়-
বুকে বড় ব্যথা, আহমদ, বুঝি হ’ল সময়
তোরে একলাটি ফেলিয়া যাবার! চাঁদ আমার,
কাদিসনে তুই, রহিল যে রহমত খোদার!”
আমরা দেখি যে, কবি নজরুল রাসূল (দ.) এর শিশুবেলার দুঃখে দুঃখিত ও ব্যথিত হয়েছেন এবং কবি তার বিভিন্ন কবিতায় এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। কবির হৃদয়ে ছিল শিশু এতিম নবীর প্রতি এক অকৃত্তিম আবেগ আর ভালোবাসা। কবি উক্ত কবিতায় লিখেন-
“সব শোকে দিবে শান্তি যে- শৈশব তাহার
কেন এত শোক-দুঃখময়?”
অর্থাৎ যিনি এসেছেন পুরো বিশ্বজাহানের সকলের দুঃখ ঘুচাবার তরে আর তিনিই কিনা এত দুঃখ, ব্যাথা নিয়ে শৈশব পার করেছেন। এ সৃষ্টিকর্তার এক অপার মহিমার লীলাখেলা, যেন এক প্রেম খেলা। বন্ধুর সাথে বন্ধুর, হাবিবের সাথে মাহবুবের, প্রেমাস্পদের সাথে প্রেমিকের। যা বুঝবার ক্ষমতা হয়তো কেবল চক্ষুস্মান প্রিয় প্রেমিক বান্দারাই রাখেন।
আরব সূর্য ঃ
কাজী নজরুল দয়াল নবীজী (দ.) কে আরবের উদিত সূর্য বলে উল্লেখ করে তাঁর গুণগান গেয়েছেন। সূর্য যেমনি করে সমস্ত জগতকে আলো দেয় তেমনি রাসূল (দ.) সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে কল্যাণ ও রহমতের এক ঐশী আলো নিয়ে এসেছেন। কবির রচনায় এসেছে ঃ
জেগে ওঠ তুই রে ভোরের পাখী, নিশি প্রভাতের কবি !
লোহিত সাগরে সিনান করিয়া উদিল আরব-রবি।
তিনি আরো বলেন ঃ
নহে আরবের, নহে এশিয়ার, বিশ্বে সে একদিন,
ধূলির ধরার জ্যোতিতে হ’ল গো বেহেশত জ্যোতিহীন !
কবি তাঁর অন্য কাব্যগ্রন্থে লিখেন ঃ
“উঠেছিল রবি আমাদের নবী, সে মহা-সৌরলোকে,
উমর, একাকী তুমি পেয়েছিলে সে আলো তোমার চোখে!”
দয়াল নবীর আগমনী সংবাদ ঃ
আরবী ভাষায় একটি প্রবাদ আছে যে, “মান আহাব্বা সায়আন আকছারা জিকরুহু” অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন কিছু ভালবাসে সে সব সময় শুধু ঐ বিষয় নিয়েই কথা বলে। আমরা দেখতে পাই যে কবি নজরুল তাঁর অসংখ্য লিখনীতে দয়াল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রশংসায় মেতে উঠেছেন। তাঁর আগমনের কথা বলেছেন, কখনো আবার এতিম বালক নবীজীর করূণ কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আবার কখনো তাঁর অনুপম চরিত্রের জয়গান গেয়েছেন। কবি যেন নবীজীর আগমনে সারা দুনিয়ায় খুশির পয়গাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কবির ভাষায়-
১. “ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়
আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়।
২. “আসিছেন হাবিব-এ খোদা আরশ্-পাকে তাই উঠেছে শোর।”
৩. “তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
এধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙা-রবি দোলে।
‘মুহাম্মদ’ মোবারক নামের প্রশংসা ঃ
কবি নজরুল বিশ্বনবী (দ.) এর নামকরণের ইতিহাসও মরু-ভাস্কর কবিতায় তুলে ধরেছেন। রাসূল পাক (দ.) এর নাম রেখেছেন তাঁর দাদা তৎকালীন মক্কার কুরাইশ দলপতি আব্দুল মুত্তালিব। তিনি তা এভাবে বর্ণনা করেন যে-
“কহিল মুত্তালিব বুকে চাপি’ নিখিলের সম্পদ-
‘নয়নাভিরাম! এ শিশুর নাম রাখিনু ‘মোহাম্মদ’।”
নজরুল তাঁর কবিতায় রাসূল (দ.) এর নাম মুবারকের প্রশংসায় মেতে উঠেছেন। এ যেন এক সত্য প্রেমিক, যে প্রমিক তার প্রেমাস্পদের সবকিছু নিয়েই বলতে চাই। প্রেমাস্পদের সবকিছুই নিয়েই যেন তার বলতে হবে, নতুবা প্রেমিক মনের পরিপূর্ণ তৃপ্তি হয় না। কবি বলেন ঃ
গুঞ্জরি ওঠে বিশ্ব-মধুপ- “আসিল মোহাম্মদ!”
অভিনব নাম শুনিল রে- ধরা সেদিন- “মোহাম্মদ!”
এতদিন পরে এল ধরার- “প্রশংসিত ও প্রেমাস্পদ!”
কবি যেন এই ‘মুহাম্মদ’ নামটির প্রেমি পড়ে গেছেন। এখন শুধু এই নামটি জপাই কবি হৃদয়ের প্রশান্তি। তিনি বলেন-
“নাম মোহম্মদ বোল রে মন নাম আহমদ বোল
যে নাম নিয়ে চাঁদ-সেতারা আসমানে খায় দোল।”
(নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, সম্পাদনা- রশিদুন নবী, প্রকাশনা- নজরুল ইন্সটিটিউট, পৃষ্ঠা-১৭১)
“মোহাম্মদ নাম যত জপি, তত মধুর লাগে
নামে এত মধু থাকে, কে জানিত আগে।”
(নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, রশিদুন নবী কর্তৃক সম্পাদিত, নজরুল ইন্সটিটিউট, ২০১৪ খ্রি., পৃষ্ঠা-১৭৩)
কবি তাঁর “অনাগত” কবিতায় আরো বলেন ঃ
“মোহাম্মদ এ, সুন্দর এ, নিখিল- প্রশংসিত,
ইহার কন্ঠে আমার বাণী ও আদেশ হইবে গীত।”
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (দ.) এর আগমনে ধন্য হয়েছিল মক্কা, মদিনা, আরব, এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্ব। কেননা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজীদে ইরশাদ ফরমান-
“নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত সরুপ প্রেরণ করেছি” কবি বলেন ঃ
“ধন্য মক্কা, ধন্য আরব, ধন্য এশিয়া পুণ্য দেশ,
তোমাতে আসিল প্রথম নবী গো, তোমাতে আসিল নবীর শেষ।”
নবীজী (দ.) কে আল্লাহ পাক দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছেন সকল প্রকার ভেদাভেদ, হানাহানি-মারামারি ভুলিয়ে মানুষের মাঝে প্রেম-প্রীতি আর ভালোবাসা কায়েম করার জন্য। তিনি এই ধরায় এসে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের এক বর্বর যুগের মানুষদের তৈরি করলেন পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে সোনার মানুষ। কবি তাই সেই তরুণ নবীর জয়গান গেয়ে বলেন-
“দেখিতে দেখিতে তরুণ নবীর সাধনা-সেবায়
শত্রু মিত্র সকলে গলিল অজানা মায়ায়।”
“মোহাম্মদের প্রভাবে সকলে হইল রাজী,
সত্যের নামে চলিবে না আর ফেরেব-বাজী !”
মক্কার অধিবাসীরা মহনবী (দ.) কে অসম্ভব রকমের সত্যবাদী বালক হিসেবে জানতো। তারা মনে করতো মুহাম্মদের নিকট যা রাখা হবে তাই আমানত এবং নিরাপদ। সে কখনো মিথ্যা বলেনা। তাই তারা উনার নাম দিয়েছিল “আল-আমিন” অর্থাৎ বিশ্বাসী। কবি নজরুলও এ বিষয়টি এড়িয়ে যাননি। তিনি বলেন-
“ক্রমে ক্রমে সব কোরেশ জানিল- মোহাম্মদ আমীন
করে না কো পূজা কা’বার ভূতেরে ভাবিয়া তাদেরে হীন।”
আল্লাহর সাথে নবীজীর উল্লেখ ঃ
কবি নজরুল তাঁর লেখার অনেক জায়গায় যেখানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা করেছেন সেখানে নবীজী (দ.) এর গুণগাণ গেয়েছেন। যেমনিকরে কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াতের মাঝে আমরা এটা লক্ষ্য করি যে, আল্লাহর নামের সাথে তাঁর প্রিয় হাবিব নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র নাম উল্লেখ আছে। কুরআনের ভাষায়-
১. “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর অনুসরণ কর ও (তাঁর) রাসূলের অনুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দিবেন।
২. “(হে রাসূল) আপনি বলুন যে, তোমরা যদি আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও তাহলে আমার আনুগত্য কর, এতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন”
কবি এই সমস্ত আয়াতের অনুকুলে কাব্যিক আকারে তাঁর ভাব প্রকাশ করেন।
১. “খোদারে আমরা করি গো সেজদা, রুসূলে করি সালাম,
ওরাঁ ঊর্ধ্বের, পবিত্র হয়ে নিই তাঁহাদের নাম,
২. আল্লাহ রসূল বোল্ রে মন আল্লাহ রসূল বোল।
দিনে দিনে দিন গেল তোর দুনিয়াদারি ভোল॥
রোজ কেয়ামতের নিয়ামত এই আল্লাহ-রসূল বাণী
তোর দিল দরিয়ায় আল্লাহ-রসূল জপের লহর তোল ॥
৩. মোহাম্মদ মোস্তফা নামের (ও ভাই) গুণের রশি ধরি
খোদার রাহে সপে দেওয়া ডুববে না মোর তরী ॥
আল্লাকে যে পাইতে চায় হজরতকে ভালবেসে
আরশ কুরসি লওহ কালাম, না চাহিতেই পেয়েছে সে।
রসূল নামের রশি ধ’রে যেতে হবে খোদার ঘরে,
৪. বক্ষে আমার কা’বার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ রসুল।
নবী (দ.) এর প্রতি কবির আকুতি ঃ
কবি তার কবিতায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কখনো তার নয়ন-মণি, কখনো গলার মালা, আবার কখনো চোখের অশ্রুর সাথে তুলনা করে কবি মনের আকুল কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করেছেন। কবি মনে করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই তার সবকিছু। এমনকি কবি মানবজাতির বহুল আকাক্সিক্ষত বেহেশতের আশাও ছেড়ে দিয়েছেন যদি পান সেই মহান প্রেমাস্পদ নবী (দ.)কে। যেমন কবির ভাষায়-
মোহাম্মদ মোর নয়ন-মণি মোহাম্মদ নাম জপমালা।
মোহাম্মদ নাম শিরে ধরি, মোহাম্মদ নাম গলায় পরি,
মোহাম্মদ মোর অশ্রু-চোখের ব্যথার সাথি শান্তি শোকের,
চাইনে বেহেশত্ যদি ও নাম জপ্তে সদা পাই নিরালা॥
একত্মবাদের দিশারী ঃ
কবি তাঁর জীবনে একত্মবাদের দিশারী হিসেবেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একমাত্র কান্ডারী বলে স্বীকার করেছেন। আমরা তাঁর কবিতায় ও গানে এই বিষয়টির স্পষ্ট উল্লেখ দেখতে পায়। যেমন- “তৌহিদেরি মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম।” কবি পরম সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত ও দয়া প্রাপ্তির মাধ্যমও মনে করেছেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। কবি বলেন- “খোদার রহম চাহ যদি নবীজীরে ধর।”
পথ-প্রদর্শক কান্ডারী ঃ
কবি মনে করেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কেউ বেহেশতের সঠিক পথ দেখাতে পারবে না। একমাত্র সহজ-সরল ও সত্যের পথ মানবজাতিকে দেখানোর জন্যই যেন তিনি পরম সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এ ধরাধামে আগমন করেছেন। তিনি বলেন- “ইয়া মোহাম্মদ, বেহেশত হতে খোদায় পাওয়ার পথ দেখাও।” পৃথিবীতে মহান আল্লাহর ঘর বলতে মক্কা নগরীর পবিত্র কাবা শরীফকে বুঝানো হয়ে থাকে। আর হজ্জ ও হজ্জের মৌসুম ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়েও সমগ্র পৃথিবী থেকে দলে দলে মুসলমানরা এই ঘর তাওয়াফসহ পবিত্র জায়গাটি কেন্দ্র করে পূণ্য হাসিলের নিমিত্তে ছুটে আসে। জীবনের একটি পরম আকাক্সক্ষা থাকে কাবার পথে যাওয়ার। কবির মনেও ছিল এইরকম এক সুপ্ত বাসনা। আর তিনি প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছেই প্রকাশ করলেন তাঁর এই গহীন ইচ্ছা। তিনি বলেন-“ইয়া রাসুলুল্লাহ! মোরে রাহ্ দেখাও সেই কাবার।”
শ্রেষ্ঠ নবীর জয়গান ঃ
কবি সমগ্র সৃষ্টিজগতে প্রিয়তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। তিনি মনে করেন তাঁর মতো বিশ্বে দ্বিতীয় মর্যাদাবান ব্যাক্তিত্বের অধিকারী আর কেউ নেই। তিনি বলেন আকাশে সবগুলি তারার মাঝে সূর্য যেমন, সমস্ত নবীর মাঝে আমার নবী তেমন। কবির কাব্যিক ভাষায়-
১. “নবীর মাঝে রবির সম আমার মোহাম্মদ রসুল,
খোদার হাবিব দীনের নকিব বিশ্বে নাই যার সমতুল।”
২. “বাদশারও বাদশাহ্ নবীদের রাজা তিনি।”
মাও. আ.ম.ম. মাছুম বাকী বিল্লাহ
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙ্গালী জাতির ও বাংলা সাহিত্যের এক মহা সম্পদ। নজরুলের জন্ম বাঙালী মুসলিম সমাজে। সব মহৎ শিল্পী-সাহিত্যিকদের মত তিনি স্ব-জাতি মুসলমানদের জন্য তাঁর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভেবেছেন। বিশেষ করে বাঙালী মুসলিম সমাজের জন্য তাঁর কলম ছিল ক্ষুরধার। আর এ জন্যই তিনি নিজের বিণীত পরিচয়ে “খাদেমুল ইসলাম নজরুল ইসলাম” লিখতেও এতটুকুন কুণ্ঠাবোধ করেননি। তিনি তাঁর লিখনীতে মুসলমানদের নবী বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত, স্বাধীনতার মুক্তির সনদ ও করুণার মূর্ত প্রতীক হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মোজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যে বর্ণনাতীত ভালোবাসা, প্রেম ও শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন তা হয়ত আর কোন বাঙালী সাহিত্যিক দেখিয়ে যাননি। কি তাঁর গান, কি কবিতা সব জায়গায় তিনি রাসূল প্রেমের এক দ্যূতি ছড়িয়েছেন। যা আজো কোটি মুসলমানদের মুখের কথা, প্রাণের কথা। আমার গবেষণায় আমি তাঁকে রাসূল প্রেমে এমন এক মহান সাধক ও চিরবিভোর অবস্থা পেয়েছি যেন তিনি তাঁর সবকিছু নবী প্রেমে সপে দিয়েছেন আর নিজেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন বাধ্য শিষ্য রুপে আত্মপ্রকাশ করাতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।
কবিতায় দরুদ ঃ
কবি নজরুল লিখেন-
উরজ্ য়্যামেন্ নজ্দ হেজাজ্ তাহামা ইরাক শাম
মেসের ওমান্ তিহারান-স্মরি’ কাহার বিরাট নাম,
পড়ে- “সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম”
কবি এখানে ইয়ামেন, নজদ, হিজাজ, ইরাক, ইরান, মিসর, ওমান ও তেহরান সহ বিশ্বব্যাপী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম মোবারক নিয়ে মানুষ কিরুপ শ্রদ্ধা ও পূর্ণভক্তি সহকারে উনার প্রতি দরুদ পড়েন তার উল্লেখ করেন।
কবি আরো বলেন- “আমার সালাম পৌছে দিও নবীজীর রওজায়”
সৃষ্টির প্রাণ ঃ
নজরুল তাঁর কবিতায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সৃষ্টিজগতের দম বা প্রাণ বলে সম্বোধন করেছেন। তাঁর ইনতিকালের পর মক্কা ও মদিনার অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
মক্কা ও মদিনায় আজ শোকের অবধি নাই।
যেন রোজ-হাশরের ময়দান, সব উন্মাদ সম ছুটে !
কাঁপে ঘন ঘন কাবা, গেল গেল বুঝি সৃষ্টির দম টুটে !
আর মিরাজের রজনীতে সৃষ্টিজগতের সেই প্রাণ আল্লাহর কাছে সৃষ্টি জগতের উর্ধ্বে লা মাকামে যাওয়ার কারণেই পৃথিবীর সবকিছু ছিল অচল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এসে দেখেন, তাঁর যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে সম্পন্ন করা অযুর পানি এখনো গড়িয়ে যাচ্ছে, বিছানাটা এখনো উষ্ণ। অথচ ঘুরে এসেছেন অগণিত মাইলের দূরপথ।
আয়াতের অনুবাদ ঃ
আমপারার দুটি আয়াতে আল্লাহ পাক বিশেষভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন। আর নজরুল তার কাব্যিক অনুবাদ করেছেন এইভাবে-
আয়াত-“(হে নবী) আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি” (অনুবাদ- “করিনি কি মহীয়ান মহিমা-বিথার?” আয়াত-“(হে নবী) আপনার পালনকর্তা অতিসত্বর আপনাকে এমন দান করবেন, অতপর আপনি তাতে সন্তুষ্ট হবেন।’ অনুবাদ- “অচিরাৎ তব প্রভু দানিবেন, (সম্পদ) খুশী হইবে যাতে।”
বায়রনের যেমন গ্রীসের প্রতি হৃদয়ের একটা টান ছিল নজরুলের ছিল তেমনি “জাজিরাতুল আরব” এর প্রতি। এই আকর্ষণের কারণ যে ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মভুমি তাতে সন্দেহ নেই। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি নজরুলের সীমাহীন অনুরাগ প্রদর্শন। ‘খেয়াপারের তরণী’ কবিতায় নজরুল এই মহামানবের প্রতি তাঁর অনুরাগ প্রথম প্রদর্শন করেন। এ কবিতায় তিনি বললেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদক্ষতম কান্ডারী, সুতরাং যাঁরা ইসলাম-তরণীর আরোহী, তাদের শত ঝড়-ঝঞ্ঝায় কোন বিপদের আশঙ্কা নেই। সমস্যা-সঙ্কুল এই পৃথিবীর তমসাকীর্ণ সময় ততক্ষণ নির্ভয়ে পাড়ি দিতে পারবে যতক্ষণ তারা হযরতের নির্দেশিত পথে চলবে।
মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ ঃ
১৯৩০ খ্রীস্টাব্দের দিকে নজরুল যখন ইসলামী গান লিখতে শুরু করেন, তখন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর প্রশস্তিমূলক নাত (হযরত মুহাম্মদ দ. এর শানে রচিত কবিতা বা পদ) রচনার সময় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে নজরুল একটি কাব্যগ্রন্থ রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় নজরুল এই কাব্যটি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেন নি। নবীর জীবনী বর্ণনামূলক এই দীর্ঘ প্রবন্ধ কাব্যের ১৭টি পরিচ্ছেদ কবি সম্পন্ন করেন, কিন্তু ১৮তম পরিচ্ছেদটি তিনি সম্পূর্ণ করতে পারেন নি। “সাম্যবাদী” নামে এই পরিচ্ছেদের মাত্র ষোলটি পংক্তি রচিত হয়েছিল। নজরুলের আকস্মিক রোগাক্রান্ত এবং নিশ্চল হওয়ার দরুণ “মরু-ভাস্কর” অসমাপ্ত থেকে যায়। মরুভাস্কর গ্রন্থের ভুমিকায় কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী প্রমীলা বলেন ঃ
“বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর জীবনী নিয়ে একখানী বৃহৎ কাব্যগ্রন্থ রচনার কথা তিনি প্রায়ই বলতেন।”
কবি এ কাব্যগ্রন্থে নবীজী (দ.)’র বাল্যকালের প্রায় পুরো সময়টাকেই সুচারুরুপে এক কাব্যিক অলংকার দিয়ে বর্ণনা করেছেন। বিশ্বনবী (দ.) কে শিশু অবস্থায় যখন মা ‘আমিনা’ বাবা আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যান। ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে মা ‘আমিনার’ ইন্তিকালের হৃদয় বিদারক কাহিনী তুলে ধরেন এভাবে-
“কিছু দূর আসি’ পথ-মঞ্জিলে আমিনা কয়-
বুকে বড় ব্যথা, আহমদ, বুঝি হ’ল সময়
তোরে একলাটি ফেলিয়া যাবার! চাঁদ আমার,
কাদিসনে তুই, রহিল যে রহমত খোদার!”
আমরা দেখি যে, কবি নজরুল রাসূল (দ.) এর শিশুবেলার দুঃখে দুঃখিত ও ব্যথিত হয়েছেন এবং কবি তার বিভিন্ন কবিতায় এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। কবির হৃদয়ে ছিল শিশু এতিম নবীর প্রতি এক অকৃত্তিম আবেগ আর ভালোবাসা। কবি উক্ত কবিতায় লিখেন-
“সব শোকে দিবে শান্তি যে- শৈশব তাহার
কেন এত শোক-দুঃখময়?”
অর্থাৎ যিনি এসেছেন পুরো বিশ্বজাহানের সকলের দুঃখ ঘুচাবার তরে আর তিনিই কিনা এত দুঃখ, ব্যাথা নিয়ে শৈশব পার করেছেন। এ সৃষ্টিকর্তার এক অপার মহিমার লীলাখেলা, যেন এক প্রেম খেলা। বন্ধুর সাথে বন্ধুর, হাবিবের সাথে মাহবুবের, প্রেমাস্পদের সাথে প্রেমিকের। যা বুঝবার ক্ষমতা হয়তো কেবল চক্ষুস্মান প্রিয় প্রেমিক বান্দারাই রাখেন।
আরব সূর্য ঃ
কাজী নজরুল দয়াল নবীজী (দ.) কে আরবের উদিত সূর্য বলে উল্লেখ করে তাঁর গুণগান গেয়েছেন। সূর্য যেমনি করে সমস্ত জগতকে আলো দেয় তেমনি রাসূল (দ.) সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে কল্যাণ ও রহমতের এক ঐশী আলো নিয়ে এসেছেন। কবির রচনায় এসেছে ঃ
জেগে ওঠ তুই রে ভোরের পাখী, নিশি প্রভাতের কবি !
লোহিত সাগরে সিনান করিয়া উদিল আরব-রবি।
তিনি আরো বলেন ঃ
নহে আরবের, নহে এশিয়ার, বিশ্বে সে একদিন,
ধূলির ধরার জ্যোতিতে হ’ল গো বেহেশত জ্যোতিহীন !
কবি তাঁর অন্য কাব্যগ্রন্থে লিখেন ঃ
“উঠেছিল রবি আমাদের নবী, সে মহা-সৌরলোকে,
উমর, একাকী তুমি পেয়েছিলে সে আলো তোমার চোখে!”
দয়াল নবীর আগমনী সংবাদ ঃ
আরবী ভাষায় একটি প্রবাদ আছে যে, “মান আহাব্বা সায়আন আকছারা জিকরুহু” অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন কিছু ভালবাসে সে সব সময় শুধু ঐ বিষয় নিয়েই কথা বলে। আমরা দেখতে পাই যে কবি নজরুল তাঁর অসংখ্য লিখনীতে দয়াল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রশংসায় মেতে উঠেছেন। তাঁর আগমনের কথা বলেছেন, কখনো আবার এতিম বালক নবীজীর করূণ কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আবার কখনো তাঁর অনুপম চরিত্রের জয়গান গেয়েছেন। কবি যেন নবীজীর আগমনে সারা দুনিয়ায় খুশির পয়গাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কবির ভাষায়-
১. “ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়
আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়।
২. “আসিছেন হাবিব-এ খোদা আরশ্-পাকে তাই উঠেছে শোর।”
৩. “তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
এধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙা-রবি দোলে।
‘মুহাম্মদ’ মোবারক নামের প্রশংসা ঃ
কবি নজরুল বিশ্বনবী (দ.) এর নামকরণের ইতিহাসও মরু-ভাস্কর কবিতায় তুলে ধরেছেন। রাসূল পাক (দ.) এর নাম রেখেছেন তাঁর দাদা তৎকালীন মক্কার কুরাইশ দলপতি আব্দুল মুত্তালিব। তিনি তা এভাবে বর্ণনা করেন যে-
“কহিল মুত্তালিব বুকে চাপি’ নিখিলের সম্পদ-
‘নয়নাভিরাম! এ শিশুর নাম রাখিনু ‘মোহাম্মদ’।”
নজরুল তাঁর কবিতায় রাসূল (দ.) এর নাম মুবারকের প্রশংসায় মেতে উঠেছেন। এ যেন এক সত্য প্রেমিক, যে প্রমিক তার প্রেমাস্পদের সবকিছু নিয়েই বলতে চাই। প্রেমাস্পদের সবকিছুই নিয়েই যেন তার বলতে হবে, নতুবা প্রেমিক মনের পরিপূর্ণ তৃপ্তি হয় না। কবি বলেন ঃ
গুঞ্জরি ওঠে বিশ্ব-মধুপ- “আসিল মোহাম্মদ!”
অভিনব নাম শুনিল রে- ধরা সেদিন- “মোহাম্মদ!”
এতদিন পরে এল ধরার- “প্রশংসিত ও প্রেমাস্পদ!”
কবি যেন এই ‘মুহাম্মদ’ নামটির প্রেমি পড়ে গেছেন। এখন শুধু এই নামটি জপাই কবি হৃদয়ের প্রশান্তি। তিনি বলেন-
“নাম মোহম্মদ বোল রে মন নাম আহমদ বোল
যে নাম নিয়ে চাঁদ-সেতারা আসমানে খায় দোল।”
(নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, সম্পাদনা- রশিদুন নবী, প্রকাশনা- নজরুল ইন্সটিটিউট, পৃষ্ঠা-১৭১)
“মোহাম্মদ নাম যত জপি, তত মধুর লাগে
নামে এত মধু থাকে, কে জানিত আগে।”
(নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, রশিদুন নবী কর্তৃক সম্পাদিত, নজরুল ইন্সটিটিউট, ২০১৪ খ্রি., পৃষ্ঠা-১৭৩)
কবি তাঁর “অনাগত” কবিতায় আরো বলেন ঃ
“মোহাম্মদ এ, সুন্দর এ, নিখিল- প্রশংসিত,
ইহার কন্ঠে আমার বাণী ও আদেশ হইবে গীত।”
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (দ.) এর আগমনে ধন্য হয়েছিল মক্কা, মদিনা, আরব, এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্ব। কেননা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজীদে ইরশাদ ফরমান-
“নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত সরুপ প্রেরণ করেছি” কবি বলেন ঃ
“ধন্য মক্কা, ধন্য আরব, ধন্য এশিয়া পুণ্য দেশ,
তোমাতে আসিল প্রথম নবী গো, তোমাতে আসিল নবীর শেষ।”
নবীজী (দ.) কে আল্লাহ পাক দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছেন সকল প্রকার ভেদাভেদ, হানাহানি-মারামারি ভুলিয়ে মানুষের মাঝে প্রেম-প্রীতি আর ভালোবাসা কায়েম করার জন্য। তিনি এই ধরায় এসে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের এক বর্বর যুগের মানুষদের তৈরি করলেন পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে সোনার মানুষ। কবি তাই সেই তরুণ নবীর জয়গান গেয়ে বলেন-
“দেখিতে দেখিতে তরুণ নবীর সাধনা-সেবায়
শত্রু মিত্র সকলে গলিল অজানা মায়ায়।”
“মোহাম্মদের প্রভাবে সকলে হইল রাজী,
সত্যের নামে চলিবে না আর ফেরেব-বাজী !”
মক্কার অধিবাসীরা মহনবী (দ.) কে অসম্ভব রকমের সত্যবাদী বালক হিসেবে জানতো। তারা মনে করতো মুহাম্মদের নিকট যা রাখা হবে তাই আমানত এবং নিরাপদ। সে কখনো মিথ্যা বলেনা। তাই তারা উনার নাম দিয়েছিল “আল-আমিন” অর্থাৎ বিশ্বাসী। কবি নজরুলও এ বিষয়টি এড়িয়ে যাননি। তিনি বলেন-
“ক্রমে ক্রমে সব কোরেশ জানিল- মোহাম্মদ আমীন
করে না কো পূজা কা’বার ভূতেরে ভাবিয়া তাদেরে হীন।”
আল্লাহর সাথে নবীজীর উল্লেখ ঃ
কবি নজরুল তাঁর লেখার অনেক জায়গায় যেখানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা করেছেন সেখানে নবীজী (দ.) এর গুণগাণ গেয়েছেন। যেমনিকরে কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াতের মাঝে আমরা এটা লক্ষ্য করি যে, আল্লাহর নামের সাথে তাঁর প্রিয় হাবিব নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র নাম উল্লেখ আছে। কুরআনের ভাষায়-
১. “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর অনুসরণ কর ও (তাঁর) রাসূলের অনুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দিবেন।
২. “(হে রাসূল) আপনি বলুন যে, তোমরা যদি আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও তাহলে আমার আনুগত্য কর, এতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন”
কবি এই সমস্ত আয়াতের অনুকুলে কাব্যিক আকারে তাঁর ভাব প্রকাশ করেন।
১. “খোদারে আমরা করি গো সেজদা, রুসূলে করি সালাম,
ওরাঁ ঊর্ধ্বের, পবিত্র হয়ে নিই তাঁহাদের নাম,
২. আল্লাহ রসূল বোল্ রে মন আল্লাহ রসূল বোল।
দিনে দিনে দিন গেল তোর দুনিয়াদারি ভোল॥
রোজ কেয়ামতের নিয়ামত এই আল্লাহ-রসূল বাণী
তোর দিল দরিয়ায় আল্লাহ-রসূল জপের লহর তোল ॥
৩. মোহাম্মদ মোস্তফা নামের (ও ভাই) গুণের রশি ধরি
খোদার রাহে সপে দেওয়া ডুববে না মোর তরী ॥
আল্লাকে যে পাইতে চায় হজরতকে ভালবেসে
আরশ কুরসি লওহ কালাম, না চাহিতেই পেয়েছে সে।
রসূল নামের রশি ধ’রে যেতে হবে খোদার ঘরে,
৪. বক্ষে আমার কা’বার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ রসুল।
নবী (দ.) এর প্রতি কবির আকুতি ঃ
কবি তার কবিতায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কখনো তার নয়ন-মণি, কখনো গলার মালা, আবার কখনো চোখের অশ্রুর সাথে তুলনা করে কবি মনের আকুল কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করেছেন। কবি মনে করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই তার সবকিছু। এমনকি কবি মানবজাতির বহুল আকাক্সিক্ষত বেহেশতের আশাও ছেড়ে দিয়েছেন যদি পান সেই মহান প্রেমাস্পদ নবী (দ.)কে। যেমন কবির ভাষায়-
মোহাম্মদ মোর নয়ন-মণি মোহাম্মদ নাম জপমালা।
মোহাম্মদ নাম শিরে ধরি, মোহাম্মদ নাম গলায় পরি,
মোহাম্মদ মোর অশ্রু-চোখের ব্যথার সাথি শান্তি শোকের,
চাইনে বেহেশত্ যদি ও নাম জপ্তে সদা পাই নিরালা॥
একত্মবাদের দিশারী ঃ
কবি তাঁর জীবনে একত্মবাদের দিশারী হিসেবেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একমাত্র কান্ডারী বলে স্বীকার করেছেন। আমরা তাঁর কবিতায় ও গানে এই বিষয়টির স্পষ্ট উল্লেখ দেখতে পায়। যেমন- “তৌহিদেরি মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম।” কবি পরম সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত ও দয়া প্রাপ্তির মাধ্যমও মনে করেছেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। কবি বলেন- “খোদার রহম চাহ যদি নবীজীরে ধর।”
পথ-প্রদর্শক কান্ডারী ঃ
কবি মনে করেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কেউ বেহেশতের সঠিক পথ দেখাতে পারবে না। একমাত্র সহজ-সরল ও সত্যের পথ মানবজাতিকে দেখানোর জন্যই যেন তিনি পরম সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এ ধরাধামে আগমন করেছেন। তিনি বলেন- “ইয়া মোহাম্মদ, বেহেশত হতে খোদায় পাওয়ার পথ দেখাও।” পৃথিবীতে মহান আল্লাহর ঘর বলতে মক্কা নগরীর পবিত্র কাবা শরীফকে বুঝানো হয়ে থাকে। আর হজ্জ ও হজ্জের মৌসুম ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়েও সমগ্র পৃথিবী থেকে দলে দলে মুসলমানরা এই ঘর তাওয়াফসহ পবিত্র জায়গাটি কেন্দ্র করে পূণ্য হাসিলের নিমিত্তে ছুটে আসে। জীবনের একটি পরম আকাক্সক্ষা থাকে কাবার পথে যাওয়ার। কবির মনেও ছিল এইরকম এক সুপ্ত বাসনা। আর তিনি প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছেই প্রকাশ করলেন তাঁর এই গহীন ইচ্ছা। তিনি বলেন-“ইয়া রাসুলুল্লাহ! মোরে রাহ্ দেখাও সেই কাবার।”
শ্রেষ্ঠ নবীর জয়গান ঃ
কবি সমগ্র সৃষ্টিজগতে প্রিয়তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। তিনি মনে করেন তাঁর মতো বিশ্বে দ্বিতীয় মর্যাদাবান ব্যাক্তিত্বের অধিকারী আর কেউ নেই। তিনি বলেন আকাশে সবগুলি তারার মাঝে সূর্য যেমন, সমস্ত নবীর মাঝে আমার নবী তেমন। কবির কাব্যিক ভাষায়-
১. “নবীর মাঝে রবির সম আমার মোহাম্মদ রসুল,
খোদার হাবিব দীনের নকিব বিশ্বে নাই যার সমতুল।”
২. “বাদশারও বাদশাহ্ নবীদের রাজা তিনি।”
The Mujaddid of the Fifteenth Century
The Mujaddid of the
Fifteenth Century
Mohammad Feroz Khan*
Mujaddid
means reformer, reviver and protector from all evil deeds. In every century at
the beginning, Allah Subhanahu Ta’la sends mujaddid for the nation for the sake
of His devotee to protect them from all kinds of evils and superstitions. There
are many mujaddid-e Ahle Sunnat who took important contribution on Islam by
performing or reforming the quiet sunnah with the help of the Quran, Sunnah,
Ijma, Kias etc. to remove from the society all kinds of bad influences and
revive the Sunnat-e Rassol Sallallahu Alaihi wasallam. In this regards the
passage will describe about the contribution of the mujaddid of fifteenth
century.
In
Hadith Sharif Rasool-e pak Sallallahu Alaihi Wasallam says that in every
century Allah Subhanahu Ta’la sends a mujaddid to reform the sunnat-e Rasool
Sallallahu Alaihi Wasallam which is almost lifeless. He appears as a Mujaddid
and a Gawse Jaman at a time who creates new activities for the welfare of Deen
and Islam. He will revive the Deen through reformation.
Sayyiduna
Abu-Hurayrah Radi ALLAHu Anho narrates that Sayyiduna Rasoolullah Sallallaho
Alaihi wa Sallam said:
ان الله تعالى يبعث لهذه الامة على رأس كلّ مائة
سنة من يجدد لها دينها
Verily Allah will
send at the beginning of every century such a person for this Ummah who will
revive and restore their religion (Deen).
If
we analyze the life of Hazratul Allama Rahnuma-e Shariat wa Tariqat Hadi-e Deen
wa Millat Awlad-e Rasool Murshid-e Barhaque Alhaj Shahsufi Syed Muhammad Tayyab
Shah Rahmatuallahi Alaihi, we will realize and rocognise that Huzur Qibla is
the mujaddid of the fifteenth century without any doubt. He was simultaneously
a Gawse Jaman and a Mujaddid as a beloved vicegerent of Allah. Hazratul
Allama Alhaj Shahsufi Syed Muhammad
Tayyab Shah Rahmatuallahi Alaihi was born on 1336 Hizri. From childhood there
was some signs in Huzur Qibla that Huzur Qibla was the beloved of Allah
Subhanahu Ta’la. Huzur Qibla was the great model of Huzur Karim Sallallahu
Alaihi Wasallam. He was one of the greatest representatives of Shariat and Tariqat.
In
practising Tariqat he was the follower of Quaderia Tariqa. Spreading the
Quaderia Tariqa Huzur Qibla took great contribution to raise the greatness and
superiority of this Tariqa. Quaderia Silsila is available not only in Arab
country but also in the Asia Subcontinent by the great activities of Huzur
Qibla Rahmatulla Alaihi. Huzur Qibla was the “Madarjat Awlia” means the
qualities of awlia was appeared from the childhood when Huzur Qibla was in a
tender age. In the divine touch of Huzur Qibla the garden of Shariat has
bloomed and then widen the field of Tariqat. Huzur Qibla was become a worthy
Alim-e Deen by the supervision of Huzur Qibla’s father and Pir-Murshid Hazratul
Allama Hafiz Qari Alhaj Syed Ahmad Shah Sirikoti Rahmatullahi Alaihi. Huzur
Qibla dedicated himself to spread the Dinee knowledge to the pathless and
confounded people. Huzur Qibla was the teacher and Principal of Jamia Rahmania
Islamia Madrasah which was established by Khwaja Abdur Rahman Chowrabi
Rahmatullahi Alaihi. After that he was selected as a ‘Chief Khalifa’ of
“Silsila-e Alia Quaderia” in 1958. Huzur Qibla converted confounded Muslims to
a Sunni-Allah fearing Muslim in Bangladesh, Yangon and many other places where
Huzur Qibla has gone and also spread the Quaderia Silsila by performing Bayat.
Launching
Gawsia Committee Bangladesh: The great foremost work of Huzur Qibla is
establishing Gawsia Committee Bangladesh in 1986. By launching this unpolitical
organization, Huzur Qibla has made a bridge between the people and religious
work. People from all kinds, participating themselves in religious work by
learning shariat and Tariqat. Through Gawsia Committee, people enlighten
themselves with self-purification, salvation and righteousness. Infect Gawsia
Committee is a revolution of social reformation. It is not only active in
Bangladesh but also spreading its branches all over the world. The planning of
organizing Gawsia Committee is 1. by taking Bayat and Sobok from kamil pir and
murshid of silsila-e Alia Quaderia including this school of self-purification.
2. Becoming the member of Gawsia Committee they will take such a training so
that they can become a bright person who free from all kinds of egoism, envy,
allurement and pride. 3. Raising consciousness about the belief of sunniat and
misconception of wrong sect, one will make himself as a perfect leader by
giving necessary fundamental education and training. 4. Performing duties of
sunniat and tariqat specially trustful to the regulation of Murshid-e Barhaque,
madrasah and Anjuman. Through the teaching of fundamental regulation of Gawsia
Committee anyone makes himself Insan-e-Kamil (Perfect Human). So the person who
become the member of Gawsia Committee, we do not expect from him/her any evil
deed. It is the great power of Awlia-e Keram who saves his follower from all
kinds of wrongdoing and inhuman acts. By this way, Huzur Qibla has made the
society become peaceful, prevail goodwill and free from jealousy.
Reforming
Jashne Julus-e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam: Reviving or
establishing one sunnah in the society by anyone, he will take the award of
dignity as same as 100 martyrs.
The Prophet Sallallahu Alaihi Wasallam said, "For him who holds fast to my sunnah at the time of corruption of my ummah, is the reward of a hundred martyrs" (Bayhaqi).
Jashne Julus- e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam is such kind of sunnah revived by Alhaj Shahsufi Syed Muhammad Tayyab Shah Rahmatuallahi Alaihi. So we can undoubtedly say that Huzur Qibla is a Mujaddid of this century as well as fifteenth century. Huzur Qibla ordered to Anjuman-e-Rahmania Sunnia Alia to celebrate the Mawlid un Nabi Sallallahu Alaihi Wasallam or appearance/ arrival day in this earth of Huzur Pak Sallallahu Alaihi Wasallam in 1974. The chief khalifa of Huzur Qibla, Alhaj Nur Mohammad Al-Quaderi Rahmatullahi’s presiding, the first Jashne Julus- e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam was held in Chittagong in Bangladesh. After that Huzur Qibla presided the Jashne Julus in 1976. Eventually every year magnificent Jashne Julus- e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam is held everywhere in the country as well as all over the world.
Now Jashne Julus- e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam is the identification of sunniat. There was a period when Anjuman-e-Rahmania Sunnia Alia first started Jashne Julus- e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam, so called different darbars and olamas stand against this sunnah by showing different logic. But Islam wants document. No one proved that Jashne Julus-e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam is against sunnah rather they accepted it as a Bidath-e Hasanah. Jashne Julus- e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam has been held as universally admitted and observed which is the reformation of Huzur Qibla Rahmatullahi Alaihi. It was held from 1976-1986 with the leadership of Huzur Qibla. Now Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam is a govt. holiday not only in Bangladesh but also in all Muslim country. Now at this time every sunni mashaek arranges ‘Jashne Julus’ by its own darbar and even they declare that they are the founder of Jashne Julus- e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam. On the other hand, many confounded theorists celebrated ‘Jashne Julus’ which has made this reformation universal. Today ‘Jashne Julus’ is included in Islamic Programme. The significant of ‘Jashne Julus’ is overwhelming. The situation of celebrating Jashne Julus- e Eid-e Miladunnabi Sallallahu Alaihi Wasallam was not the same when Huzur Qibla first declared to observe this day maintaining Quran and Sunnah.
Reviving
Tariqa-e Quaderia: Tariqa-e Quaderia originated by Hazrat Abdul Quader
Jilani Rahmatullahi Ta’la Alaihi is the main branch of Islami Spiritual world.
Huzur Allama Alhaj Shahsufi Syed Muhammad Tayyab Shah Rahmatuallahi Alaihi was
the most fortunate chief Khalifa and reformer of this Tariqa. This Tariqa has
regained its life by his hand. The seed which was sown by Hazrat Syed Ahmad
Shah Sirikoti Rahmatullahi Alaihi, that turned into a big banyan tree with
abundance of fruits and flowers by the hands of Huzur Qibla. In Quaderia Tariqa
one of the reformation Huzur Qibla were newly brought in Khatam-e Gawsia
Sharif, Gyaravi Sharif and Baravi Sharif. Established by Huzur Gawse Pak Radi
Allahu Anhu this Khateme Gawsia Sharif and Gyaravi Sharif are being celebrated today home to home, area to
area in day-night. This religious programmes are occupied by the Huzur Qibla’s
Holy Hand. Especially Huzur Qibla added various fascinating audible na’at-e
rasool and Kasida sharif with this Khatam Sharif has made this programme more
attractive.
Contribution
in Deene Education: In spreading of Deen or Islam there is a great
contribution of Huzur Qibla Rahmatullahi Ta’ala Alaihi. Huzur Qibla made a tour
from North-West Frontier Province of Pakistan to Bangladesh only for 1 or 2
weeks in every year. It is not easy to say that within a short period of time
Huzur Qibla established so many Madrasahs and Khaneka Sharif in this country.
Today in Bangladesh influenced by Huzur Qibla there are almost 100 madrasahs
running on with well restrained. From these madrasahs every year thousands of
Alim-e deen (Taleeb-e Elam) is spreading in all sectors in all over the country
as well as throughout the world. From these madrasahs, the student are engaged
in not only spreading sunniat but also work as a doctor, engineer,
architecture, judge, magistrate, barrister and so on. By finding the true way
of Islam everybody is running into it to take the accurate taste of Islam.
Jamia Ahmadia Sunnia Alia and Jamia Quaderia Tayebia Alia are the example of
such kinds of Madrasah of those. These madrasah are contributing to make
society peaceful, stable and collision free.
In
the above discussion we can say that if Allah subhanahu Ta’la did not send
Huzur Qibla Syed Muhammad Tayyab Shah Rahmatullahi Ta’la Alaihi in the world,
the world would prevail darkness with batil or wrong sect specially in
sub-continent. We are fortunate to become the follower of this great Pir and
Murshid who is the mujaddid of the fifteenth century.
Reference
1. Tarjuman-e Ahle Sunnat,
(2013): Chittagong, Anjuman Press
2. Gawsia Committee Bangladesh: What and Why,
(2012): Chittagong, Anjuman Press
Hazrat Syed Ahmad Shah Sirikoti (Radi Allahu Anhu)
Hazrat Syed
Ahmad Shah Sirikoti (Radi Allahu Anhu)
Jain Uddin Ahmad*
Allah selected Islam for all kinds
of people in the world. Allah Said, ‘Who investigates religion without Islam?
Never taken this religion from him and he will damage in Akhirat’. Allah Ta’ala
sent many prophets to preach the Islam age by age. After departure of our holy
prophet Hazrat Muhammad (Sallallahu Alaihi Wa sallam) the continuation of
coming prophets was ended. For this the great responsibility of preaching Islam
was given on Sahaba’ e keram, Tabeyi, Tabe Tabeyi and Awlia-e keram. Before the
holy departure of awlia- keram this Indian Sub-continent was sang in
disappointed. So, some awlia- keram preached Islam or saving disappointed
people. In the magnificent sea of awlia-e keram Hazrat Ahmad Shah Sirikoti was
a bright pearl. He showed the right path of sunniat to the people of
Bangladesh, Pakistan and Yangon. He saved the Muslim people from Batil sects by
preaching Islam. If he didn’t come in Bangladesh, We would sink in disappointed.
Holy Brith: Kutubul Awlia, Baniye Jamea Hazrat
Syed Ahmad Shah Sirikoti (Rahmatullahi Alaihi) was born at Sirikot of Hazara
district of north east frontier province of Pakistan in Hizri 1271/72, 1852
A.D. He was the 39th offspring of our holy prophet Hazrat Muhammad
(Sallallahu Alaihi Wasallam). His father name was Syed Sadar Shah (Rahmatullahi
Alaihi). He was the Awlad-e Rasul of Imam Hossain ( Radiallahu Ta’ala Anhu).
Educational life: He memorized the holy Quran in his
childhood. After that, he acquired many knowledge in Quran, Hadith, Fiqh,
Wassol-e Fiqh, Naho, Saraf, Mantiq, Akaid and Philosophy. He also acquired deep
knowledge in Tafsir of the holy Quran and Hadith. He could not satisfied by
this knowledge. So he went to the capital city, Delhi in India. He studied
there in some Madrasahs. He studied higher class of those Madrasah. After that,
he went to Africa continent which was very far from his homeland.
Character: From his boyhood, Hazrat Ahmad Shah
Sirikoti (Rahmatullahi Alaihi) possessed a moral and pure character. He was
self-reliant and kind hearted. He never showed temper with any person. Without
this, he had not any kinds of bad habits like oppress, nepotism and
malpractice. He conquered the hearts of people by his talking, behaviour and
humanity. His main aim was to find satisfaction of Allah and His prophet
(Sallallahu Alaihi Wasallam). If his character reflects to us, we shall be a
native person.
Setting his holy feet in Chittagong: Awlia-e keram travels many places
to preach Allah’s message and prophet Hazrat Muhammad (Sallallahu Alaihi
Wasallam)’s Hadith. When a nation sinks into darkness, at that time, awlia-e
keram goes there to show people the right path. Like this, the terrible time of
people in Chittagong, the founder of the ‘Daily Azadi’ newspaper, Abdul khalek
engineer requested Syed Ahmad Shah Sirikoti ( Radiallahu Ta’ala Anhu) to come
in Chittagong. So, Hazrat Syed Ahmad Shah Sirikoti (Radiallahu Ta’ala Anhu) set
his holy feets in the land of Chittagong in 1937 A.D. After setting his holy
feet in Chittagong he removed all kinds of Batil sects. He established there
Asia – known sunni religious educational institution Jamea Ahmadia Sunnia Alia,
Chittagong. From this Madrasah every year exit many Alem-e Din. They serve a
great service for sunniat. Hazrat Ahmad Shah Sirikoti gave great teaching of
Shariat and Tarikat. He was well-known as many names in Chittagong. He was
known as ‘Shimantopir’ in south Chittagong. Because his birth land was in the
frontier province. But he was famous as ‘Peshwari Saheb’. Somewhere he was
known as ‘Sirikoti Saheb’. In a word, he was a well-known person in all over
the Chittagong.
Taking Bayat and gaining khilafat : He
acquired extraordinary knowledge in many subjects of Shariat and Tariqat . But
he could not think himself a perfect person. So, he searched murshid (guide)
for earning Bateni (hidden) knowledge. Once his wife informed him, “There is a
great saint named Abdur Rahman Chowravi (Radi allahu anhu)’’. So, Hazrat Syed
Ahmad Shah Sirikoti (Rahmatullahi
Alaihi) went to Hazrat Abdur Rahman Chowravi (Radi Allahu Anhu) to see
him . When he looked him for a single moment, his heart leaps up with joy. Once
Hazrat Syed Ahmad Shah Sirikoti (Radi Allahu Anhu) requested Hazrat Abdur
Rahman Chowravi (Radi Allahu Anhu) to accept him as a Murid (disciple). Hazrat
Abdur Rahman Chowravi (Radi allahu anhu) accepted him as a Murid. After
accepting him as a Murid he started to do difficult work for his Murshid’s satisfaction.
He went to the high hills of Sirikot Sharif to collect fuel wood and he brought
that through his head. He performed this work continually for 12 years. At
first, Hazrat Abdur Rahman Chowravi (Radi Allahu Anhu) didn’t talk anything for
that work. At last, he forbade Hazrat Ahmad Shah Sirikoti (Radi allahu anhu)
for that work. Hazrat Syed Ahmad Shah Sirikoti (Radi Allahu Anhu) disliked to
abandon from company of Hazrat Abdur Rahman Chowravi (Radi Allahu Anhu). After
few days, absence arose on his mind. So, he couldn’t do any work. After operation,
this absence took nine months to be well. He showed his disciples the spot of
absence and said, “This is my murshid given symbol” Hazrat Syed Ahmad Shah
Sirikoti (Radi Allahu Anhu) became a great saint by worshipping Allah and many
other works. So Hazrat Abdur Rahman Chowravi (Radi allahu anhu) gave khilafat
to his dearest murid Hazrat Syed Ahmad Shah Sirikoti (Radi Allahu Anhu)
The incident of Bashkhali and establish of
Jameya madrsah: There was a famous Aleem-e Din who was lived at Bashkhali
in Chittagong district, he realize the establishing of sunniyat at Bashkhali,
there is need for Huzur kibla Hazrat Ahmad Shah Sirikoti (Radi allahu anhu). So
he invited Huzur kibla at Bashkhali. The ceremony was started. He recited
Innallaha wa malaiktahu yu salluna alan nabiyyi ya ayyuhallazina amanu sallau
alaihi wa sallimu taslima. But no person send Darood sarif to Prophet
sallallahu alaihi wa sallam. He become angry and he also upset. He realized
that the people of Bashkhali were rounded by Batil sects. So, there was very,
necessary to establish a sunni madrasah. Next morning, he called all of his
discples and ordered them to search a place where situated a mosque and pond
and that place was situated neither town nor in village. So, everyone started
to search such a place. Many people proposed many lands. At last, Alhaj Nur
Muhammad Al-quaderi (Rahmatullahi Alaihi) came with Huzur kibla in a place
where now Jamia Madarasah is situated. No sooner had Huzur kibla seen the place
then he smiled. He said that the smell of knowledge went out from that place.
He also said that I must make there a Madrasah. Nur Muhammad Al-Quaderi
(Rahmatullahi alaihi) arranged iron to build up Jamia Ahmadia Sunnia Alia
Madrasah. From this Madrasah students are taking essential steps for saving
sunniyat.
Holy Departure: Qutubul Awliya, Baniye
jamia, Hazrat Syed Ahmad Shah Sirikoti (Radi Allahu Ta’la Anhu) passed away
from this mortal earth on the 11th Jilqad (Thursday) in Hijri 1380
(1961) at the age of 109. Sher-e Bangla Allama Azizul Haque said that the
departure of Hazrat Syed Ahmad Shah Sirikoti (Radiyallahu Tayala Anhu) like the
death of the earth.
After all we can
tell that Hazrat Syed Ahmad Shah Sirikoti (Radiyallahu Ta’la Anhu) was a great
saint and famous pious. If we maintain the orders and forbid of Sirikoti Hujur
(Radiyallahu Ta’la Anhu) we can become a right person of sunniyat and will able
to wave the flag of sunniyat.
Reference:
1.
Baag-e Sirikoti
2.
Sunniyater poncho rotno
3.
Rahmatullil Alamin (2013)
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)